আন্দোলন করুক কাউকে গ্রেপ্তার নয়: প্রধানমন্ত্রী
বিরোধী দলের আন্দোলনে বাধা না দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি, তারা আন্দোলন করতে চায় করুক। খবরদার কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়। প্রধানমন্ত্রীর অফিস ঘেরাও করবে? আমি বলেছি হ্যাঁ আসতে দাও।’
রবিবার (১৪ আগস্ট) গণভবনে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সরকার প্রধান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বলে দিয়েছি খবরদার কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়, কোনো ডিস্টার্ব করা না হয়। তারা আন্দোলন করতে চায় করুক অসুবিধা কী? আমরা যে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছি দেশের কাজ করতে দেশের মানুষ তো সেটা জানে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কষ্ট যে আমরা বুঝি না তা নয়। আমাদের বিরোধীরা সুযোগ পাচ্ছে তারা আন্দোলন করবে করুক। আমি নির্দেশ দিয়েছি; তারা আন্দোলন করতে চায় করুক, খবরদার কাউকে যেন অ্যারেস্ট করা না হয়। প্রধানমন্ত্রীর অফিস ঘেরাও করবে আমি বলেছি হ্যাঁ আসতে দাও। আমি বলে দিয়েছি খবরদার কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়, কোন ডিস্টার্ব করা না হয়। তারা আন্দোলন করতে চায় করুক। অসুবিধা কী? আমরা যে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছি দেশের কাজ করতে, দেশের মানুষ তো সেটা জানে। নানা কথা বলে সুযোগ যখন পাচ্ছে তারা কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে। তারা যদি বেশি করতে যায় এর প্রভাবে মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। এটাও তাদের বোঝা উচিত। তাতে কিন্তু মানুষের কষ্ট বাড়বে। আন্দোলন করে কতটুকু সফল হবে সেটা জানি না। কিন্তু তারা যেভাবে করতে চাচ্ছে তাতে দেশের জন্য আরও ক্ষতি হবে। কিন্তু আমরা সেটা সামাল দিতে পারব সে বিশ্বাস আমার আছে।
তিনি বলেন, যখনই বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমবে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করব, সেই নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। সেটা আমরা করে দিচ্ছি। মানুষের কিছুদিন কষ্ট করতে হবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যখন চালু হয়ে যাবে তখন বিদ্যুতের সমস্যাটা অনেকটা দূর হবে। আমরা যে ওয়াদা দিয়েছিলাম সেগুলো করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, একটা শ্রেণি সব সময় রয়েছে যেন এদেশের মানুষের কল্যাণ হোক; এটা তারা চায়ই না। অর্থাৎ স্বাধীনতাটা অর্থবহ হোক, স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছাক এখানে একটা বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টা সব সময় ছিল। সেজন্য যখনই মানুষ একটু ভালো থাকে তখনই যেন চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রটা শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মনে হয় এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ যদি অবদান রাখতে যায় তাকে বোধ হয় বিপর্যয়ে পড়তে হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য সব থেকে দুর্ভাগ্যের যখনই এই দেশের মানুষ একটু ভালো থাকে বা ভালো অবস্থায় আসে তখনই যেন চক্রান্ত ষড়যন্ত্রটা শুরু হয়।
তিনি বলেন, জাতির পিতা শূন্য হাতে একটা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ, একটি প্রদেশ, সেই প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত করা এবং বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হাতে সময় পেলেন মাত্র সাড়ে ৩ বছর। কোনো সম্পদ ছিল না। তিনি শুধু বলেছেন আমার মাটি আর মানুষ হচ্ছে আমার সম্পদ। এই মাটি আর মানুষের উপর নির্ভর করে মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে সেই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করে দিয়ে যান। এবং তার লক্ষ্য ছিল ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে একটা নতুন সমাজ দেবেন। উপনিবেশিক শাসনামলের কাঠামো ভেঙে গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো তিনি করতে চেয়েছিলেন। গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো করতে যেয়ে বিরাট পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলের মানুষের কাছে ক্ষমতা নিতে চেয়েছিলেন। সেজন্য বাংলাদেশকে প্রত্যেকটা মহকুমায় রূপান্তর করলেন। এক একটা জেলার উন্নয়নটা যেন ওই জেলা ভিত্তিক হয়, যাতে মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূর হয় আর্থ সামাজিক উন্নতি হয় সেই পদক্ষেপটাই তিনি নিলেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের যে ডাক দিলেন সেটার লক্ষ্যই ছিল জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। উৎপাদন বৃদ্ধি করা আর্থ সামাজিক উন্নতি করা।
সরকার প্রধান বলেন, যখনই দুর্যোগ দুর্বিপাক প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাই আসুক আওয়ামী লীগ বা আমাদের সহযোগী সংগঠন সব সময় সজাগ থাকে। মানুষের পাশে সকলের আগে দাঁড়ায়। সংগঠনকে সুসংহত করাই আমাদের লক্ষ্য। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আমাদের মেয়াদকাল যখন শেষ হয়ে যায় তখন আমরা কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে আসি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এপর্যন্ত আর কখনই এ রকম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা পরিবর্তন হয়নি। প্রতিবারই এক একটা ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘটেছে, এটা সকলের মাথায় রাখতে হবে। একটি বার শুধু যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখন শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, নীতিতে বিশ্বাস করে। জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। সেজন্য ওই একবারই শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। তারপরের ইতিহাস সবার জানা আছে। ২০০১ সালের নির্বাচন আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা। সংখ্যা লঘুদের উপর অত্যাচার সেখানে হিন্দু খ্রিস্টান কেউ তো বাদ যায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনের চিত্র সবার মনে আছে। বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশে ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ বোমা হামলা। ১৫ আগস্টের খুনিদের জিয়াউর রহমান শুধু ইনডেমনিটি দিয়ে দূতাবাস চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে তা তো না। এরপর এরশাদ এসে খুনি ফারককে প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যান্ডিডেট করল। খালেদা জিয়া এসে আরও এক ধাপ উপরে রশীদ, ফারুক, হুদা ৩ জনকে নমিনেশন দেয়। ফারককে জেতাতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু নওগাঁয় সেটা পারে নাই। হুদা আর রশীদকে পার্লামেন্টে বসালো, শুধু তাই না খুনি রশীদকে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ারে বসালো। এদের সঙ্গে খুনিদের সৌহার্দ্য কত সেটা মানুষের জানা উচিত। সেই খুনিদের পুরস্কৃত করার মানে কী? ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে এদের যে সম্পৃক্ততা জিয়াউর রহমানের যে সম্পৃক্ততা এবং ইনডেমনিটি দিয়ে বিচার হবে না। আমি বা আমরা যারা ১৫ আগস্ট স্বজন হারিয়েছি আমাদের বিচার পাবার অধিকার ছিল না, মামলা করার অধিকার ছিল না এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছে অর্থাৎ বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতি এই দেশে চালু করে দিয়েছিল। আমার অবাক লাগে যখন কেউ মারা গেলে বিচার চায়। আমার তো ৩৫ বছর সময় লাগছে বিচার পেতে। আমার বাবা, মা, ভাই সব হারানোর পর বিচার চাইতে পারিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সমস্ত পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি জনগণের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। তারা আমাদের বার বার ভোট দিয়েছে। তৃতীয় দফায় এক টানা ক্ষমতায়। আজকে দারিদ্রের হার কমে গেছে, মানুষের পুষ্টির নিশ্চয়তা আমরা করছি। খাদ্য নিরাপত্তা করতে পেরেছি স্বাক্ষরতার হার বেড়ে গেছে, মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়েছে শিশু মৃত্যু হার কমেছে। মাতৃ মৃত্যু হার কমেছে।
চলমান সংকট নিয়ে বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধে স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন। আমেরিকা স্যাংশন দিল রাশিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য কিন্তু শায়েস্তা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আমাদের দেশ না ইউরোপ আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে সকল মহাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সব জিনিসের উপর এর একটা প্রভাব পড়েছে। স্যাংশন দিয়ে লাভটা কী হল? লাভ আমেরিকা রাশিয়ার হয়েছে। কারণ রুবালের দাম বাড়ছে এদিকে ডলারের দাম বেড়েছে। সারা বিশ্বব্যাপী রুবাল আর ডলারের দাম বাড়ছে আর মরছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যারা। মধ্যবিত্তদের জন্য চরম দুর্ভোগ এটা আমার দেশ বলে না। ইউরোপ আমেরিকা সব জায়গায় এই অবস্থার সৃষ্টি। স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন আর এই যুদ্ধ যেটা মানুষের জীবনে সর্বনাশটা টেনে আনে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে এটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। কষ্ট লাঘবের জন্য কী কী করা যায় আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু লোক তো থাকে অপ্রয়োজনে জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়, ছুতা ধরে। সেটা হচ্ছে কিছু কিছু জায়গায়। হঠাৎ এত দাম তো বাড়ার কথা নয় প্রত্যেক জিনিসের। তবে আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
এসএম/এমএমএ/