সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতা-কর্মীর ঢল
সংগঠনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মহাসমাবেশে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছে। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হয়েছেন সারাদেশ থেকে আসা নেতা-কর্মীরা। মাঠেই জুম্মা নামাজ আদায় করা হয়েছে।
এই মহাসমাবেশে ১০ লাখেরও বেশি লোকের সমাগম হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ নেতারা।
যদিও শুক্রবার (১১ নভেম্বর) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রতিষ্ঠার ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর যুব সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এদিকে দুপুর ১টার দিকে সমাবেশ মঞ্চের কাছাকাছি যেতে বাধা দেওয়ায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের একে অপরের মধ্যে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য (পুলিশ) আহত হয়েছেন। চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
মূল মঞ্চের বাইরে পুরো উদ্যান মুখর স্লোগানে স্লোগানে। শুধু যুবলীগ নয়, আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরও সরব উপস্থিতি রয়েছে। জানা যায়, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হয়েছেন।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। জানা যায়, সমাবেশ স্থল নিরাপদ রাখতে গোয়েন্দা নজরদারিসহ রাজধানীতে বাড়ানো হয়েছে পুলিশি নজরদারি। সমাবেশ স্থল ও আশেপাশের এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে ২৯ পয়েন্টে ৩ হাজার ৫০০ পোশাকধারী প্রোটেকশন ফোর্স থাকছে নিরাপত্তায়। এর বাইরে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, র্যাব, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে, বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ ছাড়া আরও জানা যায়, সমাবেশের বাইরে ২৯টি পয়েন্ট ও নয়টি প্রবেশ গেটে প্রোটেকশনের জন্য ২ হাজার ৫১৭ জন পোশাকধারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আর সমাবেশের ভেতরের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রোটেকশনের জন্য ৯৮৩ জন পোশাকধারী সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আআইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য ফোর্স তো রয়েছেই।
২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসে নতুন নেতৃত্বের হাতে সংগঠনের পরিচালনার ভার তুলে দেওয়া হয়েছিল। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ ফজলে শামস্ পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাইনুল হোসেন খান নিখিল দায়িত্ব পান।
এদিকে যুব মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বর্ণাঢ্য সাজে সেজেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। উদ্যানের লেকের পূর্ব প্রান্তে বিশাল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। গোটা উদ্যানকে রং-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন, বেলুনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন এলাকার সড়কগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পোস্টার ও ব্যানার-ফেস্টুন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক শেখ ফজলুল হক মনি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এর জন্ম হয়।
আজকের যুব মহাসমাবেশের পর থেকে রাজপথ যুবলীগের দখলে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে যুবলীগ। সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, এই যুব মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এই মহাসমাবেশের মধ্যে দিয়ে রচিত হবে ইস্পাত কঠিন ভিত্তি, যা স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াতের কাছে অজেয় ও দুর্লঙ্ঘনীয়। আজকের পর থেকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবে না যুবসমাজ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একটি ভিআইপি গেট ছাড়া অন্য পাঁচটি প্রবেশপথ দিয়ে সারাদেশের নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে আসবেন। টিএসসির রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন গেট, মেট্রোরেল স্টেশন গেট, রমনা কালীমন্দির গেট, মেট্রোরেল গেট-১ (মাজার গেটের পরের গেট) এবং মাজার গেট- এই পাঁচটি গেটের কোনটি দিয়ে কোন জেলা ও মহানগর নেতারা প্রবেশ করবেন, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কোন জেলার নেতাকর্মীর গাড়ি কোন রুট দিয়ে সমাবেশস্থলে আসবে, তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মহাসমাবেশস্থলে সুপেয় পানি ও পর্যাপ্ত সংখ্যক মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
নেতারা বলছেন, মহাসমাবেশে ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট থেকে কয়েক লাখ নেতাকর্মীর সমাগম ঘটবে। এ কারণে মহাসমাবেশের প্রস্তুতি চলেছে ১৫ দিন আগে থেকেই। প্রায় প্রতিদিন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগ এবং এর অন্তর্গত বিভিন্ন ইউনিট দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা, কর্মিসভা ও বর্ধিত সভা করেছে। প্রস্তুতি সভা হয়েছে দেশের সব জেলা-উপজেলায়ও।
এদিকে মহাসমাবেশ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতির কারণে পুলিশ, র্যাব, আনসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্যসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
এজেড/এমএইচ/এসএন