‘রাজনীতি করলে ক্যারিয়ার নষ্ট হয় না’
রাজনীতি করলে ক্যারিয়ার নষ্ট হবে এমনটি বিশ্বাস করেন না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করলে ক্যারিয়ার নষ্ট হবে; এটি আমি বিশ্বাস করি না। রাজনীতিও করা যায়, ক্যারিয়ারও গড়ে তোলা যায়। যে পারে, সে সব পারে। সেই কমিটমেন্ট থাকতে হবে, সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের অপর নাম, আপসহীন লড়াই। জীবন একটি চ্যালেঞ্জ, জীবনকে যে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করবে, সে একদিন না একদিন জয়ী হবেই।’
রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক-কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে আমিই প্রথম টানা তৃতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯৬ থেকে ২০০১, ২০১১ থেকে ২০২২ এই ১৬ বছর মন্ত্রী। অনেকের ভাগ্যে জোটেনি! সময়ের আগে কিছুই হবে না। সময়ও এসেছে, ভাগ্য অনুকূলে এসেছে তখনই তা হয়েছি। যেমন সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। আমার মতন গ্রাম থেকে উঠে আসা শিক্ষকের ছেলের মন্ত্রিত্ব ১৬ বছর! রাজনীতি করি সকল ইচ্ছা পূরণ হয়ে গেছে। আর কী চাই? সব চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হয়ে গেছে, আর কিছু চাই না।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জহুরুল হক হলে শুয়ে ছিলাম। শেষ রাতে ঘুম চলে এসেছিল, ভোরে হঠাৎ কানে এলো শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। তারপর থেকে আমার জয় বাংলা বলা নিষিদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নিষিদ্ধ, বিজয় দিবসে শেখ মুজিবুর রহমান নিষিদ্ধ, স্বাধীনতা দিবসের স্বাধীনতার স্থপতি নিষিদ্ধ, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করা হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে চোখের সামনে সেই স্মৃতিগুলো ভাসতে থাকে। মায়াবী স্মৃতি বিজড়িত এক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলের রিডিং রুমে এক ঘটনা টেনে এনে তিনি বলেন, একদিন সকাল ৮টায় নাস্তার পর তৎকালীন সময়ে দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকাটি নিয়ে অনেকেই টানাটানি করছে। ১ম পাতায় একটি হেডলাইন ‘আমার এই দেশেতে চলো আমার এই দেশেতে মরি’, এটি বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগের রাতে কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেন্ট্রাল জেল থেকে, তখন কুয়াশাস্নাত এক সকালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ছিল, এমন সময় তিনি এ কথাটি বলেন। তারপর থেকে আরও বেশি রাজনীতিতে সক্রিয় হলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন দেশের এ প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ। পড়াশোনা প্রসঙ্গে বলেন, ছাত্র হিসেবে খারাপ ছিলাম না। আমি এসএসসি ও এইচএসসি মানবিক থেকে প্রথম বিভাগ পেয়েছি। এইচএসসিতে কুমিল্লা বোর্ডে মেধাতালিকায় ছিলাম।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অধ্যয়নকালে পড়াশোনা জীবনে এক বছর মাত্র ব্রেক অব স্টাডি হয়েছিল। যেকোনো কারণে সেসময় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। পরে সেই পরীক্ষা দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। স্বাধীনতার পরও কিছুদিন ছিলাম।
ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসা নতুন নেতৃত্বদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতিকে দুর্নামের হাওয়া থেকে বের করে আনতে চাই, ঐতিহ্যবাহী রাজনীতির যে সুনামের ধারা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। ছাত্র নেতাদের বলবো ছাত্র রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। আকর্ষণীয় করে তুলতে লিডারকে স্মার্ট হতে হবে। স্মার্ট মানে সুন্দর পোশাক না, সাধারণ পোশাক পরে স্মার্ট থাকা যায়। স্মার্টনেসটা চেতনা ও মন উভয়ে থাকলে তা এমনিতে বাহিরে প্রতিফলিত হবে। এটাই রিয়ালিটি!
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই শুনি না, যখন শুনি ভর্তি বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য। অনেক আশা নিয়ে নেত্রী ছাত্রলীগের নেতাদের বাছাই করেছে। তাদের কাছে আমার একটাই চাওয়া ছাত্র রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা। এটা করতে পারলে তোমরা সফল। আর এটা করতে না পারলে বিষয়গুলো আবার আমাদের হতাশ করবে।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ ও মহাসচিব মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার, ঢাকা ইউনিভার্সিটি পলিটিক্যাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুর রহমানসহ বিভাগের অ্যালামনাইরা উপস্থিত ছিলেন।
এমএমএ/