সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নতুন নির্বাচন দাবি বিএনপির
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন বাতিল করে নতুন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তথাকথিত নির্বাচন বাতিল করে নতুন করে সু্ষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট ডাকাতিতে সিদ্ধহস্ত আওয়ামী লীগের মুখোশ আরেকবার উন্মোচিত হলো। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠোকা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী এবং সমিতির সাবেক দুইজন সভাপতি এ, জে, মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা (বাদল) নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম থেকেই প্রধান বিচারপতি মহোদয়কে সব ঘটনা জানিয়ে এসেছেন। এমনকি ১৫ মার্চ, গুরুতর আহত সাংবাদিকরাও প্রধান বিচারপতির কাছেও পুলিশি নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করেছেন। এসব সত্ত্বেও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয়নি। এ থেকেই প্রমাণিত রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ আজ এমন একটি দেউলিয়া দলে পরিণত হয়েছে যে, আইনজীবীদের একটি সমিতির নির্বাচনেও পুলিশ ও বহিরাগতদের ব্যবহার করে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করতে হয়। এটা বড় লজ্জার বিষয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনও কি অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হতে পারে নয়, হবেই। হবে বলেই বলছি এই আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। দখল করা তাদের চরিত্র হয়ে গেছে। দখল করে, জোর করে তাদের প্রার্থিদের বিজীয় করা হবে।
তিনি বলেন, যারা রাষ্ট্রকে নিয়ে চিন্তা করেন তারা কীভাবে এই ধরনের ঘটনা মেনে নিতে পারেন? আমি একজন দেশের নাগরিক হিসেবে একটি রাজনৈতিক দলের মহাসচিব হিসেবে বলছি- রাষ্ট্র এখন বিপন্ন হয়ে হয়েছে। আমরা গণমাধ্যমকে একটা স্তম্ভ বলি; সেখানেও দখল করা হচ্ছে, প্রেস ক্লাব দখল করা হচ্ছে, অদৃশ্য শক্তি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ কে কোন দল বা গ্রুপের তা বড় কথা নয়। সুপ্রিম কোর্টে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন জাতি দেখতে চায়। যদি না হয় তাহলে বুঝতে হবে এই দেশে কোথায় সু্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই।
প্রধান বিচারপ্রতির উদ্দেশে করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করব আপনি রাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি হিসেবে আইনাঙ্গনকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসবেন। একটি কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন। এখন রাষ্ট্রের প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বরত যারা আছেন তাদের পবিত্র দায়িত্ব এই রাষ্ট্রকে রক্ষা, রাষ্ট্রের পবিত্রতা রক্ষা করা। কেননা আমরা কল্পনাও করতে পারি না সুপ্রিম কোর্টে পুলিশ ঢুকে আইনজীবীদের পুলিশ আক্রমণ করবে, নির্বাচন দখল করবে। এখন সেই জায়গাটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেল। এর মানে হচ্ছে রাষ্ট্রের চরিত্র কী দাড়াচ্ছে? কাজেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে সবার এগিয়ে আসা দরকার।
তিনি বলেন, গত ১৫ ও ১৬ই মার্চ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। এ নির্বাচনকে ঘিরে বিজ্ঞ আইনজীবীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক আগ্রহ ছিল। কিন্তু আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করেছি যে, দেশের অন্য সকল নির্বাচনের মতো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সমিতির নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক চরিত্র তার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আইনগতভাবে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সবসময় বলে আসছি যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও তাদের ছত্রছায়ায় দেশের কোথাও কোনো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। জনগণের ভোটারাধিকারে বিশ্বাসী নয়। বিগত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় নির্বাচনে ইতোপূর্বে বার বার প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ প্রমান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। এর আগে ঢাকা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনেও একই ধরনের প্রহসনের নির্বাচন করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, দেশের সাধারণ মানুষের আইনের আশ্রয় নেওয়ার শেষ ভরসাস্থল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সমিতিতে তারা নগ্ন হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র। ১৯৭১ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। পরবর্তীতে ৭২ সালে একটি সংবিধান তৈরি হয়। সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্রের চরিত্র হবে পুরোপুরি গণতান্ত্রিক। সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ স্বাধীন থাকার কথা। রাষ্ট্রকে মেনে নেওয়ার জন্য যে আস্থা থাকে সেটা হচ্ছে বিচার বিভাগ। বিচার বিভাগ যখন আক্রান্ত হয় কার্যকারিতা বিনষ্ট হয় তখন রাষ্ট্রের উপর জনগণের আস্থা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এখন তাই হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন সত্যিকার অর্থে কার্যকরি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নেই। আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন নিয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা তার প্রমাণ। অথচ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে বলা হয় পার্ট অব সুপ্রিম কোর্ট অর্থাৎ বারের সঙ্গে কোর্টের সম্পৃক্ততাকে বলা হয় অফিসিয়াল অব কোর্ট।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১৪টি পদেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দিবাগত রাত ১টার পর সমিতির আওয়ামী লীগ অংশের মনোনীত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান খান এ ফলাফল ঘোষণা করেন। সভাপতি পদে আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ৩৭২৫ ভোট ও সাধারণ সম্পাদক পদে আব্দুন নুর দুলাল ৩৭৪১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ২৯৩ ভোট ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ৩০৯ ভোট পেয়েছেন। যদিও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এই নির্বাচনকে অবৈধ অ্যাখ্যায়িত করে ভোট প্রদান থেকে বিরত ছিলেন।
এমএইচ/এসএন