মনোনয়নে আ.লীগে যাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নেই
ফাইল ছবি
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রিও শেষ। দলীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে লড়াই করতে গড়ে একেকটি আসনের জন্য ফরম বিক্রি হয়েছে ১১টিরও বেশি। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে কয়েকটি আসন। যেখানে মনোনয়ন ফরম বিক্রিই হয়েছি একটি করে। এর ফলে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এই প্রার্থীদের দ্বাদশ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এক প্রকার নিশ্চিত বলা যায়।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি বুথের তথ্য অনুযায়ী, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষে গোপালগঞ্জ-৩ ও রংপুর-৬ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলটির নেতারা। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ-৩ আসনের জন্য অন্য কেউ নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়ে ফরম তোলেননি।
একই তালিকায় রয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন, শেখ সালাউদ্দিন ও শেখ তন্ময়, সদ্যসাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন। এসব নেতার আসনে তারা ছাড়া আর কোনো প্রার্থী নৌকার মনোনয়নের প্রত্যাশায় ফরম সংগ্রহ করেননি।
গত মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদানের চতুর্থ ও শেষ দিন। এ কার্যক্রম শেষে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দলের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তারা মোট তিন হাজার ৩৬২টি ফরম বিক্রি করেছেন। এসব ফরম বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ১২১ জন অনলাইনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
দলের মনোনয়ন ফরম ও বিক্রি জমাদানে সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষে গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে দলের ফরম বিক্রির প্রথম দিনেই। এদিন শেখ হাসিনা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদান কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন যান। এসময় তার পক্ষে গোলাপগঞ্জের স্থানীয় নেতারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। আর মঙ্গলবার ফরম বিক্রির শেষ দিনে তার পক্ষে ফরম নেওয়া হয়েছে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের জন্য। এই আসনে অবশ্য বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন নৌকার ফরম সংগ্রহ করেছেন।
নোয়াখালী-৫ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার আসন থেকে তিনি বাদে অন্য কোনো নেতা মনোনয়ন ফরম নেননি। গোপালগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বিপরীতেও দলীয় কোনো প্রার্থী ফরম সংগ্রহ করেননি। শেখ সেলিম আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই।
এদিকে বাগেরহাট-১ আসন থেকে শেখ হেলাল উদ্দিনের বিপরীতে দলের আর কোন প্রার্থী ফরম নেননি। শেখ হেলাল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আপন চাচাতো ভাই। অন্যদিকে শেখ হেলালের ছেলে শেখ তন্ময় বাগেরহাট-২ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তার আসন থেকেও অন্য কেউ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় ফরম নেননি।
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী মাদারীপুর-১ আসনে একক প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তার আসনেও মনোনয়ন প্রত্যাশায় অন্য কেউ ফরম নেননি।
এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এবং কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের ছেলে ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ছাড়া অন্য কেউ নৌকার প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু ঝালকাঠি-২ এবং তোফায়েল আহমেদ ভোলা-১ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। এসব আসনেও একাধিক প্রার্থী দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ঝালকাঠি-২ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য গোলাম রাব্বানী চিনুও রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায়।
শেখ হেলালের আরেক ভাই শেখ সালাহউদ্দিন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য। তার আসনেও নৌকা প্রত্যাশায় ফরম সংগ্রহ করেননি কেউ। তবে শেখ হেলালের আরেক ছোট ভাই বিসিবি পরিচালক শেখ সোহেল এবার নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশায় খুলনা-১ ও বাগেরহাট-৩ থেকে ফরম সংগ্রহ করেছেন। এসব আসনে অবশ্য অন্যরাও দলীয় ফরম নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভাগ অনুযায়ী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের জন্য বুথ সুনির্দিষ্ট করা ছিল। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য দুটি করে এবং বাকি ছয় বিভাগের জন্য একটি করে মোট ১০টি বুথ ছিল।
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টায় বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠকে শেষে সন্ধ্যা ৭টার পর তফসিল ঘোষণা শুরু করেন সিইসি। তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৭ জানুয়ারি (রবিবার)। ওই দিন সকাল ৮টা থেকে টানা ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।