সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা হচ্ছে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে দেখছি, এই সরকার সব সময়েই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করছে। তাদের আমলে সবচেয়ে ভালো অসাম্প্রদায়িক অবস্থা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দেখা গেছে- এদের আমলেই হিন্দু সম্প্রদায়, খ্রীষ্টান সম্প্রদায়, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ যারা এখানে আছেন তাদের উপর, তাদের জমি-জমা দখলের চেষ্টা করা এবং তাদের উপসানালয়ে হামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় বিষয়ে যে রুপক বের হয় সেখানে আজকে পরিষ্কার করে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমান সরকার, যদিও তারা সংখ্যালঘু শব্দ ব্যবহার করেছে তবে আমরা সংখ্যালঘু শব্দ ব্যবহার করি না। সংখ্যালঘু বলতে কেউ নেই। তাদের অধিকার রক্ষায় এই সরকার ব্যর্থ বলা হয়েছে। শনিবার ৪ জুন রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে জিয়াউর রহমানের ৪১ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে দেশে যে গণতন্ত্রহীনতা চলছে এটাকে দূর করে আমরা যেন মানুষের অধিকারগুলোকে রক্ষা করতে পারি। আমরা যেন ফিরিয়ে আনতে পারি ভোটাধিকার, দেশে যেন শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি, দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজকে উপড়ে ফেলতে পারি। তাই দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সত্যিকার অর্থে ৭১ সালে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করতে পারি সে জন্য লড়াই-সংগ্রাম করতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়াই করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের চরিত্র হচ্ছে একটি অসাম্প্রদায়িক চরিত্র। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত ভূ-খন্ডে বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্তি হচ্ছে স্বাধীনতা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই বিষয় গুলোর গুরুত্বারোপ করে যখন রাষ্ট্র পরিচলানায় আসেন। সেই সময়ে যেই দর্শন সামনে নিয়ে এসে ছিলেন তিনি যা ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীর দর্শন। এই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনের মধ্যেই পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা আছে, এই ভূ-খন্ডের মধ্যে যারা বাস করে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান অন্যান্য জাতি তারা সবাই হচ্ছে বাংলাদেশি জাতি। সেই দর্শন ও রাজনীতিকে সামনে নিয়েই জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করে ছিলেন।
পরবর্তীকালে খালেদা জিয়াও সেই দর্শনকে সামনে নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। যখন তিনি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন আন্তরিকভাবে সেই দর্শনে বিশ্বাস করে বাংলাদেশে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রীষ্টানদের মধ্যে একটা অভূতপূর্ব একটা সম্মেলন ঘটাতে সক্ষম হয়ে ছিলেন।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে ৫০ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু এই ৫০ বছরেও আমরা ১৯৭১ সালে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান একসাথে একযোগে বুকের রক্ত দিয়ে ছিলাম, বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, দুর্ভাগ্যেজনকভাবে স্বাধীনতার যে চেতনা ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করা, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত, মানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা, এ সবকিছুই ধবংস করে ফেলা হয়েছে। মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশে আমরা যারা বসবাস করছি-আমাদের মৌলিক অধিকার-ভোটাধিকার-ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিল। কয়েকদিন আগে গৃহঅন্তরীণ করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আজকে আমরা জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনায় প্রার্থনা করব, প্রার্থনা করব গৌতম চক্রবর্তীর আত্মার জন্য, প্রার্থনা করব আমাদের দেশে যেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং সত্যিকার অর্থেই আমরা যেন একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
এএজেড