নয়াপল্টনে সংঘর্ষের দায় বিএনপির: তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অভিযোগ করে বলেছেন, নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের দায় বিএনপির। পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে পেছন থেকে ও তার দেহরক্ষীকে আঘাত করা হয়। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, সংঘর্ষে প্রাণ হারানো মকবুল হোসেন বিএনপির কেউ নয়। তার মৃত্যু হয়েছে ককটেল বিস্ফোরণে।
১০ ডিসেম্বর বিএনপির ডাকা সমাবেশের স্থান নিয়ে বিরোধের মধ্যেই বুধবার (৭ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই বলছিলাম, বিএনপি সমাবেশ নয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। বিএনপি সমাবেশের ডাক দিয়েছে ১০ ডিসেম্বর, গতকাল ছিল ৭ ডিসেম্বর। এই দিনই তারা দুপুর থেকে নয়াপল্টনে জমায়েত হতে থাকে। এতে নয়াপল্টনের একটি জায়গা যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ জানানো হয়, তারা যেন একটি লেন ছেড়ে দেয়। কিন্তু তারা সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে। এরপর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মতিঝিলের ডিসি হায়াত নিজে যান এবং তাদের অনুরোধ করেন একটি লেন যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি যখন এ অনুরোধ জানাচ্ছিলেন তখন তাকে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। তার দেহরক্ষীকেও দা দিয়ে আঘাত করা হয়। এই থেকে শুরু। ডিসি হায়াত, তার দেহরক্ষীসহ পুলিশের ৮ সদস্য এখন হাসপাতালে ভর্তি। মোট ৩৫ পুলিশ আহত হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের উপর ইট নিক্ষেপ ও হামলা চালানো হলে পুলিশ বাধ্য হয়ে টিয়ার গ্যাস ছুড়তে বাধ্য হয়। পুলিশ যখন বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে তখন সেখানে গিয়ে অবিস্ফোরিত ১৫টি ককটেল, ২ লাখ পানির বোতল, ১৬০ বস্তা চাল, রান্না করা খিচুড়ি পায়। ২ লাখ নগদ টাকাও সেখানে পাওয়া যায়।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাদের বারবারই বলা হয়েছে মাঠ ব্যবহার করার জন্য। জনসভা হয় মাঠে। তারা মাঠ ব্যবহার করেই সারা দেশে ৯টি সমাবেশ করেছে। সরকার তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে, পুলিশ নিরাপত্তা দিয়েছে। এজন্যই তারা অত্যন্ত নির্বিঘ্নে সমাবেশগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে করেছে।’
সংঘর্ষে প্রাণহানি নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারা সেখানে অনেকগুলো ককটেল বিস্ফোরণ করেছে। একজন সাধারণ নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আজ পাওয়া যাবে। পুলিশ ধারণা করছে সে ককটেল বিস্ফোরণে মারা গেছে। এভাবেই তারা দেশে বিশৃঙ্খলা করতে শুরু করেছে।’
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি নেতা যারা বড় গলায় কথা বলছে, তারা সবাই অগ্নিসন্ত্রাস ঘটানোর জন্য অর্থদাতা ও হুকুমদাতা হিসেবে বিভিন্ন মামলার আসামি। রিজভী সাহেব গতকাল মামলার ওয়ারেন্ট নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। আরও বেশ কয়েকজন ওয়ারেন্ট নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশের নাকের ডগায় যখন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ঘুরে বেড়ায়, তখন তো পুলিশের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। যখন কোনো নেতা তাজা ককটেল নিয়ে কার্যালয়ের ভেতরে বসে থাকে, তখন সেই নেতার বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হয়। সরকার সেই ব্যবস্থাই নিয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না চাইলে বিএনপি কোথায় জমায়েত হতে পারে, সে বিষয়ে একাধিক বিকল্প স্থান দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, তারা সব সময় বলে এসেছে, ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ তারা করবে। নয়াপল্টনে ১০-২০ হাজার মানুষ ধরে। তারা যাতে এই সমাবেশ করতে পারে এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হয়। যখন তারা এখানে যেতে অনীহা প্রকাশ করে তখন মিরপুরের পল্লবী মাঠ, কালশী মাঠ, ইজতেমা মাঠ, বাণিজ্যমেলার মাঠ, এগুলো তাদের ব্যবহার করতে বলা হয়। কিন্তু তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশ্যে নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দেয়।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় বলে এসেছি বিশৃঙ্খলা তৈরির উদ্দেশ্যেই বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশের জন্য গোঁ ধরেছে। অথচ তাদের বড় মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং বিকল্প অনেকগুলো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কোনোটাই তারা নিতে চায়নি।
তিনি আরও বলেন, তারা কোনো মাঠে সমাবেশ করতে চাইলে সরকার তাদের পরিপূর্ণ সহযোগিতা করত, নিরাপত্তা দেওয়া হতো। তারা সেটি না করে পরিকল্পিতভাবে গতকালের ঘটনা ঘটিয়েছে। এটার জন্য বিএনপির নেতারাই দায়ী। তারা গত কিছুদিন ধরে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা শান্তি চায় না বলেই গতকাল তাণ্ডব ঘটিয়েছে।
এনএইচবি/এসজি