নাটোরের এমপি শিমুলকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
বিদেশে অর্থ পাচার করে বাড়ি কেনার অভিযোগে নাটোরের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে প্রকাশিত অর্থ পাচারকারীদেরকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) অর্থ পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করে সংগঠনটি।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, মুক্তিযোদ্ধা নির্মল চন্দ্র দাস, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মাহিমসহ নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাটোরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বিদেশে অর্থ পাচারের অপরাধে এমপি শিমুলকে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ ও আওয়ামী লীগ থেকে অপসারণ করতে হবে।'
রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, 'বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধ ব্যতীত দেশের সার্বিক উন্নয়ন অসম্ভব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করার পূর্বশর্ত হচ্ছে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু কতিপয় দুর্নীতিবাজদের কারণে দেশের সার্বিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকা আবারও খামচে ধরতে চায় একাত্তরে পরাজিত সেই পুরনো শকুনের দোসররা। আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। কোন স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সদস্যদেরকে আওয়ামী লীগে দেখতে চাই না। প্রধানমন্ত্রীর নিকট আহ্বান রাজাকার পুত্র শিমুলকে দ্রুত জাতীয় সংসদ ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করুন। এদের কারণে প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।'
জহির উদ্দিন জালাল বলেন, 'নাটোরের এমপি রাজাকার পুত্র শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধে স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি কেনার অভিযোগ ওঠেছে। কিন্তু দুদক এখনো পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নাটোর শহরে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, জায়গা-জমি কেনার অভিযোগ ওঠেছে। তার বর্তমান স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নির্বাচনী হলফনামার সাথে অসামঞ্জস্য। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে তার সম্পত্তির পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে যা দেশের প্রচলিত আইন পরিপন্থী। অবিলম্বে তার সম্পত্তির হিসাব জাতির সামনে প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। এমপি শিমুলের স্ত্রী পেশায় একজন গৃহিণী। কানাডার বেগমপাড়ায় তার স্ত্রী কিভাবে বাড়ি কিনলেন? জনগণের টাকা লুট করে বিদেশে অর্থ পাচার করা কোন সাংসদের দায়িত্ব হতে পারে না। তাকে অবশ্যই দুদকের নিকট জবাবদিহি করতে হবে। আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দেইনি। প্রয়োজনে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমরা আবার যুদ্ধে নামব।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ বলেন, 'মহান মুক্তিযুদ্ধে এমপি শিমুলের পিতার বিতর্কিত ভূমিকা ছিল বলে নাটোরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নামক বইয়ে উল্লেখ আছে। নাটোরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নামক সেই বইয়ের লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকারকেও বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে। এছাড়াও নাটোরে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও যুবলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী তার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। অবিলম্বে সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগগুলো তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।'
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, 'সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে প্রকাশিত ৬৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশিত হয়েছে যারা বিদেশে অর্থ পাচারের সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। কিন্তু এখনোও পর্যন্ত এদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। প্রতিবছর জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে যা দেশের অর্থনীতির জন্য অনেক বড় অশনিসংকেত। এমপি শিমুলসহ বিদেশে অর্থ পাচারকারীরা কি রাষ্ট্র ও দুদকের চেয়ে শক্তিশালী? এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে রাষ্ট্র ও দুদককে প্রমাণ করতে হবে তারা সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী। জনগণ দুদকের দিকে তাকিয়ে আছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের নিকট দাবি, কানাডার বেগমপাড়াসহ অন্যান্য দেশে যারা অবৈধভাবে অর্থ পাচার করেছে তাদের নামের তালিকা জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে।'
এসএম/এএস