যুবলীগের সমাবেশ যেন শক্তির মহড়া!
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব মহাসমাবেশ আয়োজন করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা লাখ লাখ নেতা-কর্মীরা এতে অংশ গ্রহণ করে।
শুধু যুবলীগ নয়! আওয়ামীলীগ ও এর অন্যান্য ভাতৃপ্রতিম অঙ্গ সঙগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদেরও ছিল সরব উপস্থিতি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬৪ জেলা থেকে মহাসমাবেশে অন্তত ১০ লাখ নেতাকর্মীর সমাগমকে কেন্দ্র করে আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও, কত নেতা-কর্মী এতে অংশ নিয়েছিল সেই সংখ্যা জানা যায়নি।
যুবলীগের সমাবেশে আসা নয়ন ইসলাম নামে এক যুবলীগ কর্মীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দেশ আওয়ামীলীগ সরকারের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এলে তারা দেশ বিক্রি করে দেবে।
এসময় নয়নের সঙ্গের আরও কয়েকজন কথা বলতে এগিয়ে আসেন। তারা বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় এলে দেশ আরও দ্বিগুণ উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। কোন ভাবেই সেই উন্নতি বাধাগ্রস্থ করা যাবে না। স্বাধীনতা বিরোধী চক্রকে রুখে দিতে এবং আওয়ামীলীগ সরকারকে আবার ক্ষমতায় বসাতে যুবলীগ নির্বাচন অবধি মাঠে সম্মুখে থেকে তাদের প্রতিহত করবে।
যুবলীগের ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে জনসমুদ্রে রূপ নেওয়াতে সাধুবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যুবলীগ কথা রেখেছে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে দুর্নীতি, দুঃশাসন ও লুটপাটের বিরুদ্ধে। খেলা হবে বিএনপির বিরুদ্ধে, আগুন সন্ত্রাস, ভোটচুরি ও ভুয়া ভোটার কেন্দ্রে আনার বিরুদ্ধে। আমরা ঋণ নিয়েছি ঘি খাওয়ার জন্য নয়। বিএনপি যদি আরেকবার ক্ষমতায় আসে সব খাবে, বিদেশি ঋণ গিলে খাবে, গণতন্ত্র গিলে খাবে, সুযোগ পেলে বাংলাদেশও গিলে খাবে। সবাই তৈরি হয়ে যান, এবার জবাব দেওয়া হবে।
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামশ পরশ বলেন, মির্জা ফখরুল বরিশালে গিয়েছেন প্লেনে করে। কারণ শেখ হাসিনার তৈরি পদ্মা সেতু দিয়ে তিনি যেতে লজ্জা পেয়েছেন। পদ্মা সেতু দিয়ে যেতে লজ্জা পাবেন না। হাসিনার উন্নয়ন সবার জন্য। শেখ হাসিনার উন্নয়ন ব্যবহার করতে আপনারা বাধ্য। সড়ক পথে গেলে সেটাও শেখ হাসিনার উন্নয়ন। শেখ হাসিনার উন্নয়ন ছাড়া আর কিছু নেই। বর্তমান দেশটা বৈশ্বিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খুব শিগগির কাটিয়ে উঠবে।
এসময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, বিএনপি হুমকি দেয় ১০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার পতন ঘটবে। আওয়ামী লীগ নাকি পালিয়ে যাবে। খালেদা হবে প্রধানমন্ত্রী, দেশে আসবে তারেক। আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার মতো কোনো রাজনৈতিক দল না। পালানো দল হলো বিএনপি। বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এরাই এখন গণতন্ত্রের কথা বলছে। কীসের গণতন্ত্র? মানুষ মারার গণতন্ত্র, আগুন সন্ত্রাসের গণতন্ত্র। এরা পাকিস্তানের এজেন্ট। এরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এরা পালিয়ে পাকিস্তানে যাবে।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আআওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বিএনপির রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। আমরা ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত নিয়েছিলাম। কোভিড টিকা কিনেছি, বিনিয়োগ করেছি, বিমান কিনেছি, পায়রা বন্দর নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। এভাবে রিজার্ভ থেকে খরচ হয়েছে। ঘরের টাকা ঘরে থাকছে। দেশের জনগণের উন্নয়নে এই টাকা ব্যবহার করছি। আমাদের এই অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলা ২টা ৪৩ মিনিটে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এর আগে যুবলীগের সমাবেশ উদ্ভোধন করেন তিনি। বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে যুবলীগের সমাবেশ উদ্ভোধন করা হয়। এসময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামশ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে দেশের যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের এই দিনে যাত্রা শুরু হয় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের।
/এএস