আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন কাল
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল শনিবার (২৪ ডিসেম্বর)। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সম্মেলন হবে। সম্মেলনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। এই বিষয় সামনে রেখেই সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলন হবে সাদামাটা।
সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপর নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত এলইডি মনিটর থাকবে, যেখানে সম্মেলনের কার্যক্রম দেখানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী নিজেকে দলীয় সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য গত দুই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তার এ আহ্বানে সাড়া দেননি। সারা দেশের নেতাকর্মীরা মনে করেন, দলে শেখ হাসিনার বিকল্প এখনো গড়ে উঠেনি। সাংগঠনিক দক্ষতা আর মেধায় আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি, একই সঙ্গে হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীদের ঐক্যের প্রতীক।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসবেন। তারপর আধঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। পরে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করবেন দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।
সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। আওয়ামী লীগের এবারের জাতীয় সম্মেলনে সারা দেশ থেকে প্রায় সাত হাজার কাউন্সিলর ও লক্ষাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেবেন। উদ্বোধনী পর্বের পর বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের পদপ্রত্যাশীদের উৎকণ্ঠার শেষ হচ্ছে আগামীকাল। সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে আলোচনা বেশি হলেও অন্য পদপ্রত্যাশী নেতারা বসে নেই। এর মধ্যে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা আগামী কমিটিতেও টিকে থাকতে যেমন চেষ্টা করছেন, কমিটির বাইরে থাকা নেতারাও জোর চেষ্টায় আছেন কোনো না কোনো পদ পাওয়ার জন্য। দলের একটি অংশ চায়, বর্তমান কমিটিতে বড় পরিবর্তন না হোক। কারণ হিসেবে তাঁরা বিরোধীদের আন্দোলন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ সামনে আনছেন। অন্য পক্ষ বলছে, সাধারণ সম্পাদকসহ দৈনন্দিন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত নেতারা দীর্ঘদিন একই পদে আছেন। পরিবর্তন এলে দলীয় কর্মকাণ্ডে নতুন চিন্তাভাবনা যোগ হবে। অবশ্য তাঁরা প্রকাশ্যে পরিবর্তনের বিষয়ে কথা বলছেন না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সবার দৃষ্টি দলের সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে। এ পদে প্রার্থীদের অনেকের ইচ্ছা থাকতে পারে। অন্তত গণতান্ত্রিক দল হিসেবে। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, এই পদে অন্তত ১০ জন প্রার্থী আছেন। কে হবেন, এটা নেত্রীর ইচ্ছা এবং কাউন্সিলরদের মতামতের ওপর নির্ভর করছে। সবকিছু প্রতিফলন ঘটবে দ্বিতীয় অধিবেশনে। কাজেই আমি কারও নাম বলতে পারব না।’
অবশ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এবারের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাবও একই কি না, সেটা পরিষ্কার নয়। এখনো তিনি সাধারণ সম্পাদক কিংবা অন্যান্য পদে পরিবর্তন, সংযোজন-বিয়োজনের বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি। পরিবর্তন চান এমন নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগের সব সম্মেলনেই কমবেশি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়।
বর্তমান কমিটির বিদায়ী সভা গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা মুলতবি করে কাল শনিবার নেতৃত্ব নির্বাচনের দ্বিতীয় অধিবেশনে পুনরায় সভা বসবে।
গণভবনসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকার ও দলের নেতৃত্ব আলাদা করার প্রক্রিয়া গত দুই সম্মেলন থেকেই শুরু হয়েছে। এবার সাধারণ সম্পাদককে সার্বক্ষণিক সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত রাখার ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে একটি নজির গড়তে পারেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাইরে রাখা হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ পদধারী দলীয় নেতাদেরও।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আমরা দল থেকে সরকারকে আলাদা করার নীতি নিয়েছি। দল দলের মতো চলবে, সরকার সরকারের মতো থাকবে। বর্তমান কমিটিতে যতটা সম্ভব এ নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন ওবায়দুল কাদের
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা করে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনে নিয়মিত সম্মেলন করে, অন্য কোনো দল আছে কি-না জানা নেই। জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা দেশের মানুষকে স্বতঃস্ফূর্ত এ বার্তা দিতে চাই, আমরা জনগণের পাশে আছি, পাশে থাকবো। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করব।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ রুলিং পার্টি, একাধারে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় কিছু সমস্যা থাকে। যেমন- যিনি নেতৃত্বে আছেন তিনি থাকতে চান আবার নতুন কেউ পদে আসার আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। দুই মিলে অনেক সময় কনফ্লিক্ট তৈরি হয়ে যায়। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা হয়।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিএনপির তিন নেতাকে আমন্ত্রণ
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে বিএনপির তিন নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ পাওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান।
শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেয় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। এসময় বিএনপির পক্ষে দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালে প্রিন্স আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেন। এ সময় ইমরান সালেহ প্রিন্স আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের বলেন, আমাদের সব নেতারা কারাগারে বন্দি। আমরা কীভাবে সম্মেলনে যাব? জবাবে সায়েম খান বলেন এটা সরকারের ব্যাপার। আমরা দলের পক্ষ থেকে এসেছি। আমরা আশা করি, আপনাদের প্রতিনিধি দল সম্মেলনে যাবেন।
নেতা-কর্মীদের ট্রাফিক নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন চলাকালে রাজধানীতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক নির্দেশনা মেনে চলতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় উদ্বোধনী অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য, জেলা-মহানগরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ-সংলগ্ন বা ‘শিখা চিরন্তন’ গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে কোনো প্রকার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। তাই আগত সবার ব্যক্তিগত গাড়ি ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে পার্কিং করতে হবে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সব কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাংলা একাডেমি, রমনা কালী মন্দির, টিএসসি ও চারুকলা অনুষদ-সংলগ্ন গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকেন: ডিএমপি কমিশনার
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। তাই আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আগামীকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগদান করবেন, সারাদেশ থেকে লক্ষাধিক নেতাকর্মী আসবে। প্রধানমন্ত্রী সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। ইতোপূর্বে অনেকবার তার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে, আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। এজন্য আমরা তার নিরাপত্তাটাকে সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে থাকি। এক কথায় আমরা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি যাতে আওয়ামী লীগ উৎসবমুখর পরিবেশে কাউন্সিল সম্পন্ন করতে পারে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রাজধানীর রোজ গার্ডেনে দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জন্ম। ঐতিহ্যবাহী দলটির বয়স ৭৩ বছর। এ পর্যন্ত দলটির ২১টি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলটির ২১তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
এমএইচ/এএস