নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের সামনে কাঁদলেন ফখরুল
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তাঁরা এখানে সমবেত হয়েছেন। মঞ্চে আসেন সমাবেশের প্রধান অতিথি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি নেতা-কর্মীদের খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা জানান।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডাম অত্যন্ত অসুস্থ। যে নেত্রী সব সময় অত্যন্ত শক্ত মনে জোর নিয়ে সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠেন, যিনি পাঁচ বছর বন্দী থাকার সময়ও কোনো দিন তাঁর চোখে পানি দেখিনি, গতকাল তাঁকে অত্যন্ত অসুস্থ দেখেছি। আমার প্রথমবারের মতো মনে হয়েছে যে, সত্যি আমাদের মাতা, আমাদের নেত্রী, আমাদের ম্যাডাম অনেক অনেক বেশি অসুস্থ।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) আমি তাঁকে (খালেদা জিয়া) দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা বলেছেন যে আপনাদের (বিএনপি) যদি কিছু করার থাকে, করেন। দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া এত অসুস্থ, তাঁর চিকিৎসকেরা বলছেন, অবিলম্বে যদি বিদেশে তাঁর চিকিৎসা না দেওয়া হয়, তাহলে তাঁকে বাঁচানো দুষ্কর হয়ে যাবে।’
মার্কিন স্যাংশন নিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু মার্কিন স্যাংশন নয়, এ দেশের মানুষ এখন স্যাংশন দিচ্ছে এই সরকারকে। এ দেশের মানুষ পরিষ্কার ভাষায় একবাক্যে বলছে, এখন অনেক হয়েছে, অনেক অত্যাচার করেছো, নির্যাতন করেছ, কারাগারে আটক করেছ আমাদের নেতাদের, আমাদের মাকে। আর আমরা সেটা হতে দেব না। এজন্য আমরা আন্দোলন করছি। এখনো সময় আছে, এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা ভেবে নিয়ে আপনারা পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে এই রাজনৈতিক সংকট দূর করুন। অন্যথায় সকল দায়-দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে।’
মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আজকে গায়ের মধ্যে আগুন লেগেছে। অনেক হাঁকডাক করে আমেরিকা গেছেন। ভেবেছেন, ওখানে গিয়ে বাইডেনের (যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট) সঙ্গে পরিবারকে নিয়ে ছবি তুলে একটা সুরাহা বোধহয় করা যাবে। গেছে করা? উনি যখন আমেরিকায় বসে আছেন, ওই সময়ে আমেরিকার থেকে ভিসানীতি কার্যকর করা হলো। পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিপক্ষে যারা দাঁড়াবে, যারা অতীতে দাঁড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবে।
৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্রোগে ভুগছেন। প্রায় দেড় মাস ধরে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না। এর মধ্যে অল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁকে দুই দফায় করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিতে হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথাও এর আগে জানিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।
সরকারকে হুঁশিয়ার করে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। অন্যথায় কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় সরকারকে নিতে হবে। তার যদি কোনো ক্ষতি হয়, শুধু নেত্রীর ক্ষতি হবে না, দেশের বড় ক্ষতি হবে।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখন থেকে আন্দোলন “ডু ওর ডাই” (মরো, না হয় বাঁচো), এর মাঝামাঝিতে কোনো ঠাঁই নাই।’ দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মরতে হলে মরতে হবে, গুলি খেতে হয় খেতে হবে, এরপরও এ সরকারকে সরাতেই হবে।’