সরকারের সময় শেষ: মির্জা ফখরুল
বর্তমান সরকারের সময় শেষ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আজকে এই অবস্থা যতই চিল্লা-চিল্লি করেন, যতই জাপান, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা আর সৌদি আরব, কাতার, চীনে যান- কোনো লাভ হবে না। সময় শেষ। এটাই বাস্তবতা।
শুক্রবার (১৯ মে) বিকালে রাজধানীর শ্যামলী ক্লাব মাঠে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি বলতে চাই- এখনো সময় আছে জনগণের চোখের ভাষা পড়ুন, জনগণকে মুক্তি দেন এবং জনগণের যে দাবি উঠেছে সেই দাবি মেনে নেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, উপর থেকে নেমে আসুন। এই গণভবন থেকে বের হন, পাইক-পেয়াদা, মোরকেনদাজ, এসএসএফ, সোয়াত এগুলো বাদ দিয়ে এই মানুষের সামনে এসে দাঁড়ান। দেখুন তারা কী বলে আপনাদের। মানুষের চোখের ভাষা বুঝুন। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মানুষ আর বাঁচতে পারছে না।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলতে চাই, এই সরকার দেশে-বিদেশে সমর্থন হারিয়েছে। এখন দেশের মানুষ, গণতান্ত্রিক বিশ্ব চায় এখানে একটা সুষ্ঠু, সঠিক, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক এবং সেটা তারা জানেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সম্ভব হবে না। তাই বলতে চাই, আপনারা দয়া করে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না সেখানে আপনারাও চিহ্নিত হয়ে যাবেন।
নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন, আর কিছু দিন কষ্ট করতে হবে। এই সরকারকে টেনে না নামালে এরা যাবে না। সেজন্য আমাদেরকে সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, ব্যক্তি-সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ করে দুর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টি করে ঝড়ের মতো…জনতার উত্তাল তরঙ্গ পরাজিত করতে হবে। আজকের এই সমাবেশ শুধু সভা নয়, এই সভা আপনাদের শপথ নেওয়ার সভা। আমাদের জীবনকে বাজি রেখে এই দেশকে মুক্ত করবার জন্য, এই দেশের মানুষকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের আজকে একটা যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে। সেই যুদ্ধ আমাদের নিজেদের বাঁচানোর যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ জাতিকে বাঁচানোর যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর যুদ্ধ। আসুন আমরা সেই শপথ নিয়ে এই আন্দোলনে আরও বেগবান করি এবং আমাদের নেতা তারেক রহমান যে ডাক দিয়েছেন- ‘ফয়সালা হবে কোন পথ, রাজপথে’, ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ করার জন্য আমরা আজকে রাজপথে ফয়সালা করে এই দানব সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।
গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, নির্যাতন, সরকার পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়। ঢাকা ছাড়াও শুক্রবার দেশের আরও ২৭টি মহানগর-জেলায় এই সমাবেশ হয়।
সমাবেশে ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই’, ‘জনগণ ব্যালট চায়, পুলিশের বুলেট নয়’, ‘ব্যালট চাই, ভোট দেব’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড হাতে অংশ নেয়।
বিদ্যুৎ-শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ সর্বক্ষেত্রে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। তারা এই শেষ সময়ে টিকে থাকার জন্য মরণ কামড় দিচ্ছে। এই যে মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা- কোন দেশে আমরা বাস করি। হাইকোর্ট থেকে জামিন দেয়, সেই জামিন নিয়ে নিম্ন আদালত গেলে সেই জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। কোনো ঘটনায় ঘটেনি, মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনে আমাদের ১৭ জন ভাই প্রাণ দিয়েছেন। আজকে একটু আগে শুনলাম খুলনায় আমাদের সমাবেশে গুলি হয়েছে। গুলি করে আমাদের জনগণের এই আন্দোলনকে বন্ধ করা যাবে না। তারা তো অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছেন, ১৫ বছর ধরে ধরে চেষ্টা করছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ওরা বলে কী- তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি কবরে চলে গেছে, বিলীন হয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আপনারা যখন চেয়েছিলেন তখন ছিলে এটা ভালো.. সেদিন তো শেখ হাসিনা আপনি বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনোটাই মানব না। আজকে আমাদের পরিষ্কার কথা- এদেশের মানুষ একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য, নিজের ভোট নিজে দেবার জন্য এবং ভোটের রেজাল্ট ঘরে আনার জন্য তারাও তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো নির্বাচন মানবে না।
তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা সংঘাত চাই না, আমরা কনফ্রন্টেশন চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। আমরাও মনে করে নির্বাচনই এর একমাত্র উপায়। সেই নির্বাচন কখনোই আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে না। আমরা ২০১৮ সালে নির্বাচন দেখেছি, ২০১৪ সালে দেখেছি। তাদেরকে আর বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। ওই আপনার (শেখ হাসিনা) অধীনে এবার নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের খুব পরিষ্কার কথা, আমাদের প্রথম শর্ত আমরা বলেছি যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানসহ ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে তা প্রত্যাহার করতে হবে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা সংসদ রাখবেন আর আমরা নির্বাচন করব- এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এমপিরা এমপি থাকবেন আর এমপি ইলেকশন হবে সেই নির্বাচন কোনোদিন সুষ্ঠু হবে না। সেই কারণে সংসদ আগেই বিলুপ্ত করতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই নির্বাচন কমিশন কেমন নির্বাচন করবে তার প্রমাণ তো আজকের পত্রিকায় দেখলাম যেটা আপনারা একটা নতুন আইন করতে যাচ্ছেন। যে নির্বাচন কমিশন আসলে কোনো নির্বাচন বাতিল করতে পারবে না। তাহলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাটা কোথায়?
তিনি আরও বলেন, কাকে বুঝাচ্ছেন? দেশের সব মানুষকে কি বোকা মনে করেন, দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেন। আর কতদিন প্রতারণা করবেন। আর পারবেন না।
মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, মীর নেওয়াজ আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, পারভেজ রেজা কানন, রফিক শিকদার, মহানগর উত্তর বিএনপির আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, যুবদলের মামুন হাসান, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ মহানগর উত্তরের কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এমএইচ/এসজি