বিএনপির জোট সন্ধান, ২০ দলে উদ্বেগ
সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০ দলীয় জোট বিএনপির কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন জোটভুক্ত নেতারা। জোট গুরুত্বহীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জোটভুক্ত নেতাও গুরুত্বহীন হয়ে পড়বেন বলে জোটভুক্ত নেতাদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
২০ দলীয় জোটের নেতারা শঙ্কামুক্ত হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। জোট নেতাদের অভিযোগ- রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোটের প্রধান দল বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি। এ নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে রয়েছেন জোটভুক্ত নেতারা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে বিএনপি ২০ দলীয় জোটের বাইরে গিয়ে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করেছিল। তখনও ২০ দলীয় জোটকে বিষয়টি শুরু থেকে জানাননি বিএনপি নেতারা। এ নিয়ে ২০ দলভুক্ত নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি ছিল। এবারও সে রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কী না, হলে নিজেদের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে ভাবছেন ২০ দলীয় জোটভুক্ত নেতারা।
উদ্বেগ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ২৯ জানুয়ারি সাক্ষাৎ করেছেন ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। ৩০ জানুয়ারি দুপুরে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। আরও দেখা করেছেন সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যাপারেই কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন।
নতুন জোটের সন্ধানে বিএনপির ছুটে চলার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ লেবার পার্টির (ইরান) চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘একাদশ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হয়েছে। সেখান থেকে তাদের অনেক অভিজ্ঞতা, তিক্ততা নিশ্চয়ই অর্জন হয়েছে। তবে এবার দলটি মূলত সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা নাকি আন্দোলন কেন্দ্রিক জোটবদ্ধ পথে হাঁটছে সে বিষয়ে এখনো আমাদের সঙ্গে কোনো ধরণের যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছি।’
জোটভুক্ত ডেমোক্রেটিক লীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন মনি ঢাকপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল, তবে পরিপক্বতার অভাব রয়েছে। একাদশ নির্বাচনের পূর্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের খপ্পরে পড়েছিল, দেখি এবার কার খপ্পরে পড়ে। বিএনপি কাউকে মূল্যায়ন করে না। যখন যাকে ভালো লাগে কিছুদিন তার খপ্পরে পরে… তেমনিভাবে এক সময় জামায়াতের খপ্পরে পড়েছিল। তিনি বলেন, ‘২০ দলে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল রয়েছে যেগুলো দল নয় বরং ব্যক্তি কেন্দ্রিক। অর্থাৎ ‘ওয়ান-ম্যান পার্টি’। আবার এমন দলও জোটভুক্ত রয়েছে যার শীর্ষ নেতৃত্বকে কেউ চিনে না। কাজেই বিএনপি কি করবে সেটা বিএনপির ব্যাপার।’
২০ দলীয় জোটের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, জোট নেত্রী খালেদা জিয়া মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে অনেকটাই উপেক্ষিত তারা। বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা নেই, তাদের কাছে জোটভুক্ত নেতাদের কোনো গুরুত্বও নেই। জোট নিয়ে অনেকটাই দায়সারা ভাব বিএনপির বর্তমান হাইকমান্ডের। জোট শরিক কোনো দল সভা-সেমিনার করার উদ্যোগ নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির নেতাদের অতিথি করার জন্য যোগাযোগ করলে তারা কোনো গুরুত্ব দেন না। ব্যস্ত কিংবা অসুস্থতার অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে যান। অথচ জোটে নেই, ভোটেও নেই, এমন অনেক সংগঠনের ব্যানারে তাদের উপস্থিত হতে দেখা যায়। ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন না। জোট থেকে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত পাঁচটি দল বেরিয়ে যাওয়ার পেছনে এ সব কারণ রয়েছে বলে নেতারা জানান।
এপি/এএস