প্রস্তুত যুবলীগ, সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ শুক্রবার
৪৯ বছর পেরিয়ে ৫০ বছরে পা রাখছে আওয়ামী লীগের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যুবসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। স্বাধীনতার পর যুবলীগ জিয়াউর রহমান-এরশাদ-খালেদা জিয়ার শাসনামলেও অকুতোভয়ে সংগ্রাম করেছে, নির্যাতিত হয়েছেন যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সমাবেশ ঘিরে সারাদেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে যুবলীগ। নেতারা জানিয়েছেন, দেশের ৬৪ জেলায় ৮৭টি সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। এসব কমিটিকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ১১ নভেম্বরে ঢাকায় যুবসমাবেশের প্রস্তুতি নিতে। সেভাবেই সকল সাংগঠনিক কমিটি প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে।
শুক্রবার থেকে রাজপথ যুবলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকবে জানিয়েছেন সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, ওই দিন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুর আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী সেদিন বিশেষ বার্তা দেবেন।
যুব সমাবেশস্থলে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, সমাবেশ সফল করতে ১০টি উপকমিটি করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য পাঁচটি গেট রাখা হবে। দেশের অদম্য অগ্রগতির ধারা রক্ষায় সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে অবস্থান করবে যুবলীগ।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেছেন, দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তাতে রাজনৈতিক শক্তি ও সামর্থ্য প্রদর্শন করা এখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিক্সন চৌধুরী বলেন, ১১ নভেম্বর প্রিয় সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তী। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যুব মহাসমাবেশে দেশবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁতভাঙা জবাব দেবে যুবলীগ। যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উৎসব যুবলীগের নেতা-কর্মীদের উৎসব।
১৯৭২ সালের এই দিনে দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ এ যুব সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখে সামনের পথ চলাই সংগঠনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ উত্তরণে বর্তমানে সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ।
শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক যুব কনভেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সংগঠনটি। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও হাজারও নেতা-কর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে যুবলীগ দেশের সর্ববৃহৎ যুব সংগঠনে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল দেশবাসীসহ যুব সমাজকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
যুব সমাবেশে ১০ লাখেরও বেশি যুবকের সমাবেশ ঘটানো হবে জানিয়ে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ১১ নভেম্বর যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী; সুবর্ণজয়ন্তী। এই উপলক্ষে আমরা ১১ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব সমাবেশ করব। সেখানে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাব। সেই প্রস্তুতি এখন চলছে। এই সমাবেশের দিন ঢাকা থাকবে শুধু যুবলীগের দখলে। আর এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে যুবলীগের শক্তি প্রদর্শন করা হবে। এই দিন সোহরাওয়াদী উদ্যান জনসমুদ্রে পরিণত হবে। ঢাকার রাজপথ থেকে অলিগলি সর্বত্রই থাকবে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত সাতটি জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই সময়ে তার বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর। ওই সময় যুবলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৪০ বছরের একটি বয়সসীমার বিধান ছিল। ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ওই বিধানটি বিলুপ্ত করা হয়।
ওই বছর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে ৩৮ বছর বয়সী আমির হোসেন আমু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা মহসীন মন্টু। ওই সময় তার বয়স ছিল ৩৭ বছর। ১৯৯৬ সালের চতুর্থ জাতীয় কংগ্রেসে ৪৭ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। ২০০৩ সালের পঞ্চম জাতীয় কংগ্রেসে ৪৯ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ কমিটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস। এ কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। আর ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ পরশ। এখন পর্যন্ত তিনিই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
এদিকে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, আগামীকাল শুক্রবার যুবসমাবেশে মানুষের বিপুল সমাবেশ ঘটবে। তাই এদিন ট্রাফিক ব্যবস্থা ভিন্ন থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশের এলাকার রাস্তা বন্ধ এবং রোড ডাইভারশন দেওয়া হবে।
কাটাবন ক্রসিং, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, পুলিশ ভবন ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাস্কর্য ক্রসিং ও উপাচার্য ভবন ক্রসিং- এসব এলাকা, রোডগুলো পরিহার করে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে আসা গাড়িগুলো পার্কিং করতে হবে নিম্নলিখিত এলাকায়- মহসিন হল মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ভিআইপি); মলচত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; পলাশী ক্রসিং থেকে ভাস্কর্য ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে; ফুলার রোড রাস্তার দুই পাশে; দোয়েল চত্বর ক্রসিং হতে শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে; পলাশী ক্রসিং হতে নিলক্ষেত ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে; সবজি বাগান হতে নেভাল গ্যাপ পর্যন্ত; সুগন্ধা হতে অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং পর্যন্ত; হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল গলি; নেভাল গেইট এলাকা; হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এর বিপরীত পাশে; মিন্টো রোড ক্রসিং হতে পুলিশ ভবন ক্রসিং ও দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকার রাস্তার দুই পাশে।
এসএন