নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতি সাহস যোগাচ্ছে বিএনপির
প্রতিষ্ঠার পর গত এক যুগের বেশি সময় ধরে কঠিন পরীক্ষার মুখে থাকা বিএনপি চলমান সংকট উত্তরণে লক্ষ্য অর্জনে চূড়ান্ত কৌশল গ্রহণ করতে পারছে না। তবে দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকা মহানগরীর সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে উজ্জীবিত দলটির নেতারা। গত কয়েক বছর ধরে বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়া দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। যার ফলে এই মুহূর্তে দলটি ধীরে ধীরে অনেকটাই সাংগঠনিক শক্তিতে সুসংগঠিত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ঘোষিত কর্মসূচিতে সেই প্রতিফলন দেখা দিচ্ছে। নেতা-কর্মীদের এই সরব উপস্থিতির প্রবল আগ্রহ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ব্যাকুলতা হাইকমান্ডকেও সাহস জোগাচ্ছে। তাই সরকারবিরোধী আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার ১ সেপ্টেম্বর দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালীতে রাজপথে শো-ডাউন করে নিজেদের সক্ষমতা জানান দিয়েছে দলটির নেতা-কর্মীরা। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই উঠে এসেছে।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়েরর একাধিক নেতা বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক মাস এভাবেই মাঠ গরম রাখবে দলটি। এরপর এক দফা নিয়ে রাজপথ দখলের চিন্তাভাবনা রয়েছে। তৃণমূল থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন ধীরে ধীরে বেগবান করা হবে। হামলা-মামলা কিংবা গ্রেফতার কোনো কিছুতেই রাজপথ না ছাড়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কখন প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে তা সময়মতো হাইকমান্ড থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালীর শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজ আমরা দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের মানুষ ও এই সরকারকে জানান দিতে চাই এই মুহূর্তে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সবচেয়ে বড় দল। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই এই বিএনপির জন্ম।’
নানা আলোচনা-সমালোচনার মোক্ষম জবাব দিতে পেরেছি দাবি করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকাপ্রকাশ কে বলেন, ‘জামায়াত ছাড়া বড় শোডাউন দেখানোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা দেখিয়েছি কর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে, আগামীতে জামায়াত ছাড়াও যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করাও সম্ভব হবে।
এদিকে জনসমাগম বাড়লেও আগামী দিনের কর্মসূচি ও তার ধরন নিয়ে সতর্ক বিএনপি। সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার থাকলেও এখনই বড় কর্মসূচিতে যেতে বিএনপি কেন রাজি নয়, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন দলটির নেতারা। তারা বলছে, এখনই বড় কর্মসূচি দিয়ে তারা সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চান না। বড় কর্মসূচি দিলে সংঘাত হবে এবং সরকার মামলা-হামলা আরও বাড়াবে। তার চেয়ে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত রেখেই বড় আন্দোলন গড়তে চাইছে দলটি। তাই আপাতত জনবান্ধব সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, লিফলেট বিলি এই ধরনের কর্মসূচি দিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। সেজন্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়েই কার্যকর কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজপথে ফিরেছে বিএনপি। এতে দলের নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা, উজ্জীবিত। এটিকে আগামীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের রসদ মনে করছে দলের হাইকমান্ড। তারা এখন নেতা-কর্মীদের এই উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে ধারাবাহিক সভা-সমাবেশ কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করছে। কারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করেছে। লাগাতার কর্মসূচিতে হাজার হাজার লোকসমাগম হওয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ফুরফুরে ভাব দেখা যাচ্ছে। এবার চলমান আন্দোলনের সফলতা আসবে। এ বিষয়ে নেতা-কর্মীরা আত্মপ্রত্যয়ী। আন্দোলন-সংগ্রাম সঠিক পথেই আছে। জনগণ এখন বিএনপির ডাকে স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকাপ্রকাশ কে বলেন, ‘আজ দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে জনতার ঢল নেমেছে। নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণই প্রমাণ করে অবৈধ সরকারের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। চারদিকে তাদের পতনের আওয়াজ উঠেছে। সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি, ভোট ডাকাতি, গণতন্ত্র হরণ ছাড়াও এখন জ্বালানি তেল, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। এ অবস্থার পরিবর্তন চান বলে তারাও মাঠে নেমেছেন। এ জন্য বিএনপির কর্মসূচিতে নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মামলা-হামলায় জর্জরিত। পুলিশের গুলি প্রাণ দিচ্ছে, এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘নেতা-কর্মীরা জেগে উঠেছে। সাংগঠনিকভাবে শক্তি সবার বেড়েছে। রাজনীতিতে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। দল এবং কর্মীদের জন্য এটা ইতিবাচক দিক। আর এটাকেই ধরে রেখেই আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে হবে।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) আব্দুস সালাম আজাদ ঢাকাপ্রকাশ কে বলেন, ‘কর্মসূচিতে তৃণমূলে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ঘোষিত কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নিচ্ছেন। হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার-গুলি করে এবার নেতা-কর্মীদের দমাতে পারবে না। আমরা রাজপথে থাকব।’
এসএন