আমি নিশ্চিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরও আসছে: রেজা কিবরিয়া
শুধু র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার উপরই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নয়, আরও নিষেধাজ্ঞা আসার বিষয়ে তিনি নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞাই শেষ না। সামনে আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত জানি। এতে শুধু সরকার নয়, দেশও বিপদে পড়ছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সব বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।’
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে বিজয়নগর গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশন আইন ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় পাশে ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে? তাহলে কি আপনার সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র আছে- ঢাকাপ্রকাশের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গার খুব রিলায়অ্যাবল (বিশ্বাসযোগ্য) সোর্স থেকে আমি জানতে পেরেছি। আমি আমেরকিায় কয়েকদিন ছিলাম। আমেরিকার ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের অনেক কর্মচারী আইএমএফ এ কাজ করতেন। নামগুলো জানি না।’
তিনি বলেন, ‘অপরাধীরা জানে তারা যেটা করেছে তাতে তারা এখন চিন্তিত, কার উপর কখন আসছে। তবে আমি নিশ্চিত এসব ফাইল আসছে। আমি নিশ্চিত যে এটা আসবে। এগুলোর ডসিয়ারগুলি তৈরি হচ্ছে। আপনারা বড় বড় ফাইল পাবেন। এটা থেকে কেউ রেহাই পাবে না।’
ড. কিবরিয়া বলেন, ‘একটা বিষয় মনে রাখবেন আমেরিকা খুব কার্যকরী ডকুমেন্ট ছাড়া এ ধরনের পদক্ষেপ নেয় না। তারা নিশ্চিত হয়েই এগুলো করে। তারা জানে এগুলো নিয়ে চ্যালেঞ্জ আসতে পারে সেটা ভেবেচিন্তেই করে। বরং খুনিরা- যারা মানুষ গুম করেছে তারা জানে চ্যালেঞ্জ করতে গেলে এমন জিনিস বের হবে তাতে তারা আর মুখ দেখাতে পারবে না।’
এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, পুরো দেশ বিপদে পড়বে উল্লেখ করে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, এটা একটা জাতীয় সমস্যা, শুধু আওয়ামী লীগের সমস্যা নয়। আওয়ামী লীগের শাসনের অবসান ঘটবে এটাও সরকার ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝেছে এবং এ সরকারের জন্য এতদিন যারা কাজ করেছে, মানুষকে গুম-খুন করেছে তারা এখন দুশ্চিন্তায় আছে।
তিনি বলেন, সরকার দেশের মানুষকে বুঝতে দিতে চায় না নিজের দোষে-অন্যায়ে তারা কত বড় বিপদে পড়েছে। কত বড় দুশ্চিন্তায় আছে। দেশকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। আমাদের সামরিক বাহিনীকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে বিপদে ফেলেছে। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এটা তারা এখন বুঝতে পারছে। শুধু নিজেরা ডুববে না, দেশকে ডুবিয়ে এ স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হবে। এ জিনিসটা সাধারণ মানুষ বুঝে গেছে, ব্যবসায়ীরাও বুঝে গেছে।
নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় সরকারের প্রতি কোনো পরামর্শ আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, আমার মনে হয় ফ্রি পরামর্শ কেউ পছন্দ করেন না। তারপরও আমরা ও বিরোধী দলের সবাই পরামর্শ দিতে রাজি আছি কারণ এটা শুধু সরকার নয় দেশের বিপদ। আওয়ামী লীগের বিপদে আই এম নট বদার কিন্তু দেশের বিপদে আমার একটা ইন্টারেস্ট আছে। আমাদের সামরিক বাহিনীর উপরে কোনো একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক আমরা এটা চাই না। এটা দেশের জন্য ক্ষতিকর, আমাদের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তারা মোটামুটি ভালো টাকা ইনকাম করে বিদেশে খুব ভালো সুনাম অর্জন করেছে। আমরা সব সময় প্রস্তুত তারা (সরকার) ডাকুক একটা মিটিং। কিন্তু আমি নিজে গিয়ে তাদের উপদেশ দেওয়ার পক্ষে না। কারণ তারা এটা ভালোভাবে নেবে না। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে এটা থেকে উত্তরণ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
তিনি বলেন, যাদের নামে এ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যাদের নামে জারি হবে তাদের খুবই ভারি ভারি ডসিয়ার তৈরি হয়েছে। দুর্নীতি, শারীরিক নির্যাতন ও মানসিক নির্যাতনের বড় বড় ডসিয়ার আছে সবার উপরে। ডসিয়ারগুলি আরো কয়েক দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। তারা ডসিয়ার সম্পন্ন করে কাজটা করে এ কারণে যে, যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাদের বিরুদ্ধেও যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নিয়েই করে। কারো কথা শুনে কিংবা কোনো বিরোধী দলের কথা শুনে কারো নামে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিল এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। খুব হেভি ডকুমেন্টেশন নিয়ে এ কাজগুলো করা হয়। যদি এ নিষেধাজ্ঞা কেউ চ্যালেঞ্জ করতে চায় তাহলে এমন কিছু বেরিয়ে আসবে যেটার কারণে তাকে বা তাদের বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। এটা চ্যালেঞ্জ করার মতো তাদের মানসিকতা নেই, তারা শুধু বলতে পারে এগুলো মিথ্যা। কিন্তু কোর্টে এগুলো চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো অবস্থান তাদের নেই, নৈতিক কোনো শক্তি নেই।
এসময় নুরুলহক নুর বলেন, সরকারের উচিত ছিল যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদেরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া। কিন্ত সরকার আমেরিকার মতো রাষ্ট্র তাদের সাথে মশকরা করছে। আমেরিকা যাদের নিষেজ্ঞা দিলো সরকার তাদের প্রমশন দিয়েছে। কিছুদিন আগে বিপিএম পিপিএম যে পদক দেওয়া হয়েছে সেখানে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা একজন ব্যক্তিকে কিন্তু পুরস্কৃতি করেছে। তার মানে সরকার এটা উত্তরণের জন্য যেটা সেটা না করে উল্টো তাদের চ্যালেঞ্জ করেছে। তারা (আমেরিকা) কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দায়িত্ব থেকে সরাদে হবে, তদন্ত করতে হবে। আমেরিকাসহ আরও যে ১২টি সংগঠন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাবকে না নিতে চিঠি লিখেছে সরকারের উচিত তাদের কাছে তথ্য প্রমাণগুলো উপস্থাপন করা।
এসএম/এসএন