মার্চ থেকে বিমানে পিএসএস চালু: প্রধানমন্ত্রী

এ বছরের মার্চ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্যাসেনজার সার্ভিস সিস্টেম (পিএসএস) সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘পিএসএস সিস্টেমের ফলে অনলাইনে টিকেটিং, রিজার্ভেশন, বিমান বন্দরে পৌঁছানোর পূর্বে চেকিং সবকিছু অনলাইনে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে পৃথিবীর সব দেশে এই ব্যবস্থাটা আছে। আমরা এই ক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে ছিলাম। বিমান সেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে, আগামী মার্চ মাস থেকেই এটা চালু করা হবে।’
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
অন্যদিকে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বলাকা ভবন প্রান্তে যুক্ত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোস্তফা কামাল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল যে আমরা নিজেদের বিমান ব্যবহার করব। আমার নিজের অভিজ্ঞতা আছে বিমানের তখন কি বিধ্বস্ত অবস্থা ছিল। তাই ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন উদ্যোগ নেই। যদিও তখন আর্থিকভাবে খুব সীমাবদ্ধতা ছিল তার মাঝেও আমরা চেষ্টা করেছিলাম পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উন্নয়নে আরও কিছু বিমান বহরে যুক্ত করি। অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক ফ্লাইট চালু করি। মাত্র ৫ বছর তেমন কাজ করে যেতে পারিনি। দ্বিতীয়বার যখন সরকারে আসি। তখন দেখি নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস, প্যারিস, ফ্রাংকফুর্ট, মুম্বাই, নারিতা এবং ইয়াঙ্গুন রুটে বিমান চলাচল করত সেগুলো সব লোকসান দেয় এবং একে সব বন্ধই করে দিতে হয়।’
কাজেই আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এই জরাজীর্ণ বিমানে যখন চড়তাম, এখনও মনে আছে সেখানে কোনো ভালো করে গানও শোনা যেত না। আর যদি আমি জানালার সীটে বসতাম তখন ঝড় ঝড় করে পানিও পড়ত। কোনো মতে কাপড় দিয়ে সেই পানি পড়া বন্ধ করা হত। এমনই আমাদের বিমানের দুর্দশা ছিল। বরং আমি আমাদের পাইলটদের সবসময় ধন্যবাদ জানাতাম, এই ধরনের একটা অবস্থায় তারা যে সাহস করে বিমান চালাচ্ছে, এক একটা এয়ারক্রাফট চালাচ্ছে, এটাই আমার কাছে বড় জিনিস মনে হত বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।’
তিনি বলেন, ঢাকায় কেবল একটা আমাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল। কিন্তু একটা স্বাধীনে দেশে কেন একটা মাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকবে তাই সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি করি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারে এসে রাজশাহী বিমানবন্দর, বরিশাল বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর বন্ধই করে দেয়। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে পুনরায় সেগুলো চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে ৪টি বৃহৎ পরিসরের বোয়িং-৭৭৭-৩০০-ইআর, নতুন প্রজন্মের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত ৪টি ৭৮৭-৮ ও ২টি ৭৮৭-৯ সহ মোট ৬টি ড্রীমলাইনার, ৬টি ৭৩৭-৮০০ এবং ৫টি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ সংগ্রহ করি। এই ২১টি উড়োজাহাজ নিয়ে বিমান চলছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং দক্ষ জনবল দ্বারা অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার রিপ্লেসমেন্ট এবং বোয়িং ৭৮৭ এর সি-চেক কার্যক্রম এবার আমরাই করতে শুরু করেছি। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশ বিমানই করছে। এই যে সফলভাবে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনস প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই কাজগিুলি করতে পারল, তাতে কিন্তু আমাদের অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে। কাজেই এটাকে কার্যকর করার দিকে আমাদের আরও বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে। যাতে আমাদের আর অন্যের দিকে নির্ভরশীল হয়ে থাকতে না হয় বলে মনে করেন তিনি।’
গ্র্যান্ড হ্যান্ডলিং এক সময় খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। এখন অনেকটা দক্ষ এবং কার্যকর গ্র্যান্ড হ্যান্ডলিং করার জন্য আমরা একটা আলাদা ইউনিট তৈরি করতে চাই। বিমানকে বলব, এটার জন্য কিছু প্রশিক্ষণের দরকার আছে। লোকবলের দরকার আছে এবং অত্যন্ত দক্ষতা, সততার সঙ্গে যেন গ্র্যান্ড হ্যান্ডলিং করতে পারে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এটা যত দ্রুত পারা যায় করতে হবে।
চতুর্থ প্রজন্মের বিমানগুলোতে যাত্রীদের ওয়াই-ফাই সুবিধাসহ বিভিন্ন প্রকার ইনফ্লাইট বিনোদন সেবা প্রদান করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আধুনিক যুগে মানুষ কিন্তু কোথায় গিয়ে বসে থাকতে চায় না। তার নিজের কিছু কাজ করতে হয়। সেই কাজগুলো করার ক্ষেত্রে আমাদের নতুন বিমানগুলিতে সেই সুবিধাটা আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আরেকটা ভাল খবর কিছুক্ষণ আগে আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। সেটা হচ্ছে, আগামী মার্চ (২০২২) থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্যাসেনজার সার্ভিস সিস্টেমটাকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করে দিচ্ছেন। অনলাইনে টিকেটিং, রিজার্ভেশন, বিমান বন্দরে পৌঁছানোর পূর্বে চেকিং সবকিছু অনলাইনে হবে। এটা আমাদের প্রবাসীদের জন্য খুবই আনন্দদায়ক হবে। কারণ বিমানের টিকিট কিনতে গেলে সিট খালি থাকলেও বলে দেয় সিট খালি নাই। অথবা নানা ধরনের সমস্যায় ভুগতে হয়। অথচ সবাই এখন ব্যস্ত থাকে, কাজ করে। কিন্তু অনলাইনে টিকিট কেনা বা সিট বুকিং করা বা চেকিং করা অর্থ্যাৎ আজকে আন্তর্জাতিকভাবে পৃথিবীর সব দেশে এই ব্যবস্থাটা আছে। আমরা এই ক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে ছিলাম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাস্টমস সিস্টেমটাও সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করতে হবে। মানুষ যখন বিদেশ থেকে পণ্য ক্রয় করে নিয়ে আসতে চায়, তারা যেন কোনো হয়রানির মধ্যে না পড়ে। যদি ডিজিটালাইজড হয়ে যায় তাহলে খুব সে বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে বলে জানান তিনি। প্রায় এক কোটি লোক প্রবাসে আছে। ছুটির সময় তারা দেশে আসে। সেই কথাটা বিবেচনা করে তারা যেন কোনো হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে আমাদের আরও যত্নবান হতে হবে। যদিও এখন অনেক উন্নত হয়েছে। আমাদের আরও উন্নত হোক সেটাই আমরা চাই।’
নতুন যে উড়োজাহাজগুলো ক্রয় করা হয়েছে সেগুলো যত্ন সহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করার অনুরোধও জানান তিনি। বিমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যায়। এটা বাংলাদেশের একটা প্রতীক। এটাই সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। কাজেই বিমানের আরও উন্নতি হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসএম/এমএমএ/
