১১ জেব্রার মৃত্যু: ফৌজদারি মামলার সিদ্ধান্ত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে জানুয়ারি মাসে ১১টি জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে দেওয়া মতামত অনুযায়ী, দায়ীদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় মামলাও করা হবে। এ ছাড়া তদন্ত কমিটির ২৪টি সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব মো. মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মো. মিজানুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) কেয়া খান এবং উপসচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা দীপংকর বর এ তথ্য জানিয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যের বরাতে তিনি জানান, ঘাসে অতিরিক্ত নাইট্রেটের প্রভাব ও মিশ্র ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে জেব্রাগুলোর মৃত্যু হয়েছে মর্মে তদন্ত কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে, প্রথমদিকের তিনটি জেব্রার ২ ও ৩ জানুয়ারি মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়া এবং আঘাতজনিত কারণ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে মৃত তিনটি জেব্রার পেট ধারালো কিছু দ্বারা কাটা হয়েছে মনে করছে কমিটি।
কে বা কারা মৃত তিনটি জেব্রার পেট কেটেছেন তা উদঘাটন করার জন্য নিবিড় তদন্তের প্রয়োজন মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কর্তব্যরত ভেটেরিনারি কর্মকর্তার চাহিদা মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাফারি পার্ক মেডিকেল বোর্ডের সভা আহ্বান করবেন মর্মে বিধান থাকা সত্ত্বেও এতগুলো জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরও জরুরিভিত্তিতে মেডিকেল বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়নি। যা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার শামিল। কোনো প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার প্রচলন থাকলেও এ ক্ষেত্রে থানায় কোনো জিডি করা হয়নি, যা রহস্যজনক।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব গত ২২ জানুয়ারি সাফারি পার্ক পরিদর্শন করেন। ওইদিন পর্যন্ত আটটি জেব্রা মারা গেলেও প্রকল্প পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি কর্মকর্তা বা কর্মরত অন্য কেউ জেব্রার মৃত্যুর ঘটনাটি সচিবকে জানাননি। এতে প্রতীয়মান হয় প্রথম থেকেই জেব্রা মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য ও সরকারি কর্মচারী আচরণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, যা দায়িত্ব অবহেলার শামিল।’
তদন্ত কমিটির এসব মতামত বিবেচনায় নিয়ে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ফৌজদারি মামলা ও বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।
তথ্য কর্মকর্তা আরও জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রাণী মৃত্যুরোধ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য করণীয় বিষয়ে তদন্ত কমিটির ১১টি স্বল্পমেয়াদি, চারটি মধ্যমেয়াদি এবং নয়টি দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
জেব্রা মৃত্যুর ঘটনার কারণ উদঘাটন, দায়-দায়িত্ব নিরূপণ ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ প্রদানের জন্য পরিবেশ, বন পরিবর্তন জলবায়ু মন্ত্রণালয় গত ২৬ জানুয়ারি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ৩০ জানুয়ারি ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পরবর্তী সময়ে কমিটিতে আরও দুজন বিশেষজ্ঞ সদস্য এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জেলা প্রশাসক, গাজীপুরের প্রতিনিধি হিসেবে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে কো-অপ্ট করা হয়। তাছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিকে কাজের সহায়তা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য তিনজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
আট সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি এবং তিন সদস্যবিশিষ্ট সহায়ক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৯ ও ১২ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ ১৯ ফেব্রুয়ারি কমিটির সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে তদন্ত কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদন জমার মেয়াদ ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আরও সাত কার্যদিবস বাড়ানো হয়।
এসএ/