পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দেশের রাজনীতি এখন উত্তপ্ত। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথের বিরোধীদল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নানান কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে।
অপরদিকে, সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো ঘোষণা দিয়ে রাজপথে রয়েছে। তারা বলছে, আন্দোলনের নামে বিএনপি যাতে আগুন সন্ত্রাস, জ্বালা-পোড়াও করতে না পারে, জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য তারা সতর্ক পাহারায় রয়েছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির এমন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে কিছুটা হলেও সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। বিএনপির সঙ্গে মাঠের রাজনীতিতে থাকা সমমনা দলের নেতারা বলছেন, কর্মসূচির বিপরীতে কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতি ও রাজপথকে আওয়ামী লীগই উত্তপ্ত করে তুলেছে।
বিএনপি ও সমমনা দলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, সমঝোতায় সমাধানের কোনো পথ নেই। সরকারের পতন ঘটাতে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। সে জন্য বিএনপি গত অক্টোবর থেকে একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। এসব কর্মসূচির মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে দলের নেতা-কর্মীকে চাঙা করা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাকি আর ১১ মাস। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতেও আগুন ঝড়ছে। অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচনের বছরে এসে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে। তারা বলছেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো-রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথেই সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালায়। এর খেসারত দিতে হয় সাধারণ মানুষকে।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করেই রাজনীতির মাঠে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির উত্তাপ শুরু হয়। বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ও নির্দেশে। তাদের এমন বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগও রাজপথে সক্রিয় হওয়ার ঘোষণা দেয়।
তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি ওসমমনা দলগুলোর যত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালিত হয়েছে তার প্রতিটিতে পাল্টা সভা-সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এদিকে বিএনপি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চার দিনব্যাপী রাজধানীতে পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
আগামী ২৮ জানুয়ারি বাড্ডা সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে মালিবাগ আবুল হোটেল পর্যন্ত; ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত; ৩১ জানুয়ারি গাবতলী থেকে শুরু হয়ে মাজার রোড হয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এবং ১ ফেব্রুয়ারি মুগদা থেকে শুরু করে মালিবাগ পর্যন্ত গিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আওয়ামী লীগের চরিত্রই হচ্ছে গায়ে পড়ে ঝগড়া করা। সন্ত্রাস এদের রাজনৈতিক ইতিহাস। দলটি এখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ক্ষমতা হারানোর ভয় তাদের এত বেশি দেখা দিয়েছে যে, এখন বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে থাকছে এটাই তা প্রমাণ করে।
রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু তাদের রাজপথে থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো-উসকানি দেওয়া এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেকে একটা সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়া। সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি করা। কিন্তু বিএনপি গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আন্দোলন করছে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে। কোনো ধরণের সহিংস উসকানি বা পাতা ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির দিনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ার মানেই হচ্ছে উসকানি দেওয়া। তারা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে চায়। দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকতে তাদের রাজপথে একইদিন কর্মসূচির নামে পাহারা দেওয়ার মানে হচ্ছে নিজেদের অবৈধ দখলদারিত্বকে পাহারা দেওয়া।
আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচির সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা আন্দোলন করি ওরা (আওয়ামী লীগ) নিজেদের পাহারা দেয়। তবে এই সরকারের সময় শেষ, এ বছরেই তাদের শেষ বছর।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিএনপির মূল দাবি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। রাজপথে কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি তাদের দাবি আদায়ের মধ্য দিয়ে সরকারকে বিদায় করবে।
অপরদিকে, রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়ে গত দুই মাস ধরে রাজধানীতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের। বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির দিনেই শান্তিপূর্ণ ও সতর্ক পাহারায় থেকে সভা সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, যদিও, কোনো পাল্টা কর্মসূচী নয়। বিএনপি মানেই আগুন সন্ত্রাস, তাদের কর্মসূচি মানেই জ্বালাও-পোড়াও, জনমনে আতংক। তাই জানমালের নিরাপত্তায় আগামী নির্বাচন পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে রাজনীতির মাঠে সতর্ক থাকবে আওয়ামী লীগ।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আবার রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সতর্ক অবস্থানে থাকার কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, এর আগে কর্মসূচির নামে বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও করেছে। পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে। তারা কর্মসূচি দিলে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়। তাই ক্ষমতাসীন দল হিসেবে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি নেতৃত্ব বলছে রাজপথে ফয়সালার কথা। অপরদিকে ক্ষমতাসীনরা বলছে, সংবিধানে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো বিধান নেই। সংবিধানের বাইরে সরকার কোনোভাবেই যাবে না।
তবে রাজনীতির মাঠ যতই উত্তপ্ত হোক না কেন, সাধারণ জনগণ চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। একইভাবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ হয়-এমনটাই দাবি সাধারণ মানুষের বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এনএইচবি/এমএমএ/