বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার

‘সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটন করতে হবে’

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ সোমবার (২১শে ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় ‘আমাদের ভাষা আন্দোলন সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের মৃত্যুবার্তা’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।

ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।

সম্মানিত আলোচক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, কলাম লেখক মমতাজ লতিফ, রাজশাহী মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক সুজিত সরকার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আলা উদ্দিন, প্রজন্ম ’৭১-এর সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদের কন্যা শহীদসন্তান শাওন মাহমুদ, সুইডেনে অবস্থানকারী নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিক সাব্বির খান এবং নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেতা কাজী মুকুল।

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘এই উপমহাদেশে ১৮৬৭ সালে উত্তর ভারতের হিন্দি-উর্দু বিরোধ জন্ম দিয়েছিল সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের। ১৯৪৮-এর বাংলা-উর্দু বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটেছে এই সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের সমাধি রচনার মাধ্যমে। পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির অভিব্যক্তি ছিল রাজনৈতিক ইসলাম। পাকিস্তানের ২৪ বছরের উপনিবেশসুলভ শাসনামলে দেখেছি- ইসলামের নামে জাতিগত নিপীড়ন, শোষণ, হত্যা ও সন্ত্রাস সহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ এমনকি গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধকেও কীভাবে জায়েজ করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় ঘটলেও স্বাধীন বাংলাদেশে পরাজিত রাজনৈতিক ইসলাম আবার ব্রাম স্টোকারের পিশাচ কাহিনী ড্রাকুলার মতো কবর থেকে উঠে এসেছে। রক্তপানের জন্য বেছে নিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক মানবতার বোধকে। বাঙালিত্বের যে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ১৯৪৮-এ ভয় পেয়েছিলেন জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী, ১৯৭১-এ ভয় পেয়েছেন, ইয়াহিয়া ও গোলাম আযমরা- সেই চেতনার আলোই বধ করবে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারকারী সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে।’

আরমা দত্ত এমপি বলেন, ‘৭১-এ ভাষার উপর ভিত্তি করে যে জাতিরাষ্ট্র গঠিত হয়েছে তা পৃথিবীতে অনন্য। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষার জন্য তৎকালীন পাকিস্তানের সংসদে দাঁড়িয়ে একা যে অসামান্য লড়াই চালিয়েছিলেন তা তিনি শুধুমাত্র মাতৃভাষা ও বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদা ও আত্মপরিচয়ের চিহ্নকে রক্ষা করার জন্য, তা খ্যাতির জন্য নয়। আমরা যেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সেই স্বপ্ন ও প্রত্যাশাকে জাগরুক রাখতে পারি।’

মানবাধিকারনেত্রী আরমা দত্ত এমপি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষা আন্দোলনের পুরোগামী নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিচারণ করে তরুণ প্রজন্মকে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করার আহ্বন জানিয়ে বলেন, ‘আজকের দিনে শুধুমাত্র ফুল দিয়ে ছবি তুলে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে সেখান থেকে তরুণদের নিবৃত হতে হবে।’

শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের আত্মদানের কারণে শুধু ভাষার অধিকার ফিরে পেয়েছি তাই নয়, প্রকৃতপক্ষে আমরা ফিরে পেয়েছি একটি জাতি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গৌরব এবং মর্যাদা। তাদের ঋণ অপরিশোধ্য। দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রবক্তা মুসলিম লীগের নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান আন্দোলনের সময় বলেছিলেন, হিন্দু ও মুসলমান সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধর্ম, দর্শন, সামাজিক সংস্কার ও সাহিত্য থেকে উদ্ভূত। এমনকি হিন্দু ও মুসলমানগণ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ইতিহাসের ধারা থেকে তাদের অনুপ্রেরণা লাভ করে থাকেন। প্রতিক্রিয়াশীল নেতা খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেছিলেন, আমাদের সংগ্রাম ভারত সরকারের বিরুদ্ধে নয়, হিন্দুদের বিরুদ্ধে। তাদের এই ভাবাদর্শের পরিণাম দেশবাসী দেখেছে। দেশভাগের ফলে পাকিস্তান ও ভারতে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা চরম রূপ ধারণ করেছিল। জীবন বাঁচাতে পৃথিবীর বৃহত্তম দেশান্তর তখন সংঘটিত হয়। ব্রিটিশদের বিভাজন ও শাসন নীতির ফলে সৃষ্টি এই ভয়াবহতায় প্রায় দেড় কোটি লোক বাস্তুচ্যুত হন।’

অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের অসাম্প্রদায়িক চেতনা একদিকে জাতিগত বৈষম্য ও ধর্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনার উপর এক ধরনের চপেটাঘাত, অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্য দিয়ে বাঙালি সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে উদ্ভুদ্ধ হয়; যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে শরীফ শিক্ষা কমিশন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছয় দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, এবং অবশেষে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। এই ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য এখানে যে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে পৃথিবীর কাছে একটি সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, সাধারণ মানুষ যদি কোন অভিন্ন সূত্রে ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে যে কোনো পরাশক্তিকে প্রতিহত করা, তথা সর্বাত্মক আন্দোলনের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করা সম্ভব।’

শহীদসন্তান শাওন মাহমুদ বলেন, ‘ভাষা রক্ষার লড়াইয়ে তৈরী হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন, যুব সংগঠন, রাজনৈতিক দল। এ সময়ে জাতীয় ছাত্র সংগঠন হিসেবে তৈরী হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন। দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার শাখার বিস্তার ঘটায় তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ধীরে ধীরে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ছড়িয়ে গিয়েছিল। এমনকি বিভিন্ন সংগঠন তাদের সাম্প্রদায়িক নাম বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক মতাদর্শে, সংগঠনের নামে পরিবর্তন এনেছিল। সকলে নিজের ধর্ম, রাজনৈতিক মতাদর্শকে তুলে রেখে একসাথে পথ হাঁটবার সেতু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে উঠেছিল আপনাআপনি। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দৃঢ় সম্মিলনে এক স্বাধীন ভূমির স্বপ্ন সূচিত হয়েছিল। দল, মত, ধর্ম, শ্রেণী নির্বিশেষে আমরা সবাই বাঙালির ভাবনায় পথ হয়েছিল প্রসারিত। আমরা এই অনন্য, অসাধারণ অর্জনটিকে উগ্রবাদের কলূষিত বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে খুব ধীরে ধীরে হত্যা করেছি। এর থেকে আমাদের দ্রুত উত্তরণ করতে হবে।’

নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেতা কাজী মুকুল সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা যেভাবে আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে- তরুণ প্রজন্মকে এর অশুভ প্রভাব থেকে দূরে রাখতে হলে অসাম্প্রদায়িক মানবিকতার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।’

এপি/

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলে ক্ষুদে শিশুদের পুতুল নাচে মুগ্ধ দর্শক

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

পুতুল নাচ গ্রাম-বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য নাচ। গানের তালে তালে ও বাদ্যযন্ত্রে সুরের মূর্ছনায় পুতুলের নৃত্য হয়। এটি গ্রামীণ জনপদে শিশু-কিশোর ও সর্বস্তরের মানুষের বিনোদনের মাধ্যম এবং পুতুল নাচ শিশুদের কাছে এক অন্যরকম উৎসবের মতো। এই পুতুল নাচ কালের আবর্তে আর আধুনিক সাংস্কৃতির আগ্রাসনে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। মাঝে মধ্যে পহেলা বৈশাখ আর হাতেগোনা দু-একটি উৎসব ছাড়া পুতুল নাচ প্রদর্শিত হয় না।

সম্প্রতি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের গোপালপুর সূতি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় শিক্ষা পদক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে ক্ষুদে শিশুরা পুতুলের আদলে অসাধারণ নৃত্য প্রদর্শন করে। এতে পৌর শহরের সূতি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী অংশ নেন। শিশুরা পায়ের আঙুলের সঙ্গে হাতে সুতো বেঁধে, মাথায় ঘুমটা দিয়ে ও গায়ে বাঙালিয়ানা পোশাক পরিধান করে গানের তালে তালে নাচ প্রদর্শন করে।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

