শৃঙ্খলাই সৈনিকের মূলভিত্তি: বিজিবি মহাপরিচালক
নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শাফিনুল ইসলাম বলেছেন, 'প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে শৃঙ্খলাই সৈনিকের মূলভিত্তি'।
এসময় বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, চোরাচালান রোধে নবীন সৈনিকদের পেশাগত দক্ষতা অর্জনসহ ব্যক্তিগতভাবে সুদৃঢ়, সুশৃঙ্খল, নির্লোভ ও নির্ভীক সর্বোপরি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি)-এর বীর উত্তম মুজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে ৯৭তম নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে একথা বলেন তিনি।
৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৮৮৫ জন জওয়ান সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা করেন যাদের মধ্যে ৪৯ জন নারী সৈনিকও রয়েছেন।
সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে বিজিবি মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে বলেন, কিংবদন্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী সুনাম ও সাফল্যের পথ পরিক্রমায় সকলের প্রচেষ্টায় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মর্যাদা লাভ করেছে। বিজিবি আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার রোধসহ সব ধরনের সীমান্ত অপরাধ দমনসহ দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সঙ্গে পালন করে চলেছে।
তিনি আরও বলেন, এ ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান, যেকোনো দুর্যোগময় মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়ানো এবং বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিজিবি বিশ্বস্ততা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছে।
নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে শৃঙ্খলাই সৈনিকের মূলভিত্তি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠা, আনুগত্য ও নির্ভরযোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা ও কর্মতৎপরতা, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে।
তিনি বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের চারটি মূলনীতি-‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’-এ উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবির উপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালন করে।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মহিয়সী নারীদের অংশগ্রহণ, অবদান ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, বাহিনীর সুনাম, খ্যাতি বৃদ্ধিতে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাবে এ বাহিনী।
সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে ডিজি বলেন, বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সক্ষম।
বিজিবির মহাপরিচালককে সশস্ত্র সালাম দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করা হয়।
বিজিবি জানায়, ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। বিজিটিসিঅ্যান্ডসিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া মোট ৬৭০ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬২১ জন পুরুষ ও ৪৯ জন নারী রিক্রুট প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও একই দিনে ও একই সময়ে চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ন (৬বিজিবি)-এর প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের ২১৫ নবীন সৈনিকের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে।
দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে বর্ণিত দুইটি ভেন্যুতে সর্বমোট ৮৮৫ জন নবীন সৈনিক আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা করল। এবারের প্রশিক্ষণে বিজিটিসিঅ্যান্ডসিতে ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকার করে বক্ষ নম্বর-৪৪২ রিক্রুট (জিডি) নুরুল হুদা মামুন এবং চুয়াডাঙ্গায় ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকার করে বক্ষ নম্বর-১১৮৩ রিক্রুট (জিডি) মো. জুবায়ের আলী।
এসময় বিজিবির ৯৭তম ব্যাচ রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ট্রেনিং কমান্ডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মশিউর রহমান, ট্রেনিং টিমের ডেপুটি কমান্ডার কর্নেল শাহীদুর রহমান ওসমানী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম, মেজর মোহাম্মদ মাহবুব আলম, প্যারেড কমান্ডার মেজর মো. সেলিমুদ্দোজা, মেজর মো. সাইদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন প্রমুখ। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, সেনাবাহিনী ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কেএম/টিটি