নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ চায় আওয়ামী লীগ: তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমরা চাই বিএনপিসহ সমস্ত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিক এবং জনগণ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আগামীর সরকার নির্বাচিত করুক। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন থাকে সেটি অবশ্যই আমরা করব।’
রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে আগত দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরামে’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী, জার্মানির সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভলকার ইউ. ফ্রেডরিচ, ভুটানের গ্লোবাল ভিলেজ কানেকশনের চেয়ারম্যান জ্যাকসন দুকপা, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ফোরামের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, বুয়েটের উপ-উপাচার্য ও ফোরামের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান ও কৃষিবিদ ড. আজাদুল হক বৈঠকে অংশ নেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ১০৮টি সংগঠন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। তার মধ্যে ৫১টি সংগঠনের মোর্চা হচ্ছে ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম। তারা আমার সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, তারা চান আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ। যেখানে জনগণ উৎসাহ নিয়ে আগামী দিনের সরকার নির্বাচিত করবে। এই ফোরাম গত নির্বাচনও মনিটর করেছে। আগামী নির্বাচনেও তারা ইলেকশন মনিটরিং দল পাঠাবে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাদেরকে জানিয়েছি, সমস্ত সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে যেভাবে নির্বাচন কমিশনের অধিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় আমাদের দেশেও ঠিক সেভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং কন্টিনেন্টাল ইউরোপের অন্যান্য দেশে যেভাবে চলতি সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে আমাদের দেশেও বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনের অধিনে।’
নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচনী ভীতি পেয়ে বসেছে। এটি স্বাভাবিক, কারণ ২০০৮ সালের নির্বাচনে পূর্ণ শক্তি দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচন তারা বর্জন করে আসলে গণতন্ত্রটাকেই প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল, ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ‘ডান-বাম, অতিডান-তালেবান’ সবাইকে নিয়ে বিরাট মোর্চা ঐক্য করে বিএনপি পেয়েছিল ৬টি আসন। এখন যাদেরকে নিয়ে ঐক্য করেছে তারা যখন প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে, সেখানে যত না লোক থাকে তার চেয়ে বেশি সাংবাদিক থাকে। সে জন্য নির্বাচন ভীতি তাদেরকে পেয়ে বসেছে। তারপরও আমি আশা করবো তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। তবে বিএনপি এখন হাঁটা শুরু করেছে, দেখা যাক তারা ক’বছর হাঁটে।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। সমস্ত দল যাতে অংশগ্রহণ করে সে জন্য নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ গ্রহণ করবে। খেলায় আয়োজকরা নিশ্চিত করে কারা কারা খেলতে আসবে। অন্যরা কে খেলবে বা খেলবে না সেটা যারা খেলতে যাবে তাদের দেখার দায়িত্ব না। তেমনি নির্বাচনের খেলার মাঠে আমরা একটা দল, বিএনপিও একটা দল। আমরাও চাই তারা অংশগ্রহণ করুক। আমরা ওয়াকওভার চাই না, আমরা খেলতে চাই, খেলে গোল দিয়ে জিততে চাই এবং দল হিসেবে আমরা আহ্বান জানাই, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল যেন আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়।’
ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণে জার্মান, নেপাল, ভুটানসহ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা এখানে এসেছেন। গতকাল আমরা জাতীয় পার্টি, জাসদ এবং ইসলামী ফ্রন্টের সাথে আলোচনা করেছিলাম, তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সঙ্গে আমরা আগামী নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমরা চাই, আগামী জাতীয় নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানের হবে, গ্রহণযোগ্য হবে এবং পর্যাপ্ত বিদেশি পর্যবেক্ষক দল যাতে পর্যবেক্ষণ করতে পারে সেই পরামর্শ চেয়েছি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা, যাতায়াতের বিষয়ে যাতে বেগ পেতে না হয় সে জন্য আমরা সরকারের সহায়তা চেয়েছি।’
নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক
এদিকে চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবে রবিবার মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন থেকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের জনগণের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন।
রাজনৈতিক ও মন্ত্রণালয়ের কাজের মাঝে এ দিন বিকালে আবার রাঙ্গুনিয়ার শিলক ইউনিয়নের মানুষের সঙ্গেও ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন তিনি। সরকারের বিভিন্ন সহায়তার উপকারভোগী সাধারণ মানুষের এ মিলন মেলায় দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও শান্তি-সমৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সকলকে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান সম্প্রচার মন্ত্রী।
এসএইচবি/এমএমএ/