নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে আওয়ামী লীগের বছর শেষ
বিদায়ের সন্নিকটে ২০২২ সাল। সবকিছু ছাড়িয়ে বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল দেশের রাজনীতি। তবে দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে চলতি বছরে সংগঠন গোছাতে নানা পর্যায়ের সম্মেলন ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বছরব্যাপী ব্যস্ত সময় পার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
যদিও শুরুতে কিছুটা নীবর ছিল দলটির কার্যক্রম। কিন্তু রাজপথের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি যখন সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সরব হয়ে উঠে তখনেই রাজনীতির মাঠে নিজেদের সরব উপস্থিতির জানান দিয়েছে। এমনকি আগস্ট মাসে জাতীয় শোকের মাসেও দলটির নেতারা অনেকটাই বাধ্য হয়ে শোক কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। আর শেষ সময়ে দলটির ২২তম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। কর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে এক ধরনের রাজনৈতিক উদ্দীপনা।
বিশ্বস্যাপী করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সভা-সমাবেশ এড়িয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে চলতি বছরের শেষ দিকে বেশকয়েকটি বিভাগীয় শহরে জনসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে যশোর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মহাসমাবেশে নৌকা প্রতীকে আবারও ভোট চেয়েছেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নেন শেখ হাসিনা।
চলতি বছরে সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে মহানগর, জেলা, উপজেলা ও থানা-পর্যায়ের সম্মেলন করেছে দলটি দায়িত্বশীল নেতারা। তবে দেশে বিদেশে বিভিন্ন ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল আওয়ামী লীগ।
ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনআওয়ামী লীগের সর্বশেষ যে দুটি জাতীয় সম্মেলন হয়েছে, সে সময়টায় দেশের রাজনীতির মাঠ ছিল অনেকটাই শান্ত বা স্থিতিশীল। তখনকার নতুন কমিটিকে দায়িত্ব নিয়েই ভোটের মাঠে দৌড়াতে হয়নি। মোকাবিলা করতে হয়নি বিরোধী দলের আন্দোলন-কর্মসূচি। সেদিক থেকে এবারের সম্মেলনটা হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। এক বছর পরই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে নির্বাচনমুখী রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পর বিরোধী দলও কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সক্রিয়।
এমন একটা অবস্থার মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৪ ডিসেম্বর শনিবার। নতুন গঠিত কমিটিকে দৌড়াতে হবে নির্বাচনের পথে। একইসঙ্গে বিরোধী দলের আন্দোলনও মোকাবিলা করতে হবে। ফলে নির্বাচন ও আন্দোলন মোকাবিলার লক্ষ্য সামনে রেখেই এবারের সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন ও আন্দোলন মাথায় রেখেই বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত তৃণমূলের নেতাদের সম্মেলনের আগ দিয়ে সাধারণ ক্ষমাও ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনে খুব একটা পরিবর্তন না করেই স্বপদেই রাখা দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের।
আওয়ামী লীগের জন্ম ও পথচলা
১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে জন্ম নেয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। জন্মের পর থেকে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা অর্জনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগের নাম। ১৯৫৫ সালের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সব ধর্ম, বর্ণের প্রতিনিধি হিসেবে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ এই ধাপগুলো পেরিয়ে ১৯৭৬ সালে পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে পুনর্বহাল হয়। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা, সামরিক শাসন, পুনরায় ২১ বছর পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণ নানা চড়াই-উতরাই পার করেছে দলটি। ১৪ বছর ধরে টানা ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ।
২০২২ আওয়ামী লীগের সাফল্যের বছর
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ২০২২ সাল করোনার সংকট মোকাবিলার বছর হিসেবে নিতে পারি। করোনা সংকটের পর অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব সৃষ্টি হয়েছিল, পরবর্তীকালে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেটি আরও গভীর হয়। তারপরও ২০২২ সাল শেখ হাসিনার সরকারের একটি অনবদ্য ও সাফল্যের বছর হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। কারণ, এ বছরই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় চালু হচ্ছে মেট্রোরেল।
নেতারা বলছেন, চলতি মাসের ১০ ডিসেম্বর বিএনপি একটি ষড়যন্ত্র করেছিল। জনগণ তা সফল করতে দেয়নি। বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান থেকে সব উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটা বাংলাদেশের অর্জন। ২০২২ সালে বিএনপিকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল
করোনার কারণে গত দুই বছর জেলা, উপজেলা কিংবা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন, বর্ধিত সভা ও যৌথ সভা করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে চলতি বছর ঢাকা, ফরিদপুর, দিনাজপুর, ভোলা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, বরগুনা, কুমিল্লা মহানগর, চুয়াডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, কুমিল্লা দক্ষিণ, জামালপুর, নোয়াখালী, কক্সবাজার, মাগুরা, নওগাঁ, নাটোর, মেহেরপুর, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ ৩৯টি সাংগঠনিক জেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া, শতাধিক উপজেলা ও বেশ কয়েকটি মহানগরের সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়। তৃণমূলের এসব সম্মেলন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সারাদেশে বিএনপির যেকোনো কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে মহড়া দিয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
দীর্ঘদিন পর বিএনপির কোনো কর্মসূচি ঘিরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মধ্যেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় দলটির সভাপতি থেকে শুরু করে কেন্দ্রের অধিকাংশ নেতার বক্তব্যে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেন। তার এমন নির্দেশনার পর রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন।
তিন মহাসমাবেশ
চলতি বছরের ২৪ নভেম্বর যশোর, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে মহাসমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। করোনা-পরবর্তী সময়ে যশোরে জনসভার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিটি জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
১০ ডিসেম্বর ঘিরে রাজনীতির মাঠ
চলতি মাসের ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে ছিল রাজনৈতিক উত্তেজনা। সেদিন ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সমাবেশের স্থান নির্ধারণ নিয়ে শুরু থেকেই চলছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার যুক্তি-তর্ক। শুরুতে সরকার বিএনপিকে সমাবেশের জন্য ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেয়। কিন্তু সেখানে সমাবেশ করতে রাজি হয়নি বিএনপি। তারা (বিএনপি) নয়াপল্টনের রাস্তায় সমাবেশ করতে চেয়েছিল। সমাবেশের চার দিন আগেই বিএনপির নয়াপল্টন অফিসে সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তখন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত হন।এরপর সরকারের কাছে নতুন স্থানের আবেদন করে বিএনপি। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গোলাপবাগ মাঠে অনুমতি পায় দলটি। সেখানেই ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্রলীগের ৩০ তম সম্মেলন
৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের দিন নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে দুই সপ্তাহের মধ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মাহনগর (উত্তর-দক্ষিণ) ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়।
মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন গত ২৬ নভেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান মেহের আফরোজ চুমকি এবং সাধারণ সম্পাদক হন শবনম জাহান শিলা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী সভা
আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণার পর সভাপতিমণ্ডলীর প্রথম সভা ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এটি আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত নতুন কমিটির প্রথম সভা। সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিদ্রোহীদের কাছে দলের মনোনীতরা কোণঠাসা
চলতি বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিদ্রোহীদের দাপট। এ নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবির অন্যতম কারণ ছিল বিদ্রোহীদের দাপট আর তৃণমূলের পাঠানো তালিকায় অনিয়ম। সব মিলিয়ে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছর। সেই নির্বাচন নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় ছিল আওয়ামী লীগ।
বিনা ভোটে বিজয়ীদের নিয়ে অস্বস্তি
চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর সারাদেশে দলীয় প্রতীক নৌকা ছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তবে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন আদালত কর্তৃক স্থগিত করা হয়। ভোলা ও ফেনী জেলার সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন প্রার্থীরা। ২৬ জেলায় চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও নারীদের জন্য সংরক্ষিত পদে ১৮ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৬৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা মনে করি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। নির্ধারিত সময়েই দলের কাউন্সিল হচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃণমূল সুসংগঠিত হচ্ছে। ২০৪১ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, বলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন।
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে থিম সং
দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পথচলা দীর্ঘ ৭৩ বছর। শনিবার ২৪ ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে প্রথমবারের মতো তৈরি করা হয় বিশেষ থিম সং। যার শিরোনাম ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। এটি রচনা করেছেন গীতিকবি জুলফিকার রাসেল। গানটির সুর-সংগীত করেছেন পাভেল আরিন। কণ্ঠ দিয়েছেন পান্থ কানাই, চন্দনা মজুমদার, দিলশাদ নাহার কণা ও মাশা ইসলাম। এতে মোহনবীণা বাজিয়েছেন গ্র্যামিজয়ী ভারতের কিংবদন্তি শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত বিশ্ব মোহন ভাট।ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার পরিকল্পনা ও ইয়াসির মাহমুদ খানের সমন্বয়ে গানটির ভিডিও নির্মাণ করেছেন ইশতিয়াক মাহমুদ।
আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মাশরাফি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। গত সোমবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতিমণ্ডলীর প্রথম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানিয়েছেন। গত শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও নিজ পদে বহাল আছেন। ওই দিন ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির ৪৮টি পদ ঘোষণা করা হয়।
জাতীয় সম্মেলনে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানায় আওয়ামী লীগগত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয় বিএনপির তিনজন নেতাকে। যদিও কোনো নেতাই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দেননি। বরং ওইদিন আমন্ত্রিত নেতারা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকার বাইরে অবস্থান করতে দেখা গেছে। কেননা দেশের রাজনীতিতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে মুখোমুখি বিপরীত অবস্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধীদল বিএনপি।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন আগামী দ্বাদশ নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকে দলীয় সরকারের অধীন। কিন্তু বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এই নিয়ে উভয় দলের নেতাদের মধ্যে চলছে এক ধরনের কথার যুদ্ধ।আওয়ামী লীগের কমিটিতে বামপন্থী নেতা কমছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) বাম ঘরানার বিভিন্ন দল ছেড়ে অনেক নেতা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। এমন অনেক নেতা এর আগে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীতে ছিলেন। কিন্তু এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাবেক বামপন্থী নেতার সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। গত শনিবার যে ৪৮ পদে নেতা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে সাবেক বামপন্থী নেতা আছেন একজন, তিনি হলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী। নুরুল ইসলাম নাহিদ ও আবদুল মান্নান খানকে সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়েছে। মান্নান খান দপ্তর সম্পাদক থেকে সভাপতিমণ্ডলীতে এসেছিলেন।
নাহিদ সভাপতিমণ্ডলীর আগে দলের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে নূহ উল আলম লেনিন সম্পাদকমণ্ডলীর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে সভাপতিমণ্ডলীতে এসেছিলেন। তাকে ২০১৬ সালে বাদ দেওয়া হয়। এখন তিনি দলের কোনো পদে নেই। জাসদের একসময়ের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর তার আর দলে স্থান হয়নি। পরে তিনি আলাদা দল করেছেন। বামপন্থী বিভিন্ন দল নিয়ে ২০০৪ সালে ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪-দলীয় জোট গঠন করে আওয়ামী লীগ।
একসঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে। এরপর টানা তিন মেয়াদে সরকার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া মন্ত্রী হয়েছেন। ২০১৮ সালের পর শরিকদের আর কেউ মন্ত্রিসভায় নেই। মতিয়া চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম নাহিদও মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।
ক্ষমা চাইলেন ডা. মুরাদ হাসান
অডিও কেলেঙ্কারিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলীয় পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসান আবারও জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক পদ ফিরে পেতে সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে তিনি লিখিত আকারে এ আবেদন করেন। তিনি জামালপুর-৪ আসনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত সংসদ সদস্য। কিন্তু গত বছরের ৭ ডিসেম্বর তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। একইদিন তাকে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আওয়ামী লীগ ২০২২ সাল করোনার সংকট মোকাবিলার বছর হিসেবে নিতে পারি। করোনা সংকটের পর অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব সৃষ্টি হয়েছিল, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেটি আরও গভীর হয়। তারপরও ২০২২ সাল শেখ হাসিনার সরকারের একটি অনবদ্য ও সাফল্যের বছর হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।
বিদায়ী বছরে (২০২২ সাল) পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে, কর্ণফুলী টানেল হয়েছে, ১০০টি ব্রিজ হয়েছে, অর্থনৈতিক জোন হয়েছে। বিশেষ এসব জোনে প্রায় এক কোটি মানুষের চাকরি হবে। এ বছরই মেট্রোরেলের উদ্বোধন হলো। এটা ছিল আওয়ামী লীগ তথা এ সরকারের বড় চমক।
এমএইচ/এমএমএ/