নির্যাতিত হয়েও প্রতিশোধ নেয়নি আওয়ামী লীগ: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে। এরশাদের আমলেও নির্যাতিত হয়েছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সবার হাতেই নির্যাতিত হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর কারও প্রতি প্রতিশোধ নিতে যায়নি। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের উন্নয়ন করা। তাই আমরা প্রতিশোধ নেওয়ার পথে না গিয়ে মানুষের উন্নয়নে আমাদের সবটুকু শক্তি নিয়োগ করেছি। তার সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে। বিএনপি আমলের চিত্র আপনারা দেখলেন। এরপর বিএনপিকে কী করে সমর্থন জানায়। কী করে তাদের সঙ্গে হাত মেলায় সেটাই প্রশ্ন।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন। বক্তব্যের মাঝে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে বিভিন্ন সময়ের হামলার ভিডিও চিত্র দেখানো হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির আমলে শেফালি আর তার মাকে আমি টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে আশ্রয় দিয়েছি। ফাহিমা, মহিমা, সিরাজগঞ্জের পূর্ণিমা, ফাতেমা কাকে না নির্যাতন করেছে। কত হাজার নেতাকর্মীকে নির্যাতন করেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেমন ঠিক তেমনিভাবে ধর্ষণের উৎসব শুরু করেছিল ২০০১ সালের নির্বাচনে পর। ১৯৯৪ সালে মেয়র নির্বাচনে মোহাম্মদ হানিফ নির্বাচনে জয়ী হলেন। সেই জয়ী হওয়া যেন অপরাধ হয়ে গেল। লালবাগে বিএনপি থেকে ৭ জনকে হত্যা করা হলো। তাদের কাছ থেকে কথা শুনতে হয় যাদের হাতে রক্তের ছাপ। যাদের উত্থানই হয়েছে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। জাতির জনকসহ তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করে সংবিধান লঙ্ঘন করে যে দলের জন্ম তাদের কাছ থেকে আমাদের গণতন্ত্রের শিক্ষা নিতে হয়।
বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, হারুন সাহেব বলে গেলেন ভোট নাকি দেওয়া যায় না। তার এলাকায় নাকি ভোট ডাকাতি হয়েছে। কথাটা মনে হয় ঠিক। কারণ উনি যে জিতে এসেছেন নিশ্চয় ভোট ডাকাতি করে জিতে এসেছেন। তিনি যদি ভোট ডাকাতি করে না আসবেন তাহলে তিনি বুঝলেন কী করে ভোট ডাকাতি হয়েছে? ভোট যদি নাই হয়ে থাকে তিনি জিতলেন কী করে?
সংসদ নেতা বলেন, বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচন করল না। ২০১৮ তে ৩০০ আসনে ৭০০ প্রার্থী। এক প্রার্থী আসে লন্ডন থেকে, এক প্রার্থী আসে গুলশান অফিস থেকে আর এক প্রার্থী আসে মতিঝিল অফিস থেকে। রিজভী সাহেব একটা দেন, তো ফখরুল সাহেব একটা দেন, সব নাকচ হয়ে যায় লন্ডন থেকে। শুধু তাই না গত নির্বাচনে নমিনেশন বিক্রি করেছে, কে কত টাকা দিতে পারে। যে টাকা দেবে সে নির্বাচন করবে। এই যাদের নির্বাচনের আয়োজন তারা নির্বাচনে জিতবে কীভাবে? তাদের কাছে নির্বাচন জাদুর বাক্স?
তিনি বলেন, জাদুর বাক্স নির্বাচন কমিশন না, জাদুর বাক্স দেখিছেন বিএনপি। কারণ ৮১ সালে আমার মনে আছে। জিয়াউর রহমান মৃত্যুর পর ৪০ দিন পর্যন্ত দেখানো হয়েছিল যে জিয়া অত্যন্ত সৎ ছিল, কিছুই রেখে যায়নি। জিয়ার ছেঁড়া প্যান্ট কেটে কোকো ও তারেকের প্যান্ট বানানো হতো। খালেদা জিয়া কোনো মতে রেশনের টাকা জোগার করে চলত এবং জিয়াউর রহমানের ভাঙা সুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া কিচ্ছু ছিল না। এরপর দেখলাম খালেদা জিয়ার গায়ে উঠল ফ্রেন্স সিপনের শাড়ি। যা বিদেশ ছাড়া পাওয়া যায় না। ফ্রেন্স সিপনের যা দাম। এক লাখ টাকা একটা শাড়ির দাম হয়। কোকো ও তারেক সেই জাদুর বাক্স, ভাঙা বাক্স সেটাই জাদুর বাক্স হয়ে গেল। সেখান থেকে কোকো-১ কোকো-২ করে কোকো-৬ বের হলো। সেখান থেকে ইন্ডাস্ট্রিজ বের হলো। সেখান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা। মানি লন্ডারিং নিয়ে কথা বলা হয়। খালেদা জিয়ার ছেলের বেশ কিছু টাকা আনতে সক্ষম হয়েছি। টাকা পাচার করেছে? সেটাও প্রমাণিত সত্য। জাদুর বাক্স ছিল বিএনপির। রাতারাতি ভাঙা সুটকেস ছেঁড়া গেঞ্জির মালিক যারা তারা হয়ে গেল হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। আজকে লন্ডনে থেকে কীভাবে কী নিয়ে চলে। নিজেই বলে ক্যাসিনো থেকে টাকা নিয়ে নাকি সংসার চলে। জুয়ার আড্ডা থেকে টাকা নিয়ে কোনো মতো জীবন যাপন করে। কিন্তু কী বিলাসী জীবন তার। কত টাকা তারা পাচার করে নিয়ে গেছে? প্রতিদিন এখান থেকে কত টাকা যাচ্ছে সেটা খুঁজে বের করা দরকার। কত টাকা পাচার হচ্ছে সেটা তদন্ত হওয়া দরকার।
ভিডিও চিত্র দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে এই হলো বিএনপির আমল, এই হলো বিএনপি-জামায়াত জোটের আমল। এরশাদের আমল আর এক দিন দেখাব। এরশাদের আমলে ২৪শে জানুয়ারিতে আমার মিছিলের উপর গুলি। নূর হোসেনকে হত্যা করা। আওয়ামী লীগ সবার হাতেই নির্যাতিত হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর কারও প্রতি প্রতিশোধ নিতে যায়নি। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের উন্নয়ন করা। তাই আমরা প্রতিশোধ নেওয়ার পথে না গিয়ে মানুষের উন্নয়নে আমাদের সবটুকু শক্তি নিয়োগ করেছি।
এসএম/এসজি