বাবার হত্যাকারী কারা, জানালেন রেজা কিবরিয়া
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া (শাহ আবু মোহাম্মদ শামসুল হক কিবরিয়া)। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। বাবার হত্যাকাণ্ডের পেছনে আওয়ামী লীগকেই দায়ী করলেন তার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, বাবার মৃত্যুর পর রাজনীতির উচ্চ মহল থেকে তদন্ত প্রভাবিত করা হয়েছিল। বাবা হত্যার বিচার চান কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে কিছু না। আওয়ামী লীগ, এই দলটা দেশের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, আমার বাবার আত্মার সঙ্গে প্রতারণা করা তাদের জন্য ব্যাপার না। বিশেষ করে এই প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে খুব ভালো করে জানি। ওনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ওপরে কোনো ভরসা নাই, তার সরকারের উপরেও কোনো ভরসা নাই। তবে হ্যাঁ বাংলার মাটিতে বিচার হবে। নতুন একটা সরকার যখন বাংলাদেশে আসবে, এই সরকার যখন ক্ষমতাচ্যুত হবে তখন বিচার হবে।
সদ্য শেষ হওয়া সংসদ অধিবেশনে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীর দিন (২৭ জানুয়ারি) বিষয়টি আলোচনা করে সামনে নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এমএস কিবরিয়া সাহেবকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করেছিল। সেটার সঙ্গেও বিএনপি জড়িত। সেটাও বেরিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এই বিচার কাজটায় বার বার বাধা দিচ্ছে তার পরিবার থেকে। যখনই বিচার কাজ শুরু হয় ওমনি তার পরিবার একটা বাধা দিয়ে রাখে।’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. রেজা কিবরিয়া ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, একটা অসমাপ্ত তদন্ত এবং সীমিত তদন্ত। যার ভিত্তিতে আসল খুনিদের, আসল মদদ দাতাদের রক্ষা করা হচ্ছে। ওই তদন্ত আমি মানি না। সেই তদন্তের ভিত্তিতে সুষ্ঠ বিচার হতে পারে না।
তিনি বলেন, ওনার (প্রধানমন্ত্রী) এই কথাটা বুঝতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। সেদিন ওনার দলের লোকের কি ভূমিকা ছিল সেই হত্যাকাণ্ডে। সেটা নিয়ে আর একটু তদন্ত যদি করেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বুঝতে পারবেন। তিনি খুব ভালো করে জানেন তিনি যে কথাগুলা সংসদে বলেছেন সেই কথাগুলো সত্য না।
প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন এই হত্যাকাণ্ডে বিএনপি জড়তি আপনিও তাই মনে করেন কি-না? ড. রেজা বলেন, এখানে অনেকেই জড়িত। কিছু লোক টাকার বিনিময়ে কাজ করেছে, কিছু লোক রাজনৈতিক কারণে কাজ করেছে। এক দলে যে এটা হয়েছে তা আমি মনে করি না। ওনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দলের ভেতরে যদি ভালো করে তাকান তিনি হয়তো বুঝতে পারবেন ঘটনাটি কি ঘটেছে বা তিনি উপলবদ্ধি করতে পারবেন ঘটনাটি আসলে কি ঘটেছিল। আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে তিনি এটা খুব ভালো করে জানেন। তিনি যে কথা বলছেন বিএনপির বিরুদ্ধে একটা পলিটিক্যাল স্কোর করার জন্য।
রেজা কিবরিয়া বলেন, কোনো দল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, এতে আমি ইনটারেস্টেড না। আমি সত্যটা জানতে চাই। কারা এই হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা ছিল? ঢাকায় বসে কারা জড়িত ছিল এবং এলাকায় যারা জড়িত ছিল এবং গ্রেনেডর উৎস কি-এই প্রশ্নগুলো অনেক আগে তুলেছি। এই দুই প্রশ্নের উত্তর কোনো দিনও পাইনি। সেদিন তদন্তকারীদের রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করেছে; এটাও সবাই জানে। কারা প্রভাবিত করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, যারা ক্ষমতায় ছিল। আওয়ামী লীগ এটা করেছে। বিএনপি ঠিক মতো কাজ করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুটি ইউজলেস লোক ছিল। ফখরুদ্দীন আহমেদ বলে একটা দুষ্ট লোক ছিল যে দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। সে ছিল জেনারেল মঈন। তারা এই হত্যাকাণ্ডের বাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি ইচ্ছাকৃত ভাবে।
আপনি কি কাউকে সন্দেহ করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, দুজনের নাম বললাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। আমাদের সরকারের অনেক উপর দিক থেকে বাধা দেওয়া হয়েছে। এটা পুলিশের বিভিন্ন সোর্স বিশেষ করে পুলিশের নিচের দিক থেকে আমরা এটা জানতে পেরেছি। তাদের কথা-বার্তায় জানতে পেরেছি তাদের উপর অনেক উপরের রাজনৈতিক চাপ আছে, যেন তদন্তটি ঠিকমতো না হয়। রায় প্রভাবিত করে বিএনপির কয়েকজন নিচের স্তরের কর্মীদের উপরে দোষটা দেওয়া হয়, এই চাপটা আছে আমি জানতে পেরেছি।
তাহলে বিএনপিকে যে দায়ী করা হচ্ছে এটা আপনি বিশ্বাস করেন না? জবাবে তিনি বলেন, কয়েকজন জড়িত ছিল। টাকার বিনিময়ে তারা জড়িত। রাজনৈতিক কারণে হত্যা হয়েছে আমার কাছে তা মনে হয় না। কয়েকজন টাকা খেয়ে করেছে। কয়েকজন খুনিদের সঙ্গে ব্যবসা করে করেছে বিএনপির লোক। হত্যাকাণ্ডের পেছনে যাদের উপর নজর যাতে না আসে সেই কারণে প্রভাবিত তদন্ত রিপোর্ট করতে দেওয়া হয়েছে।
এসএম/এসআইএইচ