‘বিএনপি ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না’
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব সুষ্ঠু হয়েছে বলে মনে করে না বলে উল্লেখ করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড খন্দাকর মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্ব এই সরকারকে ছবক দিচ্ছে আগামী নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না।’
সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে গুলশান বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। মৃত্যুকূপে ধাবমান বাংলাদেশ-দুই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জিয়া পরিষদ।
সরকারবিরোধী কণ্ঠ রোধ করতে হিটলারি কায়দায় নির্যাতন করছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু মাত্র চাপাবাজি ও গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে।
আর এই ক্ষমতাকে ধরে রাখতে ও বিরোধী কণ্ঠকে রোধ করার জন্য গত ১৪ বছর ধরে এই ফ্যাসিস্ট সরকার হিটলারি কায়দায় যত নির্যাতন করতে পারে, এই বাংলাদেশে ওই রকমভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গত ১৪ বছরে ৬ শতাধিক মানুষকে গুম করছে। কত হৃদয়বিদারক, এই গুম হওয়ার পরিবারের ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে পিতার নামের জায়গায় তার মরহুম কিংবা জীবিত কোনোটাই লিখতে পারে না। যদি মৃত লিখতে হয় তার একটা দলির থাকতে হবে।
গত ১৪ বছরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে প্রায় ১ লাখের ওপরে মিথ্যা মামলা হয়েছে, আর আসামি ৩৫ লাখের কাছাকাছি বলে উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তৃণমূলের এমন কোনো নেতা-কর্মী নেই যার নামে একাধিক মিথ্যা মামলা নেই। আজকে আমাদের নেত্রী একটি বানোয়াট মিথ্যা মামলায় গৃহবন্ধী।
বাংলাদেশ আজকে একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছে বলে দাবি করে মোশাররফ বলেন, আমরা ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিশ্ব আজকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করছে।
স্বাধীনতার পর থেকে কোনো রাজনৈতিক দল ইউনিয় পর্যায়ে কর্মসূচি দেয়নি বলে উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, দেশের সংকট উত্তরে আমরা ১০ দফা দিয়েছি। তারমধ্যে প্রথমে রয়েছে এই সরকারের পদত্যাগ ও অবৈধ সংসদ বাতিল। এর পক্ষে জনগণ রায় দিয়েছে তার প্রমাণ হয়েছে এসব দাবিতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলো সফল হওয়ার মাধ্যমে। এরপর আমাদের গণমিছিল, গণ-অনশন, পদযাত্রাও সফল হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি কর্মসূচিও সফল হয়েছে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যপণ্য মজুদ থাকলে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে কেন-এ ব্যাপারে সরকারের কাছে স্পষ্ট জবাব চেয়েছেন খন্দকার মোশাররফ ।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক এক বৈঠক শেষে রমজানের আগে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে,-এই মর্মে আশ্বস্ত করে জনসাধারণকে আতঙ্কিত হয়ে কেনাকাটা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
এ প্রসঙ্গ ড. মোশাররফ বলেন, ‘পত্রিকায় এসেছে- জিনিষপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। রমজান মাসে মানুষ কীভাবে চলবে তা ভেবে দিশেহারা। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে আশ্বস্থ করা হয়েছে- দেশে নাকি নিত্যপণ্যের মজুদ প্রচুর আছে। জনগণকে বলেছে- আতঙ্কিত হয়ে বেশি কেনাকাটা করবেন না।’
‘যদি এত মজুদ থাকে তাহলে কেনাকাটা করলে অসুবিধা কোথায়। আসলে কেনাকাটাই তো করতে পারছে না। বাজারের অবস্থা কী! চিনির দাম ১২০ টাকা, গরুর মাংস ৮শ টাকা। গরু ও মুরগির মাংস ভাগ করে কেনাকাটা করার রেওয়াজ এই দেশে ছিল না। ইলিশ মাছ কেটে দুইশ, আড়াইশ গ্রাম করে কেনার রেওয়াজ ছিল না, যোগ করেন তিনি।
আজকে কিন্তু বাজারে তা দেখা যাচ্ছে। তাতে যদি সরকার বলে সবকিছু মজুত আছে। কী রকম চাপাবাজি করছে সরকার! বাজারে গিযে দেখেন মানুষ কী পরিমাণ সরকারকে গালাগালি করে। আজকে গরিব মানুষ কিন্তু অর্ধাহারে আছে। এরপরও এই সরকার চাপাবাজি করছে। আমরা জানতে চাই- এই খাদ্যপণ্য যদি এতই মজুদ থাকে তাহলে মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে কেন সরকার স্পষ্ট জবাব দিক।’
তিনি উল্লেখ করেন, এই দাম বৃদ্ধির সঙ্গে যোগ হয়েছে মূল্যস্ফিতি। দেখেন মূল্যস্ফীতির অবস্থা। গত জানুয়াতিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.১৭। ফেব্রুয়িারিতে তা বেড়েছে ৮.৭১। এর পর আরও বৃদ্ধি হবে। এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার।’
কেন এটা হচ্ছে- এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, কারণ, সরকারের যারা ব্যবসায়ী, সিন্ডেকেট-মন্ত্রী-নেতা-ব্যবসায়ীরা জনগণের টাকা লুট করার জন্যই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছে। সরকার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মেগা প্রজেক্ট করে লুটপাট করে। ব্যাংক লুট করছে। যাদেরকে ঋণ দিয়েছে তাদের কোনো পরিচয় নাই। তাদের লোক বলে ঋণ দিয়েছে। এই লুটপাটের কারণে অর্থনীতি এখন ধ্বংস।’
বিএনপির এই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘বিদ্যুতের দামও প্রতি মাসে বাড়ানো হচ্ছে। কিসের জন্য? ইনডেমনিটি দিয়ে সরকার বিদ্যুৎ সেক্টরের লুটেরাদের রক্ষা করেছে। সরকারের লোকদের টাকা পাচার ও দুর্নীতিকে ব্যাকআপ দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার চাপাবাজি করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। কিন্তু এভাবে কোনো সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। জনগণ বুঝতে পেরেছে, এ সরকারকে সরানো ছাড়া দেশের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করা সম্ভব নয়।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল কুদ্দুস। এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ অন্য নেতারা।
এমএইচ/এমএমএ/