মহাসড়কে ‘জলাবদ্ধতা’ মেগা উন্নয়নের ফল: ফখরুল
বৃষ্টিপাতে রাজধানীসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা সরকারের মেগা উন্নয়নের ফল বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রতিষ্ঠবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। আপনারা জানেন, আজকে উত্তরার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ডিএমপি কমিশনার একটা সার্কুলার দিয়েছেন যে, এই সড়কটা ব্যবহার না করার জন্য। গতকাল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর ফলে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এই রাস্তাটি আর চলাচলের উপযোগী নেই। এই কথাটা আমি বেশ কিছুদিন ধরে বলে আসছি এই রাস্তাটার কথা। এই যে মেগা প্রজেক্ট, মেগা উন্নয়ন তার একটা ফলোশ্রুতি, সে জন্য আজকে এই অবস্থা। কথাটা এ জন্য বললাম যে, আজকে এই (জলাবদ্ধতা) অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এই তাদের মেগা উন্নয়নের কারণেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি জানি না আমি এখন ফিরবো কি করে। তারপরে ধরে নিচ্ছি, যে অন্য বিকল্প রাস্তা বের করে ফিরতে হবে।’
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা একটা নষ্ট সময়, একটা ভয়ংকর সময় অতিক্রম করছি। আমার কাছে আজকে বিস্ময় মনে হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা সরাসরি জড়িত ছিলাম। তখন কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম আমরা মানুষের অধিকারগুলোকে কেড়ে নেবো, তার ভোটের অধিকার কেড়ে নেবো, তার কথা বলার অধিকার কেড়ে নেবো, এই যে সাংবাদিক ভাইয়েরা সবাই বসে আছেন তাদের লেখার অধিকার কেড়ে নেবো, এ জন্য? দুর্ভাগ্য আমাদের, ১৯৭৫ সালের সেই অবস্থা আমাদেরকে আপনার পার হতে হয়েছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ওই একাত্তরের চেতনাকে তারা বাস্তবায়িত করেছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে তারা স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়িত করেছে। আজকে আবার একইভাবে তারা এই স্বাধীনতার কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধে কথা বলে তারা মানুষের অধিকারগুলোকে পুরোপুরিভাবে কেড়ে নিচ্ছে। এই সময়টা আমাদের অত্যন্ত ধৈর্য্যের সঙ্গে, অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে অতিক্রম করতে হবে এবং আমাদের জয়লাভ করতে হবে।’
‘বিএনপি সাংবিধানিক কমিশন করবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালে যে আশা, যে স্বপ্ন, যে আকাঙ্ক্ষা আমরা দেখিছিলাম, সেটাকে বাস্তবায়িত করার জন্য আজকে প্রয়োজন সেটা হচ্ছে যে, যারা আমাদের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে দিচ্ছে, যারা আমাদের সমস্ত অধিকারগুলোকে কেড়ে নিচ্ছে… এখানে একজন সাবেক বিচারপতি সাহেব বলেছেন, সংবিধান মেনে চলতে হবে। কোন সংবিধান? আমি জানতে চাই পরিস্কার করে। যে সংবিধানে আমার অধিকার হরণ করা হয়েছে, যে সংবিধানের মধ্যে কেটে ছেঁটে তিনটি অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে যে, এটা কোনোদিন পরিবর্তন করা যাবে না। যে সংবিধানে আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছিলাম যে, আমরা একটা স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আমরা একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো সেই সংবিধান অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। সেই সংবিধান অবশ্যই আমাদের মানুষের জন্য। আমরা যেটা চেয়েছিলাম যেটাকে করার জন্য এই সংবিধানে অবশ্যই আমাদের কিছুটা পরিবর্তন আনতেই হবে।’
তিনি বলেন, আমরা বলেছি খুব পরিস্কারভাবে যে, আমরা সাংবিধানিক কমিশন তৈরি করব। যদি আমরা জনগনের ম্যান্ডেটে বিজয় অর্জন করতে পারি সাংবিধানিক কমিশন তৈরি করে আমরা সেই অগণতান্ত্রিক, জনগন বিরোধী যে সমস্ত বিষয় সংযোজন করা হয়েছে সেগুলোকে আমরা বাতিল করে আমরা জনগনের জন্য যেটা প্রয়োজন, ৭২ সালে যেটা করা হয়েছিলো তার আশেপাশে নিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা যুগোপযোগী একটা সংবিধান আমরা নিয়ে আসার চেষ্টা করব। কথাটা খুব পরিস্কার। এতে অন্য কেউ কিছু বললে, আপনি যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন- তাতে তো আমার বিরুদ্ধে এখন রাষ্ট্র বিরোধী মামলা হওয়া উচিত। সেটা তো হতে পারে না। ব্যাখ্যাটা খুব পরিস্কার এদেশের মানুষ যা চাইবে সেটাই হচ্ছে সংবিধান এবং সেই সংবিধান আমি মনে করি, বর্তমান যে সংবিধান আছে তা মানুষের আশা-আকাংখা পুরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রতি আহবান রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাব, বাংলাদেশকে যেন আমরা সত্যিকার অর্থেই একটা অত্যন্ত প্রগতিশীল জনপদ হিসেবে তৈরি করতে পারি, আমরা যেন বাংলাদেশে মুক্ত চিন্তার যে অবস্থা সেই অবস্থা সৃষ্টি করতে পারি, আমরা যেন বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই একটা সাম্য, ন্যায় বিচার এবং মানবিক মূল্যবোধের কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করতে পারি সেজন্য আপনারা অতীতে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অব্যাহত রাখবেন। আপনারা জনগনের পাশে দাঁড়াবেন এই বিশ্বাস আমার আছে।
এমএইচ/এএস