বিদেশিরা নয়, কেবল জনগণই পারে দেশের সরকার বদলাতে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিদেশিদের হস্তক্ষেপে কখনও সরকার বদলায় না, শুধু দেশের জনগণই পারে সরকার বদলাতে। এমনটিই মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি (জেএফকে) বিমানবন্দরে পৌঁছান সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন তিনি।
জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক এবং র্যাব এর সাবেক বর্তমান ৭ কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাতদিনের সফরে ফ্রান্সের প্যারিস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে তিনি নিউ ইয়র্ক পৌঁছান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের দেশের কিছু লোক সবসময়ই দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবরোধের জন্যে অনুরোধ করেন। তারা মনে করেন যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করলেই বাংলাদেশের সরকার বদল হয়ে যাবে। অথচ তারা জানেন না যে, সরকার বদল বিদেশিরা করতে পারেন না। সরকার বদল করবে বাংলাদেশের জনগণ। বাংলাদেশের জনগণ খুব সুখে আছে। তাই ওসব অপপ্রচারে কোনো ফায়দা আসবে না।'
জেএফকে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, 'আমরা সকলেই তো জানি যে, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা বা স্যাঙ্কশনের দেশ। প্রত্যেক দেশকেই কিছু না কিছু স্যাঙ্কশন দিয়ে আসছে। ইন্ডিয়াকেও দিয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করেছিল। সবকিছুই সাময়িক। আমি আশা করছি, বাংলাদেশের র্যাব সম্পর্কে যখন তারা সত্য কথা জানবে, ওই ৭ জনের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও তারা সরিয়ে নেবে। নিজেরাই নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করবে।'
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আপনারা যারা আমেরিকার নাগরিক, তাদের বড় একটি দায়িত্ব রয়েছে মার্কিন প্রশাসনকে বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রকৃত তথ্য অবহিত করার। এক্ষেত্রে সরকারের প্রতি তাকিয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। আপনারা সেই নেতৃত্ব নিতে পারেন। তাহলেই তারা বিভ্রান্তিতে থাকবেন না। এ ছাড়া আপনারা সকলেই তো জানেন যে, আমাদের কিছুই লুকানোর নেই। সবকিছু ওপেন। তাই সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রত্যেক প্রবাসী কাজ করবেন বলে আশা করছি।'
ড. মোমেন আরও জানান, দুইটি অনুষ্ঠান ছিল ইউরোপে। একটি জার্মানির মিউনিখে। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলাপ হওয়ার কথা থাকলেও এবারের সবকিছুতেই রাশিয়া ও ইউক্রেইন পরিস্থিতি প্রাধান্য পেয়েছে।
তিনি বলেন, 'সকলেই ভীতির মধ্যে কথা বলেছেন। মনে হচ্ছে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে গোটাবিশ্ব। এমন অবস্থায় আমি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছি জলবায়ুর ভয়ংকর ছোবলে প্রতি বছর বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। তাদের বসবাসের কোনো অবলম্বন নেই। রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেইনকে কেন্দ্র করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় জলবায়ু তহবিলের ওপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কার কথাও এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন, আমি জলবায়ু সম্মেলনেও সে আশঙ্কা প্রকাশ করে এসেছি।
এর জবাবে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ না নিলে বিরাটসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বে। বহুদেশ অস্থিরতায় নিপতিত হবে।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ ও প্রদানের ব্যাপারে জোরালো কোনো কথা শুনিনি।
আসছে এপ্রিলের ৪ তারিখে ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিনকেনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেনের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। ওই বৈঠকের মধ্য দিয়েই দুই দেশের মধ্যেকার কিছু ইস্যু নিয়ে মতভেদের পরিসমাপ্তি ঘটবে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো আশা করছে।
জাতিসংঘের চলতি সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ শাহিদের সঙ্গে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দ্বি-পাক্ষিক একটি বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জাতিসংঘ সফরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। এরপর জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গেও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের।
জেএফকে এয়ারপোর্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মনোয়ার হোসেন, ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারের নেতা-কর্মীবৃন্দ।
টিটি/