‘কিবরিয়া হত্যায় সরকারের কাছে সুষ্ঠু বিচার-তদন্ত আশা করি না’
আজ ভয়াল ২৭ জানুযারি। ২০০৫ সালের এই দিনে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নেতা-কর্মী এবং আহত হন কমপক্ষে ৭০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। এ হত্যাকাণ্ডের ১৮ বছর পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু শেষ হয়নি এই হত্যা মামলা বিচার কার্যক্রম। বারবার পেছাচ্ছে মামলার তারিখ। হচ্ছে না সাক্ষ্যগ্রহণ। আর কবে শেষ হবে এর বিচার কার্যক্রম এর কোনো হদিস নেই। ফলে আশাহত হয়ে পড়েছেন কিবরিয়াসহ নিহত ও আহতদের পরিবার। কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া দাবি করেন, এই সরকারের কাছে একটি সুষ্ঠ বিচার এবং সুষ্ঠ তদন্ত আশা করেন না।
কিবরিয়াসহ ৫ হত্যা মামলার ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘এই ঘটনার পর আমরা পরিবার থেকে দাবি করেছি একটি সুষ্ঠ তদন্তের এবং একটি বিচারের জন্য। সেই বিচার এত বছরে হয়নি। কিন্তু কেন হয়নি দেশের মানুষ এটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে। দুই বছর বিএনপি, দুই বছর তত্ত্বাধয়াক সরকার এবং ১৪ বছর আওয়ামী লীগ সরকার কেন এই বিচার করতে পারিনি, কেন তদন্ত করতে চায় না। এটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে জনগণ। এতটুকু আপনাদের বলব- এই সরকার থাকাকালীন আমরা একটা সুষ্ঠু বিচার, সুষ্ঠু তদন্ত আশা করি না। পরবর্তী সরকারে কি হয় সেটা দেখা যাবে। তবে আমি মনে করি তদন্ত করার জন্য তখন একটা সুযোগ হবে। যেটা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হবে না।’
তবে মামলার বাদী ও হবিগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খান বলেন, ‘দীর্ঘসূত্রিতা বিভিন্ন আইনগত জটিলতার কারণেই হচ্ছিল। ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তো কোনো তদন্তই হচ্ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নানা আইনি জটিলতার কারণে মামলা দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হয়। আমি বাদী, তাড়াতাড়ি শেষ হোক চাই। আমি সরকারি দলের এমপি, সরকারের লোক এবং আমার লোক নিহত হয়েছেন। তাই আমি চাই এই মামলা কার্যক্রম দ্রুত শেষ হউক।
এ ব্যাপারে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট সরওয়ার আহমেদ চৌধুরী আব্দাল জানান, এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো অনেক মামলার আসামি থাকায় তাদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় প্রতিনিয়ত যেতে হয়। এ কারণে সবসময় উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় না। আর আসামির অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণও হয় না বলে বারবার তারিখ পেছাতে হয়। গত ১৫ জানুয়ারি সাক্ষীগ্রহণের তারিখ ছিল কিন্তু সাক্ষীরা আদালতে না উপস্থিত তারিখ পেছানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ মামলায় ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৭ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বাকীদের বিরূদ্বে সমন জারি করা হয়েছে। ৩২ আসামির মধ্যে ৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ১২ জন আসামি জামিনে আছেন। ১০ জন আসামি জেলহাজতে আর বাকি ৭ আসামি পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা অপর মামলাও ২০১৬ সালে হবিগঞ্জ থেকে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। কিবরিয়াসহ আরো ৪ জনকে গ্রেনেড হামলায় হত্যা মামলার মোট ৩২ জন আসামির মধ্যে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ তিনজনকে ইতিমধ্যে অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী এক জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন শাহ এএমএস কিবরিয়া। বক্তব্য শেষে মঞ্চ থেকে নেমে বৈদ্যের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটে আসলে তাদের উপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে কিবরিয়া ছাড়াও নিহত হন তার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী। পরে এ ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার একটিতে তিন দফা তদন্ত শেষে চার্জশিট গঠনের মাধ্যমে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালে। এরপর থেকেই চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ।
এসআইএইচ