বিএনপির উত্থানে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে: রিজভী
চট্টগ্রামে সমাবেশে অংশ নিতে যাওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘জনগণের সমর্থন হারিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, হিংসা ও হত্যায় আগ্রহী একটি দল। তারই কুৎসিত প্রমাণ দিল চট্টগ্রাম বিভাগের মহাসমাবেশে আগত জনগণ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর রক্তাক্ত আক্রমণের বিভৎস রূপ দেখিয়েছে। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ-যুবলীগকে খুনি-বাহিনী হিসেবে সংগঠিত করেছে। তবে এত অত্যাচার-আক্রমণ-চক্রান্ত-সন্ত্রাস-খুন-বিশ্বাসঘাতকতা ও কুৎসা সত্বেও জনগণের আন্দোলন থেমে থাকবে না। পথে বাধা ও নেতা-কর্মীদের উপর শারীরিক আক্রমণ সত্বেও আজ চট্টগ্রামের পোলো গ্রাউন্ডের মহাসমাবেশে জনতার ঢল নামবে। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও জনগণকে কাবু করা যায় না। আজকে চট্টগ্রামে সমাবেশের সফলতা সেটিরই আজ প্রমাণ হবে।’
বুধবার (১২ অক্টোবর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘যেভাবে তৃণমূলের উত্থান হয়েছে তাতে অবৈধ সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। জনসভাগুলোতে মানুষ আসছে বানের মতো। কন্ঠে তাদের হারানো অধিকার ফিরে পাবার আত্মপ্রত্যয়ের আওয়াজ। এই আওয়াজ শেলের মতো বিধছে শেখ হাসিনার বুকে। লুটপাট-খুন-গুম নির্যাতনে ডুবে থাকা সরকারের নেতারা ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে নির্ঘুম হয়ে গেছেন। সরকারের পতনের ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে দিক দিগন্তে।’
বিপুল জনসমাগম দেখে তারা উন্মাদ হয়ে পড়েছেন। হুড়মুড় করে এই বুঝি গণভবনে ঢুকে পড়লো গণতন্ত্রকামী লাখো জনতার উত্তাল স্রোত-এমন দুঃস্বপ্ন প্রতিমুহূর্তে মনে হয় তাড়া করছে শেখ হাসিনাকে। এ কারণে জনতার দুর্বার আন্দোলনের কথা শুনে হিংস্র হয়ে উঠেছেন তারা।’
চট্টগ্রামের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এ ধরনের কাপুরুষোচিত ও বর্বরোচিত হামলা, নেতা-কর্মীদের গুরুতর আহত করাসহ চট্টগ্রাম মহানগরে নেতা-কর্মীদের বাসায় ও হোটেলগুলোতে পুলিশের তল্লাশী ও পথে পথে বাধা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানান রুহুল কবির।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন ভীরু ও কাপুরুষের দল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রটেকশনে গুণ্ডা ও সন্ত্রাসীরা বাহাদুরী দেখায়। প্রকৃত সাহসী ও বীরদের কখনোই ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার নজীর নেই সারা দুনিয়াতে। যারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশকে ধ্বংস করতে দ্বিধা করে না, তারাই রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় গুণ্ডাকে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে লেলিয়ে দেয়। সংগ্রামী জনতাকে নতি স্বীকার করানোর জন্য জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবির আন্দোলনকে দমাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণ্ডাদেরকে লেলিয়ে দেওয়া শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ।’
রিজভী বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আবারও নিয়ে যাবার হুমকি দিচ্ছেন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তাদের এই হুংকারে আবারও জনগণের সামনে প্রমাণিত হলো দেশের মানুষের প্রাণের স্পন্দন সবচেয়ে জননন্দিত জনপ্রিয় খালেদা জিয়া ইতিহাসের চরমতম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারারুদ্ধ। শেখ হাসিনা তার ক্যাঙ্গারু কোর্টে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো মামলার ফরমায়েশি রায়ে দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করছেন। রাষ্ট্রের বিধিবিধানকে পদদলিত করে চলেছেন। আইন আদালত যে তাদের ইশারায় চলে সেই সত্যটা নিজেদের মুখেই স্বীকার করেছেন হাছান মাহমুদ ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এতেই বোঝা যায় বিচারক এবং আদালত সর্বোপরি প্রশাসন আওয়ামী লীগের তল্পিবাহকের ভুমিকা পালন করে।’
তিনি বলেন, ‘আইন আদালতে আওয়ামী চেতনার পরীক্ষিত ব্যক্তিদের বসিয়ে অভিনয় করানো হয়। কিন্তু আসল রায় আসে গণভবন থেকে। প্রাণ বাঁচাতে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এই কথা প্রকাশ্যে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বিচার আচার সব এক জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, মীর সরাফত আলী সপু, আব্দুস সালাম, সাইফুল আলম নিরব, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।
এমএইচ/এমএমএ/