জাতির পিতার সোনার মানুষ এখন তৈরি হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চেয়েছিলেন। সোনার মানুষ এখন তৈরি হচ্ছে এবং সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের প্রকাশনা উৎসব, বঙ্গবন্ধু স্কলার বৃত্তি প্রদান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজের চূড়ান্ত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। রাজধানী সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এত গান,এত কবিতা, এত রচনা লেখা হয়েছে যা পৃথিবীর অন্য কোন নেতার নামে লেখা হয়েছে কিনা, জানি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানটাকে মানুষ যে এত আন্তরিকতার সাথে গ্রহন করেছে...সেখান থেকে আমি মনে করি যে শুধু গ্রহণ করলেই হবে না। আমাদের নতুন প্রজন্মকে সেই আদর্শে আদর্শবান হয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘টার্গেট ছিল ২০২১ সালের সুবর্ণজয়ন্তি পর্যন্ত বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসা। কিন্তু এরপরে আমরা দিয়েছি ২০৪১ সাল। আজকে নতুন প্রজন্ম ২০৪১ সালের সৈনিক হবে, দেশ এগিয়ে যাবে, উন্নয়নশীল দেশ হতে আমরা ধাপে ধাপে উন্নত দেশে উন্নীত হব। এবং সেটা করা খুব কঠিন কাজ না। আমরা সেটা করতে পারব।’
বাংলাদেশের মানুষের আজকের যে অবস্থা সেটা ১৩/১৪ বছর আগেও এমন ছিল না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা হলো বাস্তবতা। কিন্তু আমরা সেই পরিবর্তনটা আনতে পেরেছি। এটা হলো আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। কিন্তু এটা অব্যাহত রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে দারিদ্রের হার কমিয়েছে, সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছে, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পেরেছে, পুষ্টির নিরাপত্তা দিতে পেরেছি। সেইসঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর যে গুরুত্ব দিয়েছিলাম সেখানেও আমরা যথেষ্ট সফল হয়েছি।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর লেখা ১১টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ১১টি বইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর’ বইটির সম্পাদনা করেন। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ছাড়াও অনুষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্বাচিত ১৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলার’ বৃত্তি এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ’ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত বিজয়ী ১শ’ জনের মাঝে নির্বাচিত ১০ জনকে পুরস্কার তুলে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
মুজিববর্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এবং জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বিত আয়োজনে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলার’ বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। স্নাতক পর্যায়ের সামাজিক বিজ্ঞান, কলা ও মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, আইন, ভৌত বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান, শিক্ষা ও উন্নয়ন, চিকিৎসা, চারু-কারু, কৃষি বিজ্ঞান এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিক্ষেত্রের প্রত্যেক অধিক্ষেত্র হতে একজন করে মেধাবী শিক্ষার্থীকে সুনির্দিষ্ট মানদন্ডের ভিত্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলার’ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তাদের প্রত্যেককে বৃত্তি হিসেবে এককালীন তিন লক্ষ টাকার অ্যাকাউন্ট পে চেক, সনদ এবং ১টি সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে।
মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে জাতির পিতার জীবন ও কর্ম সর্ম্পকে তরুণ প্রজন্মকে জানানোর উদ্দেশে আয়োজন করা হয় ১০০ দিনব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ’ প্রতিযোগিতা। ২০২০ সালের ১লা ডিসেম্বর হতে ২০২১ সালের ১০ই মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে আয়োজিত এই কুইজ প্রতিযোগিতায় নিবন্ধন করেন ১৫ লাখ ৭৬ হাজার প্রতিযোগী। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তি পুরস্কৃত হয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ১০ জনের হাতে ল্যাপটপ এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর করা সার্টিফিকেট তুলে দেন স্পিকার। বাকিদের পুরস্কার যার যার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানায় আয়োজক কমিটি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি এবং আন্তর্জাতিক প্রকাশনা ও অনুবাদ উপ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফখরুল আলম। সাহিত্য অনুষ্ঠান উপকমিটির আহ্বায়ক এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের পূর্বে ধারণকৃত বক্তব্য অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুজিববর্ষের থিম সংগীত ‘তুমি বাংলা ধ্রুবতারা, হৃদয়ের বাতিঘর’ পরিবেশন করা হয়।
এসএম/এমএমএ/