কত কথা বলতে দিলে বিএনপির মনে হবে গণতন্ত্র আছে: হানিফ
'দেশে গণতন্ত্র নেই বলে কথা বলার অধিকার নেই'- এমন বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি নেতারা ডাহা মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। তাদের দলের নেতারা প্রতিদিন টেলিভিশনে টক শোতে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। তারপরও তাদের শান্তি হচ্ছে না। কথায় কথায় বলে আমরা তাদের কথা বলার সুযোগ দিচ্ছি না, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। আর কোন গণতন্ত্র চায় তারা? আর কত কথা বলতে দিলে তাদের মনে হবে যে গণতন্ত্র রয়েছে। বিএনপি যদি মনে করে রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাংচুর ও পেট্রল-বোমা মারার সুযোগ দিলেই গণতন্ত্র আছে তাহলে সেটি বিএনপি আর দেখবে না। এমন গণতন্ত্র তাদের আর দেওয়া হবে না।
বুধবার (২ মার্চ) ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে এসব কথা বলেন তিনি।
হানিফ বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। আমরা এখন আলোর পথে এগিয়ে যাচ্ছি। মাত্র ছয় শ ডলার ছিল আমাদের মাথাপিছু আয়। এখন আমাদের ২৫ শ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এদেশ এক সময় ছিল চরম দরিদ্রের দেশ। বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত ছিল, ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত ছিল। সেই বাংলাদেশ আজকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন আজকে দৃশ্যমান। কর্ণফুলী টানেল হচ্ছে, মাতারবাড়ী-পায়রা দুটি সমুদ্র বন্দর হয়েছে। মেট্রোরেল হচ্ছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। এত উন্নয়ন দেশের মানুষের ভালো লাগলেও বিএনপির ভালো লাগে না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালে জিয়া ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য বানিয়েছিল। সে সময় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান 'জয় বাংলা' নিষিদ্ধ ছিল। শুধু জয় বাংলা নয়, সে সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণও নিষিদ্ধ করা হয়। যে ভাষণের জন্য লাখ লাখ মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জিয়া ক্ষমতা দখলের পর সে ভাষণও নিষিদ্ধ হয়। মুক্তিযুদ্ধের কথা তখন কেউ মুখে আনতে পারত না। পাকিস্তানিরা পরাজিত হয়ে যে জায়গায় ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেছিল জিয়া সেখানের স্তম্ভ ভেঙে শিশু পার্ক নির্মাণ করেছে। কারণ সে চায়নি পাকিস্তানের কোনো লজ্জাজনক স্মৃতি এ দেশে রাখতে।
হানিফ বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি দেশকে পুনর্গঠন করেছেন। সেই সময় দেশের সমস্ত রাস্তাঘাট নষ্ট ছিল। তিনি সবকিছু ঠিক করে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করেছিলেন। তিনি নতুন প্রশাসন তৈরি করে প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। দেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীকে তিনি নতুন করে দাঁড় করিয়েছেন এবং একটি আদর্শ রাষ্ট্রের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই জাতির পিতা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট এগিয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। ক্ষমতা দখলের পর তারা শুধু স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধ্বংস করেনি। তারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছিল সেটাকেও ধ্বংস করেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জিডিপি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭। তারা সেটাকে নামিয়ে ২ দশমিক ৪ এ নিয়ে এসেছিল।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, যেকোনো বিষয়ে বিএনপি অপরাজনীতির ইস্যু খোঁজে। এজন্য আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মীদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপির অপরাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিএনপি যদি দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কোনো অপকর্ম করার চেষ্টা করে তাহলে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিএনপির মিথ্যাচার, অপপ্রচার, কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে তাদের অপরাজনীতি নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দীন আহম্মদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম পাটোয়ারী দুলাল, চাঁদপুর ৪ আসনের এমপি শফিকুর রহমান, চাঁদপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল আমিন রুহুল প্রমুখ।
এসএম/টিটি