চলমান আন্দোলন আরও বেগমান হবে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আন্দোলন চলমান। এই আন্দোলন সমমনা শরীক দলগুলোকে নিয়ে সামনের দিনে আরও বেগবান করা হবে।
মঙ্গলবার (৯ মে) খালেদা জিয়ার গুলাশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আন্দোলন কখনো উঠে আবার কখনো নামে, আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের একটা সম্পৃক্ততা থাকে। আমরা কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করেছি। সমমনা শরীক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত পর্যায়ে। খুব শিগগিরই পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিশ্বাস করি ধীরে ধীরে চলমান আন্দোলন আরও বেগমান হবে এবং এই সরকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে।
নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ২০১৮ সালে আজকে যিনি প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বিশ্বাস করে সংলাপে অংশগ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু সংলাপের আলোচনায় উঠে আসা একটা বিষয়েও তারা কথা রাখেনি। একই ঘটনা আবার হবে, এটা একটা চক্রান্ত। বিভ্রান্ত করতে চায় এই বলে যে আমরা আলোচনার জন্য ডেকেছিলাম বিএনপি আসেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কাউকে নালিশ করি না। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশে বসবাসরত বিদেশি কর্মকর্তাদের অবহিত করি, এটা রুটিন ওয়ার্ক আলোচনা— এর বাইরে কিছু নয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সারাদেশের মানুষ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। সরকারের কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, দমন, প্রলোভন এই আন্দোলনকে বিভ্রান্ত, বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তাই সময় থাকতেই জনগণের মনোভাব বুঝে বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা মেনে নিয়ে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় রাজপথে জনগণের দাবির ফয়সালা করা হবে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং ভোটের অধিকার প্রয়োগসহ মুক্ত মত প্রকাশের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। আজকে সেই দেশে, মানুষের সকল অধিকার হরণ করা হচ্ছে। চলছে দুর্নীতি আর মিথ্যাচারের এক মহোৎসব। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের উপর বিভিন্ন কৌশলে নির্যাতন নিপিড়নের যাত্রা শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী মতের দলগুলো এবং দেশবাসী এই সরকারের অধীনে নির্বাচন না করা এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, ঠিক সে সময় অবৈধ সরকারের মন্ত্রী এবং শাসকগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যাচার ও অলীক কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না এবং জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। সংসদ ভেঙে দিয়ে এই অবৈধ সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। এই অবৈধ সরকার দেশের মানুষের উপরে অত্যাচার নির্যাতন চালানোর জন্য এবং অধিকার হরণের জন্য রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ যথা আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ সর্বশেষ বিচার বিভাগকে এই সরকার দখল করে নিজেদের ইচ্ছামত বিরোধীমতের মানুষসহ এ দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের উপরে অন্যায় অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুমের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এ দেশের জনগণের দ্বারা প্রত্যাক্ষিত বর্তমান সংসদকে ব্যবহার করে ইতোমধ্যে মানুষের ভোটের অধিকার স্তব্ধ করে একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার সকল কালাকানুন তৈরি করেছে। শাসন বিভাগকে ব্যবহার করে যখন তখন যে কোন মানুষকে গ্রেপ্তার নির্যাতন, হত্যা ও খুন এখন নিত্যদিনের এই অবৈধ সরকারের রুটিনে পরিণত হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েশী রায় দিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন। পুনরায় নতুন করে বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ডা: জোবাইদা রহমানসহ জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মিথ্যা মামলা দিয়ে চার্জ গঠন করে সাজা দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে সাজা দিয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে বিতাড়িত করার লক্ষে বিগত দিনের দায়ের কৃত মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা নতুন করে শুরু করছে। রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করে আইন মন্ত্রণালয় মামলার তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই সকল হীন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সরকার তথা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় দেশে উদ্ভুদ পরিস্থিতির সকল দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
এমএইচ/আরএ/