দেশ শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হতে পারে: জিএম কাদের

সারাবিশ্বই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে হঠাৎ করে দেখা গেল শ্রীলঙ্কার মতো একটি দেশ যাদের শিক্ষিতের হার ৯৫ শতাংশ। যারা অনেক আগেই মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। তাদের রিজার্ভ প্রচুর ছিল। লোক সংখ্যা অনেক কম। মাত্র দুই কোটি। কিন্তু এই সমৃদ্ধশালী দেশ হঠাৎ করে দেউলিয়া হয়ে গেল। যা নিয়ে আমি কালকেও সংসদে কথা বলেছি।’
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) জাতীয় পার্টি মহানগর দক্ষিণের নব-নির্বাচিত কমিটির পরিচিতি সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে আমাদের চিন্তার বিষয় আছে, আমি মনে করি যে বিষয়টি সরকার যেভাবে দেখছেন, আরও বেশি গভীর ভাবে দেখা প্রয়োজন। ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিভিন্ন কারণে বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমি যতটুকু খবর পেয়েছি, গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। হিসাবে আমাদের আয় অনেক কম।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আয় কখনোই ৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতো না। এই যে ৪০ বিলিয়ন ডলার আমাদের বেশি খরচ হচ্ছে, এটা কিন্তু আমাদের রিজার্ভ থেকে আস্তে আস্তে চলে যাবে। সামনের দিকে আরও অনিশ্চিত ভবিষ্যত আসতে পারে। আমরা অনেক বড় ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়েছি। মেগা প্রজেক্ট এর নামে বিভিন্ন সূত্র থেকে বিভিন্ন ধরনের ঋণ গ্রহণ করেছি। অনেক সময় অনেক বেশি সুদে ঋণ নিয়েছি আমরা।’
অর্থনীতিবীদের বরাত দিয়ে জিএম কাদের বলেন, গত অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকার মতো। সব মিলিয়ে সাড়ে এগার লক্ষ কোটি টাকার মতো বর্তমান সরকারের এখন ঋণ রয়েছে। এই বছরও দেশি-বিদেশি এক লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য একটা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে আমরা যদি সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকি, এবং এই খরচগুলো যখন আমাদের করতে হবে তখন বাংলাদেশের দেউলিয়া হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। মেগা প্রজেক্ট করে, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ করে, সেই ঋণের টাকা দিয়ে পোলাও খাওয়া দরকার ছিল না। আমাদের দরকার নিজের পায়ে দাঁড়ানো। যাতে আমরা সঠিক ভাবে চলতে পারি।
মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এক সঙ্গে পাঁচটা দশটা প্রকল্প হাতে নেওয়ার দরকার ছিল না। আমরা আস্তে আস্তে একটা একটা করে করতে পারতাম। আমরা সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারতাম। এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হতে বাংলাদেশের একটি আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ চরম সংকটে পড়েছে বলে উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, এমনিতেই জন জীবন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে একটি খারাপ পরিস্থিতির রয়েছে। আমি সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে রেশনিং সিস্টেম চালুর কথা বলেছিলাম। যা অতীতে দীর্ঘদিন আমাদের দেশে প্রচলিত ছিল। প্রচলিত থাকা সেই সিস্টেমটি আমাদের দেশে আবার পুন:র্জীবিত করা উচিত। পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গায় এই সিস্টেমটি এখনও প্রচলিত আছে। হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ এর দেশ পরিচালনার সময় গ্রাম রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। অতিদরিদ্র, দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত তিন ভাগে ভাগ করে সরকারকে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিল পরিচালনা করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল।
আরও বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আব্দুল মান্নান, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, সংসদ সদস্য নাজমা আকতার, জহিরুল ইসলাম জহির প্রমুখ।
এসএম/এমএমএ/
