সরকারকে সরাতে আন্দোলনে সফল হব: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে দেশে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে জনগণ তার মৌলিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছে।
তিনি বলেন, ‘জনগণ যে ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন এবং সেই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার পরিচালনা করবেন। সেই ব্যবস্থাটাই এখন গায়েব হয়ে গেছে। অন্য দিকে অর্থনীতি লুটপাট করে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে যে, এই অর্থনীতিকে টেনে তুলা দুঃসাধ্য কাজ। গরিব আরও গরিব হয়েছে আর আওয়ামী লীগ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। ফলে এই দেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে চলেছে।’
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ময়মনসিংহ বিভাগের সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি রংপুর বিভাগ দিয়ে শুরু হওয়া মতবিনিময় সভা ১৬ মার্চ ময়মনসিংহ বিভাগের জনপ্রতিনিধিদের মতবিনিময়ের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে।
এদিকে, ২৩ ফেব্রুয়ারি রংপুর বিভাগ, ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনা বিভাগ, ২৮ ফেব্রুয়ারি সিলেট ও খুলনা বিভাগ, ১ মার্চ বরিশাল বিভাগ, ২ মার্চ ঢাকা বিভাগ, ৫ মার্চ ফরিদপুর ও কুমিল্লা বিভাগ, ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম বিভাগ, ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম (আংশিক) ও রাজশাহী, ১৫ মার্চ রাজশাহী বিভাগ (আংশিক) এবং ১৬ মার্চ ময়মনসিংহ বিভাগের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি সমর্থক যারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন এ রকম প্রায় তিন হাজার জনপ্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
দল সমর্থিত সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে জনগণের একটা যোগসূত্র সৃষ্টি হচ্ছে। তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মতবিনিময় সভাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এই সরকারকে বিদায় করতে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে প্রথম থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন জিয়াউর রহমান তারপর খালেদা জিয়া।
সেই পতাকা আজকে স্বাধীনতার ৫২ বছরে হাতে নিয়েছেন যোগ্য নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে সামনে নিয়েই আমরা আন্দোলন শুরু করেছি এই সরকারকে সরিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায়। গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের ধারা চলমান। ইতিমধ্যে আন্দোলনে অনেক সফল হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি-এই আন্দোলনের ধারায় সবাই যদি ঐক্যবদ্ধভাবে একসঙ্গে এক সুরে বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলি এই সরকারকে সরে যেতে হবে; জনগণের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা সেই আন্দোলনে সফল হব।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন আমাদের দেশে ও জনগণের উপর একটি সরকার আছে। যারা নিজেদেরকে বিনাভোটে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে রাষ্ট্র যন্ত্র কে ব্যবহার করে জনগণকে পর্যদস্ত করে ক্ষমতায় টিকে থাকছে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও বেঁচে থাকার প্রশ্নে আমাদেরকে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে।
জনগণের ভোটে জনগণের সরকার ও সংসদ গঠন করতে হবে। কারণ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা ৫২ ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১ মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত লড়াই সংগ্রাম করেছি। আমরা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে ছিলাম। সেই গণতন্ত্রকে এরা (আওয়ামী লীগ) খেয়ে ফেলেছে, লুট করে নিয়েছে। এটা একবার শুধু এইবার নয়; ৭১ থেকে ৭৫ পর্যন্ত যখন এরা ক্ষমতায় ছিল তখনো তারা বহুদলীয় গণতন্ত্র, মানুষের ভিন্নমত, অধিকার হরণ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল, যোগ করেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে স্কাইপিতে দিক নির্দেশনা বক্তব্যে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এডভোকেট ফজলুর রহমান, আব্দুস সালাম প্রমুখ।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবসহ সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের ২৯০ জন জনপ্রতিনিধি। মতবিনিময়সভা সঞ্চালনা করেছেন দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু।
এমএইচ/এমএমএ/