সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের দাবি
অবিলম্বে সয়াবিন মিল (পশু খাদ্য) রপ্তানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশন। তারা বলেছেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার, প্রাণিজ খাদ্যের প্রোটিন উপকরণ ‘মিট অ্যান্ড বোন মিল’ আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করায় আমাদের ফিডমিলগুলো এখন সয়াবিন মিলের উপর নির্ভর করছে। যেখানে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে ফিডমিলগুলো সয়াবিন মিল প্রতিনিয়ত আমদানি করে আসছে সেখানে ‘সয়ামিল’ রপ্তানির সিদ্ধান্ত দেশের জন্য আত্মঘাতী।
রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের সব ফিডমিলগুলোর চাহিদা মেটানোর জন্য ‘সয়াবিন মিল’ দেশীয় সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। দেশে ‘সয়াবিন মিল’ এর মোট চাহিদা বছরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এবং অবশিষ্ট ২০ থেকে ২৫ ভাগ আমদানির করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার, প্রাণিজ খাদ্যের প্রোটিন উপকরণ ‘মিট অ্যান্ড বোন মিল’ আমদানি বন্ধ করায় আমাদের ফিডমিলগুলো এখন সম্পূর্ণভাবে সয়াবিন মিলের উপর নির্ভর করছে। যেখানে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে ফিডমিলগুলো সয়াবিন মিল প্রতিনিয়ত আমদানি করে আসছে সেখানে গণমাধ্যমে সয়ামিল রপ্তানির সিদ্ধান্ত দেশের জন্য আত্মঘাতী। তাই আমরা মনেকরি সয়াবিন রপ্তানি বন্ধের পাশাপাশি মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এম বি এম আমদানি আবার শুরু করা হোক। সয়াবিন মিল রপ্তানি হবে এমন খবরে স্থানীয় সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন মিলের দাম দফায় দফায় কেজি প্রতি ১৫-২০ টাকা বৃদ্ধি করেছে ফলে পশু খাদ্যের মধ্যে শুধু সয়াবিন মিল নয় অন্যান্য সব পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র সয়াবিন মিল রপ্তানির কারণে গত ৩ মাসে পশু খাদ্যের মূল্য প্রায় ২০ শতাংশ উপরে বৃদ্ধি পেয়েছে যার প্রভাবে মাংসের দাম আজকে ঊর্ধগতি এবং দুগ্ধ খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০-৫০ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খামার ও খুচরা পর্যায়ে তরল দুধের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ এবং বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করতে হবে- বিগত ১০ বছরে মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশ বৃদ্ধি হলেও খামারিদের তরল দুধের দাম বাড়েনি এক টাকাও। মিল্কভিটা প্রতিষ্ঠানসহ দেশের প্রাইভেট অন্যান্য সংস্থা ৩২ থেকে ৪২ টাকা লিটার দুধ সংগ্রহ করে থাকে। অথচ দুধের উৎপাদন খরচই হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা এলাকাভেদে। এমন অবস্থায় সরকার থেকে খামারিদের তরল দুধের মূল্যের উপর ভর্তুকি অথবা ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানি বন্ধ করতে হবে। দেশের ক্রমবর্ধমান প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির টেকসই জাত উন্নয়ন ও রোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মাংস, দুধ ও ডিমের উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত দশকে মাংসের উৎপাদন প্রায় ৭ গুণ, দুধের উৎপাদন ৪ দশমিক ৬৭ গুণ এবং ডিমের উৎপাদন প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাংস বাৎসরিক উৎপাদন হয়েছে ৭৬ দশমিক ৭৫ লাখ মেট্রিক টন, দুধ বাৎসরিক উৎপাদন হয়েছে ১০৬ দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টন ও ডিম বাৎসরিক উৎপাদন হয়েছে ১৭৩৬ কোটি। জনপ্রতি প্রতিদিন ১২০ গ্রাম মাংস এবং সপ্তাহে ২টি ডিম সরবরাহে আমরা ইতোমধ্যেই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। দুধে জনপ্রতি প্রাপ্যতা ১৭৫ মিলিতে উন্নীত হয়েছে।
তারা বলেন, পশুখাদ্যর মূল্য নিয়ন্ত্রণে উপজেলা পর্যায়ে টিসিবি’র মাধ্যমে পশুখাদ্য পোঁছে দিতে হবে। পশুখাদ্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেশন বন্ধ করে কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে। জরুরি শিশুখাদ্য নয় বরং বাল্ক ফিল্ড মিল্ক নামে নিম্ন মানের গুড় দুধ আমদানি বন্ধ করে দেশীয় শিল্পের দিকে নজর দিতে হবে। ফর্মুলা মিল্কের উপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে সুলভ মূল্য শিশু খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। দুগ্ধ ও মাংস খামারের বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাণিজ্যিক বিলের আওতায় থাকার কারণে দুগ্ধ ও মাংসের উৎপাদন খরচ অত্যাধিক।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন, বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন—ফিশ ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হামিদ। এছাড়া বাংলাদেশের সব জেলা-উপজেলার খামার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
এসএম/আরএ/