‘বিএনপি সমাবেশের নামে চাঁদাবাজি করছে, টাকা যাচ্ছে তারেকের কাছে'
বিএনপি সমাবেশের নামে নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘সমাবেশের নামে চাঁদাবাজি করে যে টাকা তোলা হচ্ছে তার অর্ধেক লন্ডনে তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হচ্ছে।’
রবিবার (১৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এ অভিযোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চট্টগ্রামে সমাবেশের নামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে চাঁদা নিয়েছে। ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য বিরাট একটি চাঁদার প্রকল্প তৈরি করেছে। আমি এটিও শুনতে পেলাম যে, চট্টগ্রামে সমাবেশের নামে যে চাঁদা উঠেছিল তার অর্ধেক তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিএনপির সমাবেশে মানুষকে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ খণ্ডন করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি যখন এ ধরনের বাধার কথা বলে আমি তাদেরকে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে বলি। ২১ আগস্টের সমাবেশে হামলা বিএনপি করেছিল, কিবরিয়া সাহেব, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এবং নারায়ণগঞ্জের সমাবেশে, আহসান উল্লাহ মাস্টারের সমাবেশে হামলা বিএনপি করেছিল। সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা করে তারা বহু মানুষকে হত্যা করেছে। তাদের আমলে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে স্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে যেন কেউ এর বাইরে যেতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেছিল। বিএনপি এখন যে সমাবেশ করছে কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’
সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘অপরদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশাসন বিএনপি যাতে সঠিকভাবে সমাবেশ করতে পারে সেজন্য সহযোগিতা করছে। কিন্তু সমাবেশের নামে তারা অতীতে যেহেতু ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, জনজীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছে সেজন্য পুলিশকে সতর্ক থাকতে হয়। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। সেটির স্বার্থে অনেক ক্ষেত্রে তল্লাসি করতে হয়েছে বা হচ্ছে।’
হাছান মাহমুদ তার আইপ্যাড ও মোবাইল থেকে আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপির এবং বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের সমাবেশের ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘দেখুন আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি নেতারা মঞ্চে সাজগোজ করে বসে আছে। আর আমরা যখন সমাবেশ করেছি তখন আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। আমি নিজেও গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে বহু দিন হাসপাতালে ছিলাম। এখনও ৪০টি স্প্লিন্টার আমার শরীরে আছে। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মধ্যে পার্থক্য।’
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে সংঘটিত পাকিস্তানের নৃশংস গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে এবং জাতিগত গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে -এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে এই প্রস্তাব উপস্থাপন করার জন্য মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের আমি ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে জাতিসংঘ যাতে স্বীকৃতি দেয়, সে জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষকে যে হত্যা করা হয়েছে ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জত লুন্ঠন করা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন ঘটনা পৃথিবীতে কোথাও ঘটেনি। রুয়ান্ডার গণহত্যাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে ১৯৭১ সালে। এটার স্বীকৃতি অবশ্যই হওয়া উচিত। সেজন্য সারা পৃথিবীতে এবং জাতিসংঘে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসা হচ্ছে, সেটিরই প্রতিফলন মার্কিন প্রতিনিধি সভায় এই প্রস্তাব উপস্থাপন। আশা করি এই অব্যাহত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জাতিসংঘে ২৫ মার্চ বা ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি আমরা পাবো, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।
এনএইচবি/এমএমএ/এএস