দুই 'শক্তি'তে সমাধানের পথ খুঁজছে বিএনপি
রাজপথে আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে সমাধানের পথ খুঁজছে বিএনপি। এ লক্ষে আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি শক্তিধর দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে দলটি।
সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির প্রতিনিধিদল। এরও আগে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। এর আগেও ধারাবাহিকভাবে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি৷
জানা যায়, প্রতিটি বৈঠকেই সরকারের 'অগণতান্ত্রিক আচরণ'সহ নানা বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের 'অবহিত' করেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি অতীতের উদাহরণ টেনে বিএনপি কূটনীতিকদের বোঝাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এবারও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া তারা মানবে না।
এর পাশাপাশি নির্বাচনের বছরে রাজপথের আন্দোলন চাঙ্গা করে কীভাবে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে দাবি আদায় করা যায় সে বিষয়েও কর্মকৌশল ঠিক করছে বিএনপি। রাজপথের আন্দোলন আরও বেগবান করতে চায় দলটি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিএনপির আন্দোলন সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছে। আন্দোলন বলে কয়ে হয় না। আন্দোলনই আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারণ করে নেবে। সেখানে কে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করল আর কে অংশগ্রহণ করল না সেটা বড় কথা নয়। বিষয়টি হচ্ছে জনগণ যখন জেগে উঠতে শুরু করেছে সেই আন্দোলন তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবেই।
গয়েশ্বর রায় আরও বলেন, আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নির্বাচনকে সামনে টেনে নিয়ে এসে নেতাকর্মীদের মনোবলকে আন্দোলন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ। এটা ধরে রেখেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে; হবে। চলমান আন্দোলন শুধু বিএনপির একার নয়; এই আন্দোলন দেশের সর্বসাধারণের। বিদেশিরা এসে দেশ স্বাধীন করে দিয়ে যায় নাই। আমাদের দেশ আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি। তেমনিভাবে জনগণের ভোটাধিকার সহ মৌলিক অধিকার আদায়ে শেষ যুদ্ধটাও না হয় দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়েই করব। বিদেশিরা ৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন বিশ্বজনমত আদায়ে কাজ করেছে আর এখন এই দেশে যে একটি অনির্বাচিত সরকার জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে আছে সেটা বুঝানোর চেষ্টা করছে। এর বেশি কিছু তাদের কাছে আশা করা ঠিক না। আমাদের কাজটা আমাদেরকেই করতে হবে। আমরা যেভাবে এগুচ্ছি।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকমহল অবগত আছে। তারাও চায় এই দেশে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আর সেজন্য প্রয়োজন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বর্তমান সরকার গণবিরোধী। এই অনির্বাচিত সরকার কে সরাতে হবে। এরা যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের আরও ক্ষতি হবে। তাই বাংলাদেশ কে রক্ষার জন্য সবাই এক জোট হয়ে আন্দোলনে নেমেছি। রাজপথে আন্দোলনে সমাধান হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না। যতবার রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে এসেছে ততবারই ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। এবারও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন শুরু করেছি। কাজেই হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার করে আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। জনগনকে সঙ্গে নিয়ে বিজয় অর্জন করা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে নির্বাচন দিতে হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিএনপির রাজনীতি সঠিক পথেই আছে। বিএনপি কোনো সন্ত্রাস নির্ভর রাজনৈতিক দল নয়। রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে বিএনপিকে দমন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীনরা। তারপরও বলব এই দীর্ঘ ১৪/১৫ বছরে তাদের অত্যাচার নির্যাতন বিএনপিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে শিখিয়েছে। যে ঐক্যবদ্ধতাই আগামী দিনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যূত করতে সক্ষম হবে।
আরইউ/এএস