বিএনপিতে গ্রেপ্তার আতঙ্ক
নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। কিন্তু বিএনপির নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ হয়নি। এ অবস্থায় আন্দোলন জোরদার করতে চায় দলটি। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার আতঙ্কেও ভুগছেন নেতা-কর্মীরা।
জানা যায়, ঈদের পর শরিকদের নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছে বিএনপি। এ সব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির আন্দোলনের বিষয়টি সরকারও কড়া নজরে রেখেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘নির্বাচনে বাধা দিলে প্রতিহত করার’ কথা বলেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ফের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়েছেন অনেক নেতা-কর্মীদের আত্মগোপনে আছেন। যারা জামিনে মুক্ত ছিলেন তারাও পুনরায় গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বলছেন, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশ নেওয়ার পর থেকেই জেলা-উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির বেশ কয়েকজন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে কথা হলে ঢাকাপ্রকাশ-কে তারা বলেন, রাজপথের আন্দোলনে চূড়ান্ত উত্তাপ ছড়ানোর আগেই মামলার ফাঁদে জড়নো হচ্ছে বিএনপি নেতাদের। পুরনো মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির স্থানে নাম ঢুকিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। পুরনো মামলায় চার্জশিটও দেওয়া হচ্ছে দ্রুতগতিতে। বিচারকাজও চলছে একই গতিতে। একইসঙ্গে পুরনো মামলা সচল ও নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের আবেদনে উচ্চ আদালতের আদেশে একের পর এক বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলা সচল হচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নাল আবেদীন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর মামলা সচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দেশে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। বিএনপির প্রায় সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম চালাতে পারছেন না তারা। বিভিন্ন কর্মসূচি পালনেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। তবে নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে দলের প্রতি নেতা-কর্মীদের আনুগত্য আরও বহুগুণ বেড়েছে। কেন্দ্রের ডাক পেলেই তারা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা। সে সব মামলার অনেকগুলোর আসামি আবার অজ্ঞাত। এজন্য চাইলে যে কাউকেই সেসব মামলায় গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। এভাবে মামলার পর মামলা দিয়ে দলটিকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সঙ্গত কারণে গ্র্রেপ্তার আতঙ্ক তো থাকবেই।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, অনির্বাচিত সরকার নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে বিএনপির ওপর নতুন করে গ্রেপ্তারের খড়গ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পবিত্র ঈদেও থেমে ছিল না গ্রেপ্তার করা ও নতুন নতুন মামলা দায়ের। ইতোমধ্যে সারাদেশ থেকে দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নতুন করে আরও কিছু নেতাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে এমন একটা গুঞ্জন আছে। উদ্দেশ্য বিএনপিকে সুসংগঠিত হতে না দেওয়া।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে সরকার বছরের শুরু থেকেই ব্যাপক ধড়পাকড় শুরু করেছে। দেশব্যাপী প্রতিদিনই বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, নতুন নতুন মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, বর্তমান কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ ও মিথ্যা মামলা দায়েরের হিড়িক এখন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। বেপরোয়া গতিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ভুয়া ও গায়েবি মামলা দায়ের এবং জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের মাত্রা দেখলে মনে হয় ভোট জালিয়াতির সরকার যেন বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম চালানোর ক্ষমতা অর্পণ করেছে বিচার বিভাগ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। বানোয়াট মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ও জামিন বাতিলের আতঙ্কে বিএনপি নেতা-কর্মীরা এখন দুঃসহ জীবন অতিবাহিত করছে, তারা সর্বশান্ত হয়ে গেছে।
আরইউ/আরএ/