আজ থেকে সাস্টের ছাত্র-শিক্ষকরা ক্লাসরুমে
লেখা ও ছবি : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
ছাত্রী হলের সংকট নিরসনে ব্যর্থতার পর প্রতিবাদ, অধ্যাপিকার খারাপ মন্তব্যের প্রতিবাদ-এভাবে দফায়, দফায় আন্দোলন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং সবশের্ষ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবীতে আমরণ অনশনে যাওয়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাস্ট) তার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত শিক্ষক সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের উদ্যোগে আমরণ অনশন ও আন্দোলন থেকে সরে এসেছে।
আন্দোলনরত ছাত্র, ছাত্রীদের টানা ৩৬ দিন আন্দোলনে ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী পদার্থবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের অনুরোধে আমরণ অনশন থেকে সরে আসেন।
সাবেক যে পাঁচ ছাত্রকে আন্দোলনকারীদের অর্থসাহায্য দেবার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, তাদের জামিন ও মামলা প্রত্যাহারেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে নিশ্চিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে ঘোষণা করেছিলেন ড. জাফর ইকবাল।
এরপর আন্দোলনের ছাত্র, ছাত্রীদের সঙ্গে সিলেটে এসে সমঝোতা সভা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণি ও উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান নওফেল। তাদের দাবী তারা ভালোভাবে বিবেচনা করবেন ও আচার্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হবে বলে আশ্বাস দেন। তাদের অনেক যৌক্তিক দাবী তারা মেনেও নেন।
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি কমে যাওয়ায় এবং ব্যাপকভাবে টিকা কার্যক্রম সফল হওয়ার পর শ্রেণীকক্ষে পড়ালেখার প্রয়োজনীয়তায় সাস্ট খুলেছে আজ মঙ্গলবার।
এর আগে সাস্ট সিন্ডিকেট সভা ডেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করে দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
আজ ২২ ফেব্রুয়ারি, একুশের শহীদ দিবসের পর দিন থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সাস্টের বিভিন্ন গুরুত্বপূণ স্থান-কিলো রোড, গোল চত্বর, ফুড কোট, চাষাভূষার টং (আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদের অন্যতম স্মারক), ইউনিভার্সিটি সেন্টার, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি ঘুরে দেখা গিয়েছে, ড. জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হকের স্মৃতিধন্য এই ক্যাম্পাস ছাত্র, ছাত্রী ও অধ্যাপকদের আলাপ-আলোচনা এবং কার্যক্রমে মুখরিত হয়ে আছে।
অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে ব্যস্ত শিক্ষকরা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ছাত্র, ছাত্রীদের চাহিদা মেটাতে তুমুল ছোটাছুটি করছেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় বাংলাদেশের প্রথম ও অন্যতম প্রধান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো আগের রুটিনে পরীক্ষা ও শ্রেণী কার্যক্রমে ব্যস্ত হয়ে আছে।
ছাত্র, ছাত্রীরা পরীক্ষা কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছেন।
বহুদিন পর সাস্টে ফিরতে পেরে, ক্লাস করতে পেরে খুবই খুশি ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকরা। ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী ইশরাত জাহান ইমু বলেছেন, ‘আমাদের প্রাণের প্রিয় ক্যাম্পাসে আবার ক্লাস স্বশরীরে করতে পেরে আমি অন্যদের মতো খুব খুশি হয়েছি।’
বাংলাদেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেমিস্টার পদ্ধতি সাস্টে চালু করা হয়েছে। ফলে লেখাপড়ার চাপ কেমন তার বিলক্ষণ জানা। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমাদের আন্দোলনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়ায় সাস্টে সেশনজনের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তাতে আমাদের শিক্ষা ও ভবিষ্যত জীবন ব্যাহত হতো।’
এরপর তিনি অন্যদের মনের কথা বলেছেন, ‘আমরা আশা করি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আর বন্ধ হবে না। সাস্টের জীবনে আর কোনো অনাকাংখিত ঘটনা ঘটবে না।’
অত্যন্ত মেধাবী এই ছাত্রী জানিয়েছেন, ‘সরাসরি ক্লাস করতে না পারলে ও করাতে না পারলে ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক অংশগ্রহণ ঘটে না। আর আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অনলাইন ক্লাসে ছাত্র, শিক্ষক কেউই পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনভাবে বেড়ানো ও ক্লাস করতে পেরে খুব খুশি তৃতীয় বষের উম্মে আতিফা, ‘অনেকদিন বন্ধের পর আবার ক্লাসে ফিরতে পেরে আমারও খুব ভালো লাগছে।’
তিনি আশা করছেন, ‘আমাদের আগে যে সময় নষ্ট হয়েছে, সেটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)’র ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন বলেছেন, ‘আগের রুটিন লাইফ অনুসারে আমাদের সাস্টের বিভিন্ন বর্ষ ও বিভাগের ছাত্র, ছাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধিতে নিজেরা এসে ক্লাস করতে পারছে। আমাদের খুব ভালো লাগছে।’
ওএস।