২০২৪ এর ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। এরপর থেকে একটি বৈষম্যহীন নতুন রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করে বাংলাদেশের মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় নানা সেক্টরে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তবে এখনো দেশের কিছু জায়গায় বৈষম্য বিদ্যমান। এই বৈষম্য আরও একবার দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অফিস আদেশের মাধ্যমে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব স্বার্থের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সর্বশেষ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি অফিস আদেশ জারি করে; যার মাধ্যমে গভর্নিং বডির সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো- জেলা প্রশাসক বা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ব্যতীত, সভাপতি মনোনয়নযোগ্য ব্যক্তির বয়স ন্যূনতম ৪০ বছর হতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই শর্ত নিয়ে বিভিন্ন মহলে এরই মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, শিক্ষকদের মধ্যে এটি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তাদের দাবি, অনূর্ধ্ব চল্লিশ বছর বয়সের অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি বর্তমানে সমাজে বিদ্যমান আছেন, যারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশে একজন সংসদ সদস্য হতে গেলে ২৫ বছর বয়স লাগে। এমনকি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনজন উপদেষ্টা, যাদের বয়স ৩০ বছরের নিচে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, যখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে তরুণরা দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম, তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন বয়সের সীমা বেঁধে বৈষম্য সৃষ্টি করছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র তাহমিদ বলেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ছাত্রদের ধারণ করে না। নতুন বাংলাদেশে কোনো প্রকার বৈষম্য মানা হবে না। আমরা এই বৈষম্যের অবসান চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডগুলোতে কোনো বয়সসীমার বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোনো বয়সের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি সভাপতি বা বিদ্যোৎসাহী প্রতিনিধি হতে পারেন। সেক্ষেত্রে, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া ৪০ বছরের বয়সসীমা কার্যকর না হওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমাজ মনে করছেন, বয়সসীমার এই শর্তটি অবিলম্বে বাতিল করা উচিত এবং কোনো ধরনের বৈষম্য ছাড়াই যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়া উচিত। তারা মনে করেন, এটি শিক্ষার ক্ষেত্রে সঠিক এবং সমতাভিত্তিক একটি পদক্ষেপ হবে, যা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে সমাজের সচেতন অংশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে বলেও মনে করছেন সচেতন মহলের অনেকেই।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা)-এর বিশেষ একান্ত সচিব মো. সাজেদুল ইসলাম শাহীনের অফিশিয়াল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় কোনো বক্তব্য নেওয়া যায়নি।