‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা জনগণের দাবি’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে। সবার আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। এটা এখন দেশের দাবি, জনগণের দাবি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে সরকার নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, আসুন আমরা আমাদের সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশকে একটা সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য, বাংলাদেশকে একটি সত্যিকার অর্থে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্যে, এখানে সাধারণ মানুষ যাতে তার অধিকার ভোগ করতে পারে, বৈষম্য কমিয়ে নিয়ে এসে সাম্যের একটি অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্যে আমরা সবাই একযোগে লড়াই শুরু করি। এই যে ভয়াবহ দানব যা আমাদের বুকের উপরে চেপে বসে আছে তাদেরকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার গঠন করতে পারি-সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাই।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইন বিষয়ক এক সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন। গুলশানে লেকশোর হোটেলে বিএনপির উদ্যোগে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক কাঠামো’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়। এতে দলের দলের মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, দখলদারী একটা সরকার। তারা এসব আইন করে ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে চায়। সামনে নির্বাচন- এই নির্বাচনকে সামনে রেখে যেন কেউই রুখে দাঁড়াতে না পারে, কেউ যেন তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে না পারে এবং নির্বাচনে তাদেরকে কেউ যেন বাধা দিতে না পারে সেজন্য এই আইনগুলো করে নিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন দিয়ে নাগরিকদেরকে প্রতিহত করা হচ্ছে যে, তারা তাদের কথা বলবে না, তারা তাদের অভিযোগগুলো বলবে না, তারা লিখবে না, সাংবাদিকরা যেন না লিখে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঠিক একই অন্যান্য আইনগুলো দিয়ে আজকে এই নির্বাচনে তারা প্রতিপক্ষকে সম্পূর্ণরূপে দূরে রেখে নির্বাচন পার হয়ে যেতে চায়।
আইসিটি অ্যাক্টে ভিকটিম রাজবাড়ীর সোনিয়া আখতার স্মৃতি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছি বলে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা করছে। আমাকে রাতে রাজবাড়ীতে থেকে তুলে নিয়ে কয়েক ঘণ্টা কোথায় রেখেছে জানি না। আমার দুইটা ছোট ছোট বাচ্চা আছে। তাদের সামনে থেকে তারা আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। আমি এই মামলার ভুক্তভোগী। আমার কথাটা ভাইরাল হয়েছে বলে আমাকে আপনারা জানেন। কিন্তু এমন অনেকে আছেন তাদের খবর কেউ জানে না।
জাহিদ হাসান বলেন, এই আইনে তুলে নেওয়ার পর কী যে অত্যাচার করা হয় যা আমি বলে শেষ করতে পারব না। আমাকে গুম করেছে আমার কী অপরাধ ছিল? আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লিখতাম, ব্লগিং করতাম..এই যা। গুমে থাকা অবস্থার তার উপর ‘নির্মম’ নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন তিনি।
ডিজিটাল আইনে গ্রেপ্তার হওয়া মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বলেন, আমি শুধু সোশ্যাল মিডিয়া একটু বক্তব্য দিয়েছিলাম, আবেগ থেকে একটু কথা বলেছিলাম সেজন্য আমাকে তুলে নিয়ে গেল।
তিনি বলেন, আমাকে র্যাব অফিসে নিয়ে একের পর এক ইন্টারোগেশন করেছে তার বর্ণনা দিলে শিহরিত হয়ে উঠতে হয়। আমি এখানে তা বলতে চাই। আমাদের রিমান্ডের পর জেলে পাঠানো হয় সেখানে আমাকে কম্বল-বালিশটা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এই হচ্ছে আমাদের স্বাধীন দেশ।
দীর্ঘদিন গুম থাকা দৈনিক পক্ষকালের সস্পাদক আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, দেশের গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন? আমার মনে হয়, গণমাধ্যম এখন মৃতপ্রায়। ৫৩ দিন গুম হওয়াকালে আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। কোথায় আছি। কেমন আছি। আমার চোখ বন্ধ ছিল। আমি ক্রসফায়ারের মুখোমুখি হয়েছি। অভিযোগ ছিল.. আমি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লিখেছি। হয়তো লিখেছি.. এটা আমার অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। তাই বলে গুম করে নেওয়া হবে.. ক্রসফায়ারে নেওয়া হবে.. জেল খাটতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আমাদের সংবিধান পরিপন্থী, এই ডিজিটাল আইন গণতন্ত্রের পরিপন্থী, এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ইউনিভারসেল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস-১৯৪৮ এর পরিপন্থী।
তিনি বলেন, আজকে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান আছেন তারও প্রতিক্রিয়া আপনারা দেখেছেন তিনি সরকারকে বলেছেন, এটা স্থগিত করেন। আমরা এ কথায় বলতে চাই।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণঅধিকার পরিষদের ড. রেজা কিবরিয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুতফর রহমান বক্তব্য রাখেন।
এমএইচ/এসজি