প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই নির্বাচনের রেজাল্ট আনতে হবে: ওবায়দুল কাদের
ছবি: সংগৃহীত
'আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমরাও করব, শরিকদেরও করতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই নির্বাচনের রেজাল্ট আনতে হবে।'
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দেশ, জাতির নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বিএনপি-জামায়াত উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতি করে। বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি মানেই যানবাহনে আগুন, সহিংসতা, চোরাগোপ্তা হামলা। গতকালও (সোমবার) বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, সহিংসতা করে সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করা যাবে না। তারা যদি মনে করে, সহিংসতা করবে আর সরকার বসে থাকবে তা হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্বাচনের বিপক্ষে যে কোনো বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাই।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার জন্য ইতোমধ্যে অনেকে বলেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন বিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান করছে এবং নির্বাচন পর্যন্ত তারা থাকবে। ভারত, জাপান, ফিলিস্তিন, ওআইসি, আরব লীগ পর্যবেক্ষক পাঠাবে। পর্যবেক্ষক আরও আছে সেটা শিগগিরই জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ইসি বলেছে সেনাবাহিনী কতদিন থাকবে। আমরা সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার বিপক্ষে। বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচনে তাদের কি ভূমিকা তা লিপিবদ্ধ আছে। তাদের টাস্কফোর্স হিসেবে নির্বাচন কমিশন যখন যেখানে প্রয়োজন দায়িত্ব প্রদানের অনুরোধ করবে। এ বিষয়ে আমরা আর বলতে চাই না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে আছে, তাদের বলা হয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। বলপূর্বক বা ফ্রি স্টাইলের কোনো নির্বাচনের ভূমিকা কেও নেবে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতামূলক যাকে বলে, সেটা গণতন্ত্রেরই বিষয়। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা করতে পারবে। সে সুযোগ তাদের দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের শরিকদের কারো কোনো আপত্তি থাকতে পারে কিন্তু আমি পরিষ্কার বলে দিয়েছি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকবে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইলেকশনে বিনা প্রতিযোগিতায় কেউ নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী যেই হোক তার সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আজও জাতীয় পার্টি নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের আলোচনা অব্যাহত আছে।
জাতীয় পার্টিকে কোন আসন ছেড়ে দেওয়া হবে কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাদের করতেই হবে। অপ্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে সিট ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই তাদের আসতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হবে? প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমরাও করব, শরিকদেরও করতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই নির্বাচনের রেজাল্ট আনতে হবে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা তো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কথা বলছে– এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে স্বস্তি-অস্বস্তির কোনো কিছু নেই। আমাদের সংসদীয় দলের প্রধান ও জোটের প্রধান যেটা বলেছেন, সেটার ব্যাপারে কারো কোনো অস্বস্তি থাকলে বিচার-বিবেচনা করার সুযোগ নেই। এটা অলরেডি সেটেল হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, কাউকে সহিংসতা করতে দেওয়া হবে না। সে আওয়ামী লীগ হোক, স্বতন্ত্র হোক। কেউ গায়ের জোরে কিছু করতে পারবে না, সে সুযোগ নেই।
দল থেকে স্বতন্ত্র দাঁড় করানো গঠনতন্ত্র বিরোধী কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগেরটা আগে, আজকেরটা আজকে, আগামীকালেরটা আগামীকাল। পরিস্থিতি ও বাস্তবতার নিরিখে আমরা মূল্যায়ন করি। এটাই অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা।
৪৭/১১ ধারা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো বিষয়ে কোনো জটিলতা দেখা দিলে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ব্যবস্থা নিতে পারেন। দেশের সার্বিক গণতন্ত্র যেখানে সংকটের মুখে, বিএনপিসহ বিরোধী দল গণতন্ত্রের প্রতি, নির্বাচনের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের সভাপতির বিশেষ দায়িত্ব পালনের সুযোগও আমাদের গঠনতন্ত্রে রয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, চাওয়া-পাওয়ার হিসাব তো এখনো হয়নি। আমরা পলিটিক্যাল বিষয়ে আলোচনা করেছি। কীভাবে নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে, অবাধ হবে, নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচনটা যাতে সুন্দরভাবে, পিসফুল পরিবেশে হয়, যেহেতু তারা পার্টিসিপেন্ট, সেজন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। সমন্বয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছে। এখানে অন্য কোনো বিষয় নেই। আরেকটা কথা বলা হচ্ছে, রওশন এরশাদ বিরোধী দলের নেতা। তাদের দলীয় অভ্যন্তরীণ যে সংকট সেটার সঙ্গে আমাদের কিছু নেই।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন যদি কাউকে দুর্নীতিবাজ মনে করে, সেটা তাদের ব্যাপার। এটা নিয়ে তারা মন্তব্য করবে। ইলেকশন করতে পারছে মানে এ লিগ্যালি পার্টিসিপেটরি। যদি দুর্নীতি দমন কমিশন এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন না করে তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়, অনুমতিপ্রাপ্ত কাউকে তো এই মুহূর্তে আপনি দুর্নীতিবাজ বলতে পারেন না।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।