ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অমানবিক: রিজভী
ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। অবিলম্বে এ ধরনের অমানবিক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
রিজভী বলেন, গত সোমবার ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে ফেলেছে। ২০২০ সালের এপ্রিলেও পানির দাম বৃদ্ধি করেছিল ওয়াসা। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, ২০১৮ সালের জুলাইতে, ২০১৭ সালের আগস্টেও পানির দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল। পানি হচ্ছে জীবনের অপর নাম। অবৈধ সরকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ হরিলুট করার পর এখন মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় যে পানি সেটির দাম বৃদ্ধি করছে। দেশকে দরিদ্র, দুর্নীতিগ্রস্ত ও তীব্র অসাম্যের মধ্যে নিক্ষেপ করে এরা জনগণকে ভাতে ও পানিতে মারার সকল বন্দোবস্ত সম্পন্ন করছে।'
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
'মানুষ গুম দুনিয়ার সবচেয়ে নির্মম, নিষ্ঠুর, অমানবিক, পাশবিক ও চরম মানবতাবিরোধী অপরাধ। কারণ গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজন ও পরিবারের সদসদের আমৃত্যু অসহনীয় মর্মন্তুদ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হয়। তারা জানে না, তাদের গুম হওয়া স্বজন বেঁচে আছে নাকি নেই।'
রিজভী বলেন, দেশে বিদেশের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর হিসাব মতে, ক্ষমতাসীন সরকার বিনাভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে গুম করেছে। অসংখ্য মানুষকে খুন, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'দেশে গুম অপহরণ বন্ধে বিএনপি বারবার সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে আসছিল। কিন্তু ক্ষমতার লোভে নিশিরাতের সরকার গুম, খুন, অপহরণ বন্ধে দেশের কিংবা বিদেশের কারও কোনো কথায় গুরুত্ব না দিয়ে শুধু একজন ব্যক্তির ক্ষমতা লিপ্সায় র্যাব-পুলিশকে গুম-খুনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে ফেলেছে।'
৫ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এক অনুষ্ঠানে বলেন, জাতিসংঘ নয়, জাতিসংঘের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের একটি তালিকা দিয়েছিল। পরে দেখা গেল, ভূমধ্যসাগরে অনেক লোকের সলিল সমাধি হয়েছে। একই দিনে অবৈধ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা সব সময় বলি, আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। যেখানেই গুম হচ্ছে, সেখানেই আমরা কিছুদিন পরেই তাকে পাচ্ছি। নানা কারণে আত্মগোপন করে থাকে, সেগুলোকে গুম বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে কেউ গুম হয় না।
রিজভী বলেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো যে গুমের সঙ্গে জড়িত, সেই সব ঘটনার অনেক প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন। ভিডিও ফুটেজ আছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন থেকেও গুমের ঘটনার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা তদন্ত করে জাতিসংঘে গুমের প্রমাণ উপস্থাপন করেছে।
'জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপেয়ারেন্সেস কর্তৃক বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা হয় এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ সদস্যরা সরকারের নির্দেশে দফায় দফায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার নামে হয়রানি করে এবং পুলিশ সদস্যরা গুমের শিকার ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন এবং পরিবার তথ্য গোপন করেছে এই মর্মে কাগজে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।'
'গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে দুই মন্ত্রীর এই ধরনের উপহাস খুবই নিষ্ঠুর, অশালীন ও বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।'
তিনি বলেন, বিরোধী শক্তিকে দমন করতে অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকারের গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, নিপীড়ণের কথা আজকে বিশ্ব দরবারে প্রমাণিত। তাই ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকারের মন্ত্রীরা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে এসব অবিবেচনা প্রসূত, ঘৃণ্য বক্তব্য দিচ্ছে। নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মন্ত্রীদের মতো গুম-খুন নিয়ে অবাস্তব, আজগুবি ও নিষ্ঠুর পরিহাসমূলক মন্তব্য করে আসছেন।'
বিএনপির এই নেতা বলেন, "প্রশ্ন হলো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি মনে করেন, 'গুমের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী জড়িত নয়' তাহলে তাকেই জবাব দিতে হবে গুমের সঙ্গে কারা জড়িত? কে বা কারা একের পর এক মানুষ গুম খুন করছে?"
গুমের তালিকায় থাকা কোনো কোনো ব্যক্তির ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হয়েছে ? আমাদের দলের নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ শত মানুষকে ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার গুম করেছে। তাদের কার কার ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হয়েছে এর জবাব পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিতে হবে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট যে, গুম হওয়া বা তার ভাষায় ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা তার কাছে আছে। অবিলম্বে সেই তালিকা প্রকাশ করা হোক।'
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম।
টিটি/