সাংগঠনিক সম্পাদকদের কড়া বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা
আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২৩তম জাতীয় কাউন্সিলের আগেই সকল মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন এবং দুঃসময়ের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের খুঁজে বের করে দলে ভেড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দলের মধ্যে গ্রুপিং না করারও কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতারা যাতে দলের ভেতরে পৃথক বলয় তৈরি করতে না পারেন সেজন্য দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সক্রিয় থাকতে বলেছেন শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি চলমান সংকট নিয়ে বিএনপিসহ অন্যান্যদের সমালোচনার জবাব দিতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেশবাসীর সামনে বেশি বেশি করে তুলে ধরতে বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৮টি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের এমন নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
রবিবার (১৪ আগস্ট) গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সভাপতিত্বে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠক সূত্রে এবং একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন শফিক ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন প্রভাবশালী সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বৈঠকে দলের ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউনিয়ন, থানা, পৌর, উপজেলা, মহানগর ও জেলার কমিটি ঢেলে সাজানোর কঠোর নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। প্রতিটি ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পাশাপাশি এসব কমিটিতে কোনোভাবেই যেন দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, সংসদ সদস্য বা দলীয় নেতারা যেন পৃথক বলয় তৈরি না করেন সেজন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের তৎপর হতে বলেছেন। নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করলে অন্যদের সুযোগ দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের সবগুলো টিমকে নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ইউনিটি ধরে রাখতে যা যা করার নেতাদের সেভাবেই কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কোনভাবেই যেন নিজেদের মধ্যে গ্যাপ তৈরি না হয়। যদি কোনো গ্রুপিং থাকে সেগুলো দ্রুতই নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চলমান সংকটে নেতা-কর্মীদের সতর্ক হয়ে কথা বলতে। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নের কথা বারবার মানুষের কাছে তুলে ধরতে বলেছেন। বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া বিশেষ উদ্যোগ ‘কেউ গৃহহীন’ থাকবে না- এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমিহীন-গৃহহীন লোকদের খুঁজে বের করে তালিকা করতে বলেছেন। একজন মানুষও যেন গৃহহীন বা ভূমিহীন না থাকে এজন্য তালিকা প্রণয়ন করতে কৃষক লীগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকরা স্ব স্ব বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট লিখিত আকারে দলীয় সভাপতির কাছে উপস্থাপন করেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকদের বক্তব্য শোনেন দলীয় প্রধান। তারা নিজ নিজ বিভাগের বিভিন্ন সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। দলীয় সভাপতি এসব সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানও দেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে দলের তৃণমূল কর্মীদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা এবং প্রতিটি মানুষের কাছে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। এই দুই মাসে থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব কমিটি এখনো হয়নি সেসব কমিটি দ্রুত করে দিতে বলেছেন। কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন সভানেত্রী। নিজেদের পছন্দের লোক দলে ঢুকাতে গিয়ে বিতর্কিত কেউ যেন ঢুকে না পড়ে সেদিকেও কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে প্রত্যেককে সাংগঠনিক কাজে তৎপরতা বাড়াতে বলা হয়েছে। সামনে নির্বাচন কঠিন সময় তাই কমিটিও হতে হবে ভালো।
অপর এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে যেতে বলেছেন সভানেত্রী। সরকারের অন্যতম উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিকে মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে কি না সেটি তদারকি করতে বলেছেন। সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতারা যখন এলাকায় যান তখন যেন কমিউনিটি ক্লিনিক ভিজিট করেন। সেখানে যারা সেবা নিতে আসছে তাদের সঠিক সেবা দিচ্ছে কি না সেগুলো তদারকি করতে বলা হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপির অপকর্মগুলো তুলে ধরতে বলা হয়েছে।
এনএইচবি/এসজি/