সর্বোচ্চ শ্রম-দায়বদ্ধতা নিয়ে গবেষণা করুন: প্রধানমন্ত্রী
সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে এবং দায়বদ্ধতা নিয়ে জাতীয় উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে গবেষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আজকে গবেষণা করছেন, সেই গবেষণার কী ফলাফলটা হলো সেটা আমি দেখতে চাই।’
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, গবেষক ও বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, এনএসটি ফেলোশিপ’ ও ‘বিশেষ গবেষণা অনুদান’ প্রদান অনুষ্ঠানে (ভার্চুয়াল) এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষের দেওয়া রাজস্ব থেকে আপনাদের ফেলোশিপ এবং গবেষণা অনুদান দেওয়া হচ্ছে। আপনারা যারা ফেলোশিপ পাচ্ছেন সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে এবং দায়বদ্ধতা নিয়ে জাতীয় উন্নয়নে কাজ করতে হবে। কারণ আমরা চাই দক্ষ মানবশক্তি গড়ে তুলতে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে।
‘শিল্পায়নের ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব দরজায় কড়া নাড়ছে, সেটা আমাদের ধরা দরকার। তার উপযুক্ত দক্ষ মানবসম্পদও আমাদের গড়ে তুলতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আপনাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আপনাদের কাছে দেশের মানুষ যেন সহযোগিতা পায়, আপনাদের উদ্ভাবনী জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ যেন মানুষের কল্যাণে হয়, যারা আজকে গবেষণা করছেন সেই গবেষণার কী ফলাফলটা হলো সেটা আমি দেখতে চাই। আমি মনে করি এ মেধা কাজে লাগিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে পারব। বাংলাদেশ, ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ হবে, সেই পরিকল্পনাও আমি দিয়ে যাচ্ছি।
বিজ্ঞান ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিজ্ঞানের গবেষণা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা, মেডিকেলে আমাদের গবেষণা কম, সেখানে আমি গুরুত্ব দিচ্ছি। আরও বেশি করে আমাদের গবেষণা করতে হবে। এটাই পারে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
আজকে আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারতাম না। যদি গবেষণা না থাকত। এ জন্য আমি গবেষণাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যৎ বংশধরদের আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেয়ে আগামী দিনের বাংলাদেশ, অর্থাৎ ৪১ এর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজে সবাইকে মনোনিবেশ করতে হবে। যে কীভাবে ধাপে ধাপে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।
‘যদি পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোতে পারি, বাংলাদেশকে কোনো কেউ আর দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমি এটাই বলব আত্মবিশ্বাস হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। আত্মবিশ্বাস নিয়ে চললে যেকোনো কাজ করা যায়, অসাধ্য সাধন করা যায়।
বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো নির্মাণে দেশে দক্ষজনবলও তৈরি হচ্ছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, এ যে বড় বড় প্রকল্পগুলো আমরা করছি, আজকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, অথবা পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রজেক্ট এখানে আমাদের বহু ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে বহু কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এর মাধ্যমে আমি মনে করি আমাদের দক্ষ জনবলও সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, করোনাকালেও ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারছি, অর্থনৈতিকভাবে আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এখন আর কারো কাছে আমাদের হাত পেতে চলতে হয় না। আমাদের বার্ষিক উন্নয়নের ৯০ শতাংশ আমরা এখন নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি।
এটা আমরা প্রমাণ করেছি বিশ্ব ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে আমরা, আমেরিকা আসলে বন্ধ করেছিল বিশ্ব ব্যাংকের টাকা, কাজেই আমরা এটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজেদের অর্থায়নে আমরা এ পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে চলতি বছরে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’ এবং বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে বিশেষ অনুদানপ্রাপ্ত গবেষকদের হাতে সম্মাননার চেক তুলে দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
দেশে-বিদেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এমএস, এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর প্রোগ্রামের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’ প্রদান করা হয়। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৯৬ জনকে ২২৫ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর পর্যায়ে ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’ প্রদান করা হয়। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ২২০ জন ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকদের মধ্যে ১৩৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
ফেলোশিপের পাশাপাশি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে বিশেষ অনুদান প্রদান করছে সরকার। গত ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ৫ হাজার ২০টি প্রকল্পের অনুকূলে ১৭৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
এসএম/এসএন