বিজ্ঞান শিক্ষাকে সহজ বাংলায় তুলে ধরার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
বিজ্ঞানবিষয়ক পড়াশোনা ‘সহজ বাংলায়’ শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞানের পরিভাষার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হওয়া যাবে না আবার সব জায়গায় প্রতিশব্দ করতে হবে, পরিভাষা করতে হবে আমি এটা বিশ্বাসও করি না।’
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞানের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিজ্ঞানের বিস্তার ছাড়া একটা জাতির অগ্রগতি হতে পারে না।’
বিজ্ঞানের প্রসারে বিজ্ঞান শিক্ষাকে ‘সহজ বাংলায়’ প্রকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞানের যুগে নতুন নতুন যে আবিষ্কার হয় সেগুলো কিভাবে আমাদের দেশের মানুষের কাছে সহজ ভাবে আমাদের ভাষায় ব্যবহার করার জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করা যায় সে বিষয়টা দেখতে হবে।’
বিজ্ঞানের পরিভাষা করার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব জায়গায় আমাদের প্রতিশব্দ করতে হবে, পরিভাষা করতে হবে আমি এটা বিশ্বাস করি না। কারণ বিজ্ঞানের যুগে বিজ্ঞান যেভাবে বিস্তার লাভ করছে সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষাই কিন্তু আছে। ইংরেজী, ফ্রেঞ্চ বা অন্য ভাষাও রয়েছে, যা এর ভেতর যুক্ত হয়ে গেছে। আর আমাদের বাংলা ভাষায় কিন্তু ৮ হাজার ভাষার শব্দ মিলে মিশে গেছে। কাজেই এই ব্যাপারে আমাদের খুব রক্ষণশীল না হয়ে প্রচলিত যে শব্দগুলো, প্রচলিত বিজ্ঞানে যে টার্মগুলো সেগুলো দিয়েই কিন্তু বাংলা ভাষায় সহজভাবে বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থাটা করা যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রচলিত যে সমস্ত বৈজ্ঞানিক শব্দগুলো রয়েছে সেগুলোর পরিভাষা করে আরও দুর্বোধ্য না করাই ভালো। সেগুলো আমাদের বাংলা শব্দের সঙ্গে বাংলা ভাষার সঙ্গে মিশে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞান শিক্ষা, বিজ্ঞান গবেষণা, গবেষণালব্ধ যে সমস্ত জ্ঞান সেটা মানুষের কাজে যেন ব্যবহার হয়। এটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমাদের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত বিজ্ঞান মনস্ক। অনেক মেধাবী। এই মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিলে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারে।’
গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণা একান্ত দরকার। আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে, আমাদের শিক্ষা বিষয়ে, বিজ্ঞানের অন্যান্য দিক, এমনকি শিল্প বিষয়ে। সব বিষয়ে কিন্তু গবেষণা একান্তভাবে দরকার।’
ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটে বাংলা কনটেন্ট তৈরি করা বা বাংলা ভাষাটা ব্যবহার করা।…শিক্ষকদেরকে কনটেন্ট তৈরি করার জন্য আমরা প্রশিক্ষণও দিয়েছি। তারা নিজেরাই যেন কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন।’
বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম এখন করেছি, আমরা কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দিচ্ছি। আমাদের ছেলে মেয়েরা যাতে এই শিক্ষা পায় তার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘কম্পিউটার শিক্ষার ওপর আমরা গুরুত্ব দেই এবং আমাদের দেশের মানুষকে আমরা উদ্বুদ্ধ করি। যে এটা শিখতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানের সাথে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা পিছিয়ে যেতে পারি না। প্রযুক্তি শিক্ষা আমাদের নিতে হবে। প্রযুক্তি শিক্ষা ছাড়া আমরাএগোতে পারি না।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বেলায়েত হোসেন তালুকদার, বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি এবং হেড অব অফিস বিয়েট্রেস কালডুন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল।
এসএম/এমএমএ/