নৌকায় ভর করে ময়মনসিংহে বিএনপির সমাবেশ!
ভোর ৬টা থেকে সবকটি জেলা ও উপজেলা থেকে ময়নমসিংহ অভিমুখি যানবাহন ছিল বন্ধ। যানবাহানের এক ধরনের অঘোষিত ধর্মঘট চলছিল ময়মনসিংহ জুড়ে। তারপরও বিএনপির সমাবেশে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
যানবাহন না পেলেও শেরপুর, নেত্রকোনাসহ ওই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে নৌকায় করে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। বিষয়টিকে অনেকে এভাবেই দেখছেন যে, যানবাহন বন্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগের নৌকাতেই ভরসা করে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিএনপির পূর্বনির্ধারিত বিভাগীয় সমাবেশ ছিল ময়মনসিংহে। স্থানীয় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে ডাকা এই সমাবেশকে সফল করতে গত কয়েকদিন ধরে ময়মনসিংহ বিভাগের সবকটি জেলা ও উপজেলায় ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো।
কিন্তু শনিবার ভোর ৬টা থেকেই ময়মনসিংহ বিভাগের সবকটি জেলা উপজেলা থেকে ময়মনসিংহ অভিমুখি গণপরিবহন আকস্মিক বন্ধ হয়ে যায়।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সমাবেশকে কেন্দ্র করে সমগ্র বিভাগীয় শহরে এক ধরনের অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে দিনব্যাপী দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হয়েছে দলটির নেতা-কর্মীরা। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষও। তবে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হুমকি-বাধা, লাঠি নিয়ে সড়কে অবস্থান ও যানবাহন থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন সমাবেশে যোগ দেওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনাকীর্ণ হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল ময়মনসিংহের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠ।
স্লোগান, মিছিল আর বাদ্যের তালে তালে মুখরিত হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, গণপরিবহন বন্ধ করে সমাবেশকে বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পায়ে হেঁটে, নদীপথে ট্রলার ও নৌকাযোগে সমাবেশে যোগ দেন। অনেক নেতা-কর্মী আগের রাতেই সমাবেশস্থলে এসে অবস্থান নেন।
অভিযোগ উঠেছে, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি ট্রাকসহ অন্য যানবাহনও চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মযমনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিকল্প পথে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন।
বিশেষ করে শেরপুর, নান্দাইল, গফরাগাঁও ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, হোসেনপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌ পথে শত শত ট্রলার ও নৌকায় করে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে ময়মনসিংহের সমাবেশস্থলে পৌঁছান।
খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বিএনপি।
শেরপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোখলেছুর রহমান বলেন, শনিবার সকাল থেকেই শেরপুর শহরের বিভিন্নস্থান থেকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা অটোরিকশায় করে উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের সাতপাকিয়া ঘাটে জড়ো হন। সেখান থেকেই নৌকা ও ট্রলার যোগে ময়মনসিংহের সমাবেশে যোগ দেন। সকাল নয়টা পর থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অন্তত ২০টি নৌকা-ট্রলারযোগে তারা ময়মনসিংহে উপস্থিত হন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা যাতে ময়মনসিংহে সমাবেশে যোগ দিতে না পারেন, সেজন্য বাস মালিক সমিতি বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
জেলা বাস কোচ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের আশঙ্কায় নিরাপত্তার স্বার্থে শনিবার সকাল থেকে শেরপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
জেলা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার ঘোষ বলেন, ময়মনসিংহে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার সংঘর্ষ হয়েছে। আজও সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামীকাল থেকে যথারীতি বাস চলাচল করবে বলে তিনি জানান।
এমএইচ/এনএইচবি/এমএমএ/