সয়াবিন তেলের দাম সহনীয় রাখতে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি
সয়াবিন তেলের দাম সহনীয় রাখতে ভ্যাট প্রত্যাহার করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। একই সঙ্গে তিনি খোলা তেলের ব্যবসা বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার (৭ মার্চ) ভোজ্যতেলের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মো. জসিম উদ্দিন এ কথা বলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘সরকার ব্যবসাবান্ধব। তাই মজুদের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তেলের দাম বাড়ানো যাবে না।’
তেল ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ার করে তিনি আরও বলেন, ‘নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করবেন না। তা করলে রেহাই পাবেন না। সরকার এ ব্যাপারে খুবই কঠোর। এফবিসিসিআই থেকেও বাজার মনিটরিং করা হবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে ভারত তিনবার শুল্ক ও ভ্যাট সমন্বয় করেছে। বাংলাদেশেও ভ্যাট প্রত্যাহার করা উচিত।’
অসৎ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, উৎসবে বিশ্বে পণ্যের দাম কমানো হলে ভোক্তারা বেশি করে কেনেন। আর আমাদের দেশে চিত্র ভিন্ন। উৎসবে ব্যবসায়ী, কৃষক সবাই মজুদ করতে করতে দাম বাড়ায়। প্যাকেটের তেল খোলাবাজারে কেন?
তবে মিডিয়াতে যেভাবে দেখাচ্ছে সে রকম ভয়াবহ নয় তেলের বাজার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রোজা পর্যন্ত দেশে তেলের কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। বিশ্ববাজারে আজ বাড়লে দেশে আজকেই কেন দাম বাড়বে? দুই মাস পর বাড়বে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবও দেশে দুই মাস পর পড়বে। তখন হয়ত বাজারে বাড়বে দাম। কিন্তু এখনই কেন? গুটি কয়েক অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য পুরো ব্যবসায়ী সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এফবিসিসিআই এসব ব্যবসায়ীদের দায় নেবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসা করতে এসেছি। চোর-বাটপারি করতে না। খোলা তেলের মূল্য না থাকায় অনেকে ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে। তাই খোলা তেল বন্ধ করতে হবে। আল্লাহর দোহাই কেউ তেল মজুদ করবেন না। সরকারি নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি এবং মিল মালিকদের সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। একই সঙ্গে বাজার কমিটিগুলোকে তদারকি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেল বন্ডের মাধ্যমে ছাড় করার পদ্ধতি চালু করা দরকার।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সাবেক সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ব্যবসা করি লাভের জন্য। তাই বলে তেল লুকিয়ে রাখা যাবে না। প্রতি ১৫ দিন পরপর একবার তেলের দাম নির্ধারণ করা দরকার। তাহলে কেউ তেল আটকে রাখবে না।’
সভায় মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র এজিএম তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, ‘গত এক বছরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশ। একই সময়ে দেশের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ২১ শতাংশ। বাজার মনিটরিং বাড়ানো দরকার।’
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা জানান, ‘মিল মালিকদের পক্ষ থেকে বাজারে সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিদিন দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার মেট্রিক টন তেল সিটি গ্রুপের কারখানা থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। যাতে দাম না বাড়ে সে জন্য বাজার মনিটরিং বাড়াতে হবে।’
এস আলম গ্রুপের সিনিয়র মহা-ব্যবস্থাপক কাজী সালাহউদ্দিন আহাম্মদও এনবিআরকে ভ্যাট প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল তাছলিম জানান, ‘প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে সরকার ২৫ থেকে ২৭ টাকার রাজস্ব পায়। বর্তমান সময়ে এই রাজস্ব ছাড় দিলে রমজান পর্যন্ত তেলের বাজারে কোনো সংকট থাকবে না’।
পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা মিল মালিকদের প্রতি তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মিলগেটে অপেক্ষার জন্য একেকটি ট্রাক বাবদ দৈনিক ৫ হাজার টাকা ড্যামারেজ দিতে হয়। আবার ভোক্তা অধিদপ্তরের উদ্দেশে বলেন, ‘বেশি টাইট না দিয়ে ছাড় দেন। অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন—এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন, পরিচালক রেজাউল করিম রেজনু, হারুন অর রশীদ, আবু হোসাইন ভুঁইয়া (রানু), মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বশির উদ্দিনসহ বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ী নেতারা।
জেডএ/এসএ/আরএ/