এই মনোমুগ্ধকর পুতুলের আদলে নাচ উপস্থিত অতিথি ও অভিভাবকদের মুগ্ধ করে এবং তাদের মন জয় করে এই মানব পুতুল নাচ। সেই নাচের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা দেখে সুধীজনরা প্রশংসা করছেন। অনেকেই বলছেন পুতুলের আদলে শিশুদের এই নাচ নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পুতুল নাচের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। নাচের ভিডিওটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাবিনা তার ফেসবুকে শেয়ার করেন।

নৃত্য অংশ নেয়া তোহা, সূচী, হাবিবা, মীম, আরাধ্যা ও জীম বলেন- এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক আগে থেকে প্র্যাক্টিস শুরু করি। আমাদের স্কুলের সাবিনা ম্যাডামের সহযোগিতায় এই পুতুল নাচটি আমরা সুন্দরভাবে পুতুলের আদলে নাচতে পেরেছি। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তুহিন হোসেন, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম, রোকনুজ্জামান, সহকারী ইন্সট্রাক্টর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সূতি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাবিনা আক্তার কলি বলেন- পুতুল নাচটা আমাদের গ্রাম-বাংলার এক প্রাচীন ঐতিহ্য। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন এই পুতুল নাচ আমাদের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিল। আমরা যখন মেলায় যেতাম তখন এই পুতুল নাচ না দেখলে আমাদের মেলা দেখা সার্থক হতো না। এই ঐতিহ্যগুলো এখন আর গ্রাম-বাংলায় নেই। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে এই পুতুল নাচ উপস্থাপন করি।

তিনি আরও বলেন- পুতুল নাচটি বাংলার বুকে আবার ফিরিয়ে দিতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মফিজুর রহমান জিন্নাহ স্যারের নির্দেশে আমাদের বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পুতুল নাচের উদ্যোগ নেই। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সহযোগিতা করে। এতে আমরা ফিরে পাই আমাদের হারিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতি সম্পদকে। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো যে পিছিয়ে নেই তা এই শিশু শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করে দিল।

Header Ad
Header Ad

নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ, নাম ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’

নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে নতুন ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন ছাত্র সংগঠনটির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।

এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন ছাত্র সংগঠন আনার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০১৯-২০২০ সেশনের আবু বাকের মজুমদার, সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরসহ আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা একদল শিক্ষার্থী।

তারা ‘স্টুডেন্ট ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নতুন সংগঠন গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

বৈষম্যবিরোধীদের আন্দোলনের এই অংশ যখন নতুন ছাত্র সংগঠনের ঘোষণা দিলেন, তখন আরেকটি অংশ জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে মিলে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছেন।

আগামী শুক্রবার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে নতুন এ দলের আত্মপ্রকাশ ঘটবে বলে গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের সামনের সারিতে থাকা অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

নতুন দলটিতে যোগ দিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেওয়া নাহিদ ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

চেষ্টা সত্ত্বেও কিছু ব্যাংক রক্ষা করা সম্ভব নয়: গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, দেশের ব্যাংক খাতের সমস্যা সবারই জানা। সুশাসন ফিরিয়ে আনতে এবং ব্যাংকগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে জোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু ব্যাংককে বাঁচানো সম্ভব হবে না। কারণ, কিছু ব্যাংক থেকে একটি মাত্র পরিবার বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেছে, যার ৮৭ শতাংশই ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স’ সম্মেলনের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন আয়োজনে সহযোগিতা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ বিষয়ক টাস্কফোর্স।

গভর্নর বলেন, যেসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সুশাসনের অভাব ছিল, সেগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ইউসিবি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে, তাদের ওপর আরোপিত কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। আকার বিবেচনায় এ দুটি ব্যাংকের উত্তরণ মানে দেশের সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর ৬০ শতাংশ সমস্যার সমাধান।

তিনি আরও বলেন, সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর সম্পদের গুণগত মান যাচাই করা হচ্ছে। আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি এ সংক্রান্ত রিপোর্ট পাওয়া যাবে, তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় আমানত বীমা স্কিমের আওতায় প্রতিটি আমানতকারীর জন্য অর্থ ফেরতের পরিমাণ ১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নতুন আইনের মাধ্যমে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে বলে জানান গভর্নর। এর ফলে ঋণখেলাপি কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ক্ষমতা পাবে ব্যাংকগুলো, যা ঋণগ্রহীতাদের সতর্ক করবে। এছাড়া অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা বাড়ানো এবং রিট কমানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন গভর্নর। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপ্রয়োজনীয় কিছু বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং আপাতত ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে না।

ব্যাংক খাতের সংকট নিয়ে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী নেতারাও মতামত দেন। ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “গভর্নর যখনই বলেন যে কিছু ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে বা দুর্বল অবস্থায় আছে, তখনই আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এটি বন্ধ করতে হবে।”

ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি’র চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, “যেকোনো নীতি প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত, কিন্তু সেটি হচ্ছে না।”

অধ্যাপক আবু আহমেদ দাবি করেন, “আইএমএফের শর্ত মেনে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হয়েছে। ৪.৭০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের জন্য এত কঠোর শর্ত মানার প্রয়োজন ছিল না, কারণ এটি মাত্র দুই মাসের রেমিট্যান্সের সমান।”

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, ব্যাংক খাতের সংকট ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের পর থেকেই শুরু হয়েছে। তার মতে, সরকার ঘোষিত খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশ বলা হলেও বাস্তবে তা ৫০ শতাংশেরও বেশি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছয় গুণ বেড়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আইন শিথিল করার সংস্কৃতি থেকে বের হতে না পারলে ব্যাংক খাতের সংকট আরও বাড়বে।”

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন বলেন, “অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি, তবে এ খাতে অতিরিক্ত ব্যয় ও দুর্নীতির কারণে সামাজিক সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ হচ্ছে না।”

ব্যাংক খাতের সংকট কাটিয়ে তুলতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, কাঠামোগত সংস্কার এবং রাজনৈতিক প্রভাব কমানো ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে ব্যাংক খাতে আরও বড় বিপর্যয় আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

টাঙ্গাইলে ক্ষুদে শিশুদের পুতুল নাচে মুগ্ধ দর্শক
নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ, নাম ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’
চেষ্টা সত্ত্বেও কিছু ব্যাংক রক্ষা করা সম্ভব নয়: গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর
বিরামপুরে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার
কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
রমজানে ঢাবির ক্যান্টিনে খাবারের মান বৃদ্ধিতে মনিটরিং সেল গঠনে ছাত্রদলের আবেদন
৬০ কোটি টাকায় মার্কিন নাগরিকত্ব বিক্রি করবেন ট্রাম্প
পরকীয়ার জেরে ভাঙতে যাচ্ছে ৩৭ বছরের সংসার, যা বললেন গোবিন্দ
ছাত্রদের নতুন দল থেকে সরে দাঁড়ালেন নাগরিক কমিটির জুনায়েদ ও রিফাত
‘শুধু রণাঙ্গণের যোদ্ধারাই হবেন মুক্তিযোদ্ধা, বাকিরা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির আয়োজনে আন্তর্জাতিক ছাত্র সম্মেলন
৬ মাসে যেভাবে অর্থনীতি কামব্যাক করেছে সেটা মিরাকল: প্রেস সচিব
নতুন তথ্য উপদেষ্টা হচ্ছেন মাহফুজ আলম
টাঙ্গাইলে শিক্ষা সফরের ৪ বাসে ডাকাতি, বাঁধা দেওয়ায় শিক্ষকসহ দুইজনকে মারধর
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ চুক্তিতে সম্মত ইউক্রেন  
ছোট অপরাধ বাড়লেও কমেছে বড় অপরাধ: আসিফ মাহমুদ  
নায়িকার মামলায় জাজের আজিজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা  
মধুর ক্যান্টিনে বিকেলে যাত্রা শুরু করবে সমন্বয়কদের নতুন ছাত্রসংগঠন
১৩ মার্চ ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব  
গোল উৎসবে নিষ্প্রাণ বার্সার রক্ষণ, সেমিফাইনালের প্রথম লেগ ড্র