এই সরকার অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন কবরস্থ করেছে: রিজভী
ছবি: সংগৃহীত
‘দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মীরা সবাই আজ আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন। এই সরকার অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন কবরস্থ করেছে, মাটিচাপা দিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন এরা বিশ্বাস করে না। এরা (আওয়ামী লীগ) অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনকে তামাশা মনে করে। এদের অধীনে কখনো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।’
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের গণতন্ত্রকামী দেশগুলো বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। আর এই সরকারের পদত্যাগ ছাড়া বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কেবলমাত্র একজন নিরপেক্ষ- যিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন, তার অধীনেই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তাদের মন্ত্রী-নেতাকর্মীরা এত কথা বলেন, কিন্তু অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললে তারা এত বিচলিত হন কেন? তারা অস্থির হয়ে যান, এক ভীতির মধ্যে পড়েন। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের পরিণতি কী হয় এই ভয় থেকেই তারা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চান না। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী ব্যবহার করে, প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের শক্তিকে ব্যবহার করছে তা প্রতিদিন সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ এখন পরাধীন। আমরা এখন একক উপনিবেশ শাসনের অধীনে রয়েছি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার অন্য কোনো শক্তির প্রতিনিধি হিসেবে এ দেশে কাজ করছে। যেসব দেশ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না সেসব দেশ। কয়েকটি দেশ রয়েছে তারা বাংলাদেশের কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি আবহমানকাল থেকে যা চলমান- সেটার তারা ধার ধরে না।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘এখানে একটা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চলছে। সেটা বজায় রাখতে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে হবে। আর সেই রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করেছে শেখ হাসিনার মাধ্যমে। সেজন্য তিনি কাউকে তোয়াক্কা করছেন না। বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকলো আর না থাকলো, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না।’
তিনি বলেন, ‘যারা এদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তারা এদেশের জনগণের ভালোমন্দ বিচার করে না। এটা করে না বলেই বাংলাদেশের মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। কিন্তু অনেক দেশ বাংলাদেশের জনগণের ভালোমন্দ এবং গণতন্ত্র চায়। গতকাল অস্ট্রেলিয়া থেকে বলা হয়েছে বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে জন্যে তাদের দেশ আপসহীন।’
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেন বাংলাদেশের উন্নয়ন করেছেন। কিসের উন্নয়ন করেছেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বৃদ্ধি করেছেন, যাতে বিরোধীদল দমন করা যায়। কোথাও কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির চিন্তা করলেই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যাবে- এমন পরিস্থিতি দেশে বিরাজ করছে দেশে।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার দেশের সব জনগণকে পশুর ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছে। গোটা দেশকে পশুর খোঁয়াড়ে পরিণত করতে চাচ্ছে। এই অন্যায় অবিচার জুলুম আর কতদিন চলবে। আমাদের সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরা এই জুলুম অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন তা নয়, গণমাধ্যমকর্মীরা এবং নানান পেশার মানুষ সরকারের এই জুলুম অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করতে হলে গণতন্ত্রের আন্দোলন আরও বেগবান করতে হবে।’
এসময় গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও মামলার বিবরণ তুলে ধরেন রিজভী। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ২৫৫ জনের অধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এ সময় মোট সাতটি মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির ৮৭০ নেতাকর্মীকে। একই সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩৫ জন এবং মারা গেছেন একজন